Wednesday, December 17, 2025

১০০ ছুঁলো পেঁয়াজের দাম

Date:

Share post:

প্রতিবেশী দেশ ভারতের রফতানি বন্ধ করার পরই অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। একদিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হয়ে গিয়েছে।

কোনও ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত সোমবার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এরপর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই দেশের বাজারে পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ল। গত বছরও সেপ্টেম্বর মাসে কোনো ঘোষণা ছাড়াই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে।
এবারও সেই সেপ্টেম্বরেই ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিল। এতে পেঁয়াজের দাম আবারও অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে- এমন আশঙ্কায় কেউ কেউ বাড়তি পেঁয়াজ কেনা শুরু করে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন- বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদার মুক্তির মেয়াদ বাড়ল ৬ মাস

মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। অথচ গতকাল দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, হঠাৎ করেই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। গতকাল পাইকারিতে যে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা ছিল তা আজ ৭৫ থেকে ৮০ টাকা হয়ে গেছে।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়া বৌ-বাজারের ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, গতকাল দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করেছি ৬০ টাকা। আজ পাইকারিতে দাম ৮০ টাকা। যে কারণে ৯০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি যা তাতে মনে হচ্ছে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে। কারণ গতকাল ভারত রফতানি বন্ধ করার পর আজ পেঁয়াজ কেনার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। এ অবস্থা চললে বাজারে পেঁয়াজের এক ধরনের কৃত্রিম সংকট দেখা দিতে পারে। এতে আবারও গত বছরের মতো অবস্থা হবে কিনা বলা মুশকিল।

একই বাজারে ১০০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করা মো. সোহেল বলেন, আজ ১০০ টাকা কেজি কিনতে পারছেন। আগামীকাল দেখবেন ১৫০ টাকা কেজি কিনে খেতে হবে। আজ বিকেলেই দাম আরও বেড়ে যায় কিনা দেখেন। ইতিমধ্যে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের ক্রেতা বেড়ে গিয়েছে।

এদিকে রামপুরায় ভ্যানে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা বিক্রি করছিলেন জয়নাল মিয়া। দুই মিনিটের মধ্যে তার সব পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে যায়। এ বিষয়ে জয়নাল বলেন, আমার পেঁয়াজ গতকাল কেনা। কিছুটা লাভে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, একজন এসে পেঁয়াজের দাম জানতে চাইলেন। আমি ৮০ টাকা বলতেই, তিনি পাঁচ কেজি পেঁয়াজ দিতে বলেন। এরপর কয়েকজন এসে সব পেঁয়াজ কিনে নিলেন। এমন হুড়াহুড়ি করে পেঁয়াজ আমি আগে কখনও বিক্রি করিনি। কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেললাম কিনা জানি না।

এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে রামপুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ১০০ টাকা। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। একই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে খিলগাঁও তালতলা বাজারে।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. হিরু বলেন, গতকাল ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় আজ পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকার ওপরে। বাড়তি দামে কেনার কারণে আমাদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।

পেঁয়াজের দামের বিষয়ে শ্যামবাজারের আজমেরী ভান্ডারের সোহেলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

কী ঘটেছিল গত বছর?

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত রফতানি বন্ধ করলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বেড়ে পেঁয়াজের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর পেঁয়াজের দাম কমাতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালায় সরকার। মায়ানমার, মিশর থেকে আমদানি করা হয় পেঁয়াজ। এতে কিছুটা দাম কমে। তারপরও পেঁয়াজের ঝাঁজ ছিল বেশ চড়া। একশ টাকার নীচে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

ফলে বাধ্য হয়ে বাড়তি দাম পেঁয়াজ কিনে খেতে হয় ক্রেতাদের। কম দামে নিম্ন আয়ের মানুষকে পেঁয়াজ দিতে ট্রাকে বিক্রি শুরু করে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। টিসিবির পেঁয়াজ কেনা নিয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

এর মধ্যে গত বছরের নভেম্বর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে নতুন দেশি পেঁয়াজ। যার প্রভাবে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলতে থাকে। ডিসেম্বরেই নতুন পেঁয়াজের কেজি একশ টাকার নিচে নামে যায়। এরপর চলতি বছরের মার্চের শুরুতে রফতানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় ভারত। যার প্রভাবে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে কেজি ৪০ টাকায় নামে।

কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে মার্চের শেষ দিকে পেঁয়াজের দাম আবার কিছুটা বাড়ে। দাম বাড়ায় বাড়তি পেঁয়াজ কেনা শুরু করেন ক্রেতরা। এতে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকায় ওঠে। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নামে ভোক্তা অধিদফতর ও ব়্যাফ। পেঁয়াজের বাজারে চলে একের পর এক অভিযান।

