এবার নিজের জালেই বল পাঠালেন ধনকড়, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

এবার বেশ বুঝেশুনেই ‘কৃতিত্বের সঙ্গে’ নিজের জালে বল পাঠালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়৷

মুখ্যমন্ত্রীকে ‘আক্রমণ’ করা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে রাজ্যপালের ৷ মানুষ অভ্যাসের দাস৷ সেই অভ্যাসের বশেই রাজ্যপালের এবারের লক্ষ্য, বঙ্গ-বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিনকয়েক আগে বলেছেন,‘‘যব তক দাওয়াই নেহি, তব তক ঢিলাই নেহি। দো গজ কি দূরি, মাস্ক হ্যায় জরুরি।’’

ওদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফের এইমসে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যেই ফের হাসপাতালে৷ গত ২ আগস্ট তাঁর করোনা ধরা পড়ে৷
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মঙ্গলবারের করোনা বুলেটিন বলছে, দেশে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯,৩০,২৩৬ জন৷ প্রায় ৫০ লক্ষ৷ মৃত্যু হয়েছে ৮০,৭৭৬ জনের৷ গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১০৫৪ জনের৷ পরিসংখ্যান বলছে, গত ৭ আগস্ট ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লক্ষ ছাড়ায়৷ ২৩ আগস্ট এই সংখ্যা পৌঁছোয় ৩০ লক্ষে৷ ৫ সেপ্টেম্বর ৪০ লক্ষে।আর মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯,৩০,২৩৬ জন।
এই হিসেবই বলছে, এ দেশে করোনা এখনও জাঁকিয়ে বসে আছে৷

আর এসবের মধ্যেই রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বাণী, “সব ঠিক আছে। Corona is over ! বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এখনও লকডাউন করে চলেছেন রাজনৈতিক স্বার্থে, বিজেপিকে আটকাতে”৷

নাম না করে দিলীপবাবুর এই মন্তব্যেরই তীব্র প্রতিবাদ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়৷ এক টুইটবার্তায় রাজ্যপাল বলেছেন,”এমন পরিস্থিতিতে যাঁরা বিশ্বাস করেন করোনা চলে গিয়েছে, তাঁদের আরও একবার ভাবা প্রয়োজন, যে কি করা উচিত তাঁদের।”

যথারীতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করে টুইটে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় বলেছেন, “রাজ্যের করোনা গ্রাফ নিয়ে তিনি যথেষ্টই উদ্বিগ্ন”৷

রাজ্যপালের এদিনের টুইট এই কারনেই উল্লেখযোগ্য যে, টুইটে এক অন্য এক বার্তা-ই প্রকাশ পেয়েছে।
দিলীপবাবু বলেছেন, করোনা চলে গিয়েছে, আর ধনকড়ের মতে, করোনা চলে গিয়েছে, সেকথা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং উল্টে রাজ্যবাসীকে প্রয়োজনীয় কোভিড বিধি মেনে চলারই পরামর্শ দিয়েছেন।

রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, বোঝাই যাচ্ছে, সরাসরি দিলীপ ঘোষকেই রাজ্যপাল নিশানা করেছেন৷ কারণ, আজ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোথাও বলেননি ভাইরাসের প্রকোপ কমে গিয়েছে৷ এমন কথা তাঁকে বলতে শোনা যায়নি। বরং সোমবার বলেছেন, “করোনার ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ আসতে পারে৷ তবে রাজ্য তৈরি”৷
দিনকয়েক আগে ছাই দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এক সভায় দাবি করেন, “করোনা বিদায় নিয়েছে। শুধুমাত্র বিজেপি নেতা, কর্মীদের রুখতেই বাংলায় লকডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন, বিজেপিকে এভাবে আটকে রাখা যাবে না”৷
বিজেপি রাজ্য সভাপতির এ ধরনের মন্তব্য বিতর্ক তৈরি করে৷ কীভাবে একজন সাংসদ এমন ভুল তথ্য দিতে পারেন, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে৷
এবার সেই একই প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যপালের টুইট। নতুন বিতর্কও তৈরি করেছেন ধনকড়৷ আসলে প্রয়োজনের বাইরে গিয়ে ভুলভাল কথা বলার বিষয়ে রাজ্যপাল এবং দিলীপ ঘোষ, দু’জনই সিদ্ধহস্ত৷ তবুও দিলীপবাবুকেই রাজ্যপাল এভাবে নিশানা করবেন, বঙ্গ-বিজেপির কেউই তা আঁচ করতে পারেননি৷

রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে জোর চর্চা, তাহলে কি প্রাক্তণ বিজেপি নেতা জগদীপ ধনকড়ও বঙ্গ-বিজেপির অন্দরে তৈরি হওয়া ‘দিলীপ ঘোষ বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর ‘মেন্টর’- এর ভূমিকা পালন করতে নামলেন ? বড়সড় কোনও পরিকল্পনার প্রথম ধাপ কি এটাই ?

এখন দেখার ধনকড় যেভাবে তাঁকে ধুইয়ে দিয়েছন, তার জবাবে দিলীপ ঘোষ কী বলেন

আরও পড়ুন-ক্রমশ সরছে বিজেপি’র ঘোমটা, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Previous articleলাদাখে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল পাতছে চিনা সেনা!
Next articleসাংসদ-অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে কটূক্তি, ধৃত ট্যাক্সিচালক