ডিজিটাল ইন্ডিয়া তৈরির দিকে ঝুঁকছে কেন্দ্রের সরকার। অথচ অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যেতে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে ছাত্রীর বাবাকে। হিমাচল প্রদেশের কৃষকের এই কাজে যেমন একদিকে প্রশংসা ভরে যাচ্ছে। তেমনই কেন্দ্রের ডিজিটাল ইন্ডিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে নিন্দার ঝড়ও উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ফেসবুক পেজ ‘হিউম্যানস অফ বম্বে’ ওই কৃষকের কাহিনী তুলে ধরেছে। মহামারি আবহে বন্ধ স্কুল কলেজ। রোজগারও বন্ধ। এর মধ্যেই নির্দেশ আসে, স্কুলের ক্লাস চলবে অনলাইনে। তার জন্য প্রয়োজন স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ। দরিদ্র পরিবারের মাসিক আয় ৫ হাজার। কীভাবে অনলাইন ক্লাস করবে সন্তান! মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে কৃষক বাবার। শেষ পর্যন্ত গরু বিক্রি করে স্মার্টফোন কেনেন তিনি।

স্পষ্টতই, এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে দিয়েছে এদেশের সিংহভাগ মানুষ অনলাইন ক্লাসের সুবিধে নিতে কার্যত অপারগ। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যাই বলুক না কেন, সত্যি হলো অনলাইনে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরিকাঠামো নেই। ওই কৃষক বলেন, ” আমার রোজগার খুবই সামান্য। মাসে ৫ হাজার টাকা রোজগার হতো কোনওরকমে। কোনও কোনও মাসে তারও কম। এই পরিস্থিতিতে ২ সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করেছি। নিজের লেখাপড়া না হলেও, ৭ এবং ১০ বছরের সন্তানদের পড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভাইরাস সংক্রমণের জন্য স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল।”

স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। লেখাপড়ার জন্য প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে স্মার্টফোন। বন্ধুবান্ধব ও পরিচিতের কাছে হাত পেতে টাকা ধার করেন বাবা। স্মার্টফোন কিনে শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। কিন্তু ফের সমস্যা দেখা দেয়। যাদের থেকে টাকা ধার করেছিলেন কয়েক সপ্তাহ পরেই তাঁরা টাকা ফেরত চান। লকডাউনে বন্ধ কৃষিকাজ। ওই গরুর দুধটুকু বিক্রি করেই চলছিল সংসার। টাকা মেটানোর জন্য ফোন বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু ফোন বিক্রি করে দিলে মেয়ের লেখাপড়া হবে না। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে, দ্বিধাবোধ করেননি বাবা। টাকা মেটানোর জন্য এবং ফোনটা বাঁচানোর জন্য নিজের একমাত্র গরুটাও বেচে দেন ওই কৃষক।

মার্চ মাস থেকে দেশজুড়ে জারি হয়েছে লকডাউন। এই চিত্র শুধুমাত্র হিমাচল প্রদেশের পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে লুকিয়ে আছে এই ধরনের কাহিনী।একজন বাবার এই লড়াই সামনে আসার পর প্রশংসার ঝড় বইছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই কৃষকের সন্তানদের অনেকেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাহায্য করতে চেয়েছেন। অন্যদিকে কেউ কেউ আবার বলছেন, কেন্দ্রের উচিত এইসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। পড়ুয়ারা যাতে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করুক কেন্দ্রীয় সরকার।

আরও পড়ুন-বাংলায় টুইট করে মহালয়ার শুভেচ্ছা, ভোটের আগে বার্তা অমিত শাহের