এর মধ্যেই বাজারে বাড়তে থাকে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ। সঙ্গে আসতে থাকে ভারতের পেঁয়াজ। এতে আবারও দফায় দফায় দাম কমে পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় নেমে আসে। তবে ঈদের আগে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকায় উঠে। গত মাসেও আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে ছিল। আর দেশি পেঁয়াজ ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে।

আড়ত ও পাইকারি বাজারে অভিযান : পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর পাইকারি বাজার ও আড়তে বিশেষ অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মোবাইল টিম। মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, পুরান ঢাকার শ্যামবাজারসহ পেঁয়াজের আড়ত ও পাইকারি বাজারে অভিযান করা হচ্ছে।

অভিযান প্রসঙ্গে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মন্ডল বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও অধিদফতরের মহাপরিচালকের পরিকল্পনায় আজ রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে অভিযান করা হচ্ছে। অধিদফতরের চারটি টিমসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তিনটি মনিটরিং টিম এই অভিযান পরিচালনা করছে। তিনি জানান, কিছু অসৎ ব্যবসায়ী আছে, তারা সবসময় সুযোগ পেলেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। এই সুযোগ আর দেয়া যাবে না। পেঁয়াজের বড় পাইকারি আড়ত শ্যামবাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। কোনো ব্যবসায়ী যদি অনৈতিকভাবে দাম বাড়িয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান : কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়া বাংলাদেশে ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। এই সুযোগে কোনো সিন্ডিকেট যেন পেঁয়াজের দাম না বাড়িয়ে দেয় সেজন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সাইফুল হক বলেন, যখন বলা হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বন্ধুত্বের চরম শিখরে এবং ‘রক্তের সম্পর্কে বাঁধা’ তখন বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করা ভারতের অমানবিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। কোনও সৎ ও বন্ধুপ্রতীম প্রতিবেশী হঠাৎ করে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে না। আসন্ন দুর্গাপূজা সামনে রেখে বাংলাদেশ যখন ভারতে ইলিশ রফতানির সুযোগ করে দিয়েছে, তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত বন্ধুত্বের নিদর্শন নয়।

তিনি বলেন, পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করা বাংলাদেশের ওপর ভারতের চাপ সৃষ্টি করার কোনো কৌশল কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার। গত বছরও ভারত বাংলাদেশে আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বড় কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল। এবারও কোনো আভাস-ইঙ্গিত ছাড়া তারা একই কাজ করল, যা সহজে মেনে নেয়া যায় না।

বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের আমদানিকারকদের পেঁয়াজ ভর্তি অনেক ট্রাক-লরি সীমান্তের ওপারে আটকা আছে। এখানকার আমদানিকারকদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী আরও পেঁয়াজ বাংলাদেশে ঢোকার কথা। তিনি চুক্তিকৃত পেঁয়াজ রফতানিতে বাধা না দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যে পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে তাতে আগামী পেঁয়াজ মরশুমের আগে পর্যন্ত বড় কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। হিসাব করে খরচ করলে বিশাল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করারও প্রয়োজন হবে না।

আরও পড়ুন- বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদার মুক্তির মেয়াদ বাড়ল ৬ মাস

spot_img

Related articles

NCRT-র সিলেবাসে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ইতিহাস রাখার দাবি ঋতব্রতের

এনসিইআরটি-র পাঠ্যবইয়ে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের (Bengali Freedom Fighters) ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত...

অস্কার নমিনেশনে শর্টলিস্টেড ‘হোমবাউন্ড’! উচ্ছ্বসিত করণ শুভেচ্ছা জানালেন টিমকে

অ্যাকাডেমি পুরস্কার জেতার স্বপ্ন দেখছে ভারতীয় বিনোদন জগত (Indian Entertainment Industry)। মঙ্গলবার ৯৮তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা আন্তর্জাতিক ফিচার...

সুপ্রিম নির্দেশে সরলো আর জি কর ধর্ষণ-খুন মামলা: শুনানি এবার কলকাতা হাই কোর্টে

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে (R G Kar Medical College And Hospital) চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ-খুনের মামলার এবার নতুন মোড়।...

টাকার দামে পতন অব্যাহত! আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি ঘিরে ধোঁয়াশা বাড়ছে

ভারতীয় টাকার দামে (Indian Rupee Rate) আবারও বড় পতন দেখা গেল। বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ডলার প্রতি টাকার...