রোগী সঙ্কট! ১২ টি হাসপাতালে বন্ধ হচ্ছে করোনা চিকিৎসা

খায়রুল আলম (ঢাকা) : করোনা আক্রান্ত রোগীর অভাবে বাংলাদেশের কয়েকটি বড় হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার। করোনা আক্রান্ত হলে রোগীদের যেমন হাসপাতালে যাওয়ার আগ্রহ কম থাকে তেমনি এসব হাসপাতাল চালাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে, লাগছে জনবল-যন্ত্রপাতি। এই কারণে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

জানা গিয়েছে, ঢাকাসহ সারাদেশে এমন ১২টি হাসপাতাল চিহ্নিত করে সেগুলো দ্রুত বন্ধে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে প্রস্তাব পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরইমধ্যে একটি হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসা বন্ধ করা হয়েছে। এই সপ্তাহে আরও তিনটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

গত ২৭ অগাস্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের কাছে স্বাস্থ্য অধিদফতর একটি চিঠি পাঠায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা। এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে কোভিড আক্রান্ত রোগী ভর্তির প্রবণতা ক্রমশ কমছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় কিছু হাসপাতাল রেখে বাকিগুলোর কার্যক্রম দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন।

কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার সুপারিশ করা হাসপাতালগুলির মধ্যে ঢাকার পাঁচটি, চট্টগ্রামের ৬টি এবং সিলেটের একটি হাসপাতাল রয়েছে। ঢাকার হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল, বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতাল। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটের বিআইটিআইটি, হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল, চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল, ভাটিয়ারি ফিল্ড হাসপাতাল, চট্টগ্রাম করোনা আইসোলেশন সেন্টার। সিলেটের এমএ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এর মধ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। দেশে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এ বছরের এপ্রিল মাসে বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত কয়েকটি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চুক্তি অনুযায়ী এসব হাসপাতাল কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসা দেবে। খরচ বহন করবে সরকার। তবে শুরু থেকেই বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যার তুলনায় রোগীর উপস্থিতি ছিল অনেক কম।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিরেক্টর জেনারেল অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম জানান, “এসব হাসপাতালে রোগী না থাকায় যন্ত্রপাতি, সম্পদ ও জনবল অলস পড়ে থাকছে।”

বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতালের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “দুই হাজারের বেশি শয্যার ওই হাসপাতালে রোগী নেই বললেই চলে। একদিন সেখানে ৩ জন রোগী ভর্তি ছিল। সেখানে ১৫০ জন চিকিৎসক, যন্ত্রপাতির খরচ, জল-বিদ্যুৎ-গ্যাস মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বিল হচ্ছে।”

তিনি বলেন, এ ধরনের হাসপাতালগুলি বন্ধের জন্য প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন তারা।

“এসব হাসপাতালে জনবল ও যন্ত্রপাতি অলস পড়ে থাকছে। এজন্য যন্ত্রপাতি ও লোকবল পুনর্বণ্টন করছি। আমরা পুরো স্থাপনা উঠাচ্ছি না।”

সরকারি যেসব হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার হচ্ছে, সেখানেও পাশাপাশি সাধারণ রোগীদের ভর্তির জন্য বলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিরেক্টর জেনারেল।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তাদের পরামর্শ কী হবে, তার উপর নির্ভর করে সরকারি হাসপাতালগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
“কিছু হাসপাতাল রাখতেই হবে। কারণ কখন বিপদ হবে তা তো আমরা জানি না। এজন্য সরকারি হাসপাতালগুলো রেখে দেওয়া হবে।”

বিষয়টি জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তাব পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার লালকুঠি হাসপাতাল, ঢাকা মহানগর হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা পুরোপুরি এবং বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতালের কার্যক্রম আংশিক বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, কিছু রোগী থাকায় বাকিগুলো বন্ধ করতে কিছুটা সময় লাগবে।“সব হাসপাতালেই অল্পবিস্তর রোগী আছে। তাদেরকে অন্যান্য হাসপাতালে পাঠাতে হবে। সেজন্য আমরা রাখছি।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একেবারে সব হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে না। আবারও সংক্রমণ আসতে পারে এজন্য সতর্ক মন্ত্রণালয়। “হাসপাতালগুলির কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করা যাবে না। আবার যদি এটার সংক্রমণ শুরু হয়, তাহলে নতুন করে হাসপাতাল প্রস্তুত করতে সময় লাগবে। এজন্য সাবধানতা হিসেবে কয়েকটি হাসপাতাল আমরা রাখব।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যেসব সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তার পাশাপাশি ননকোভিড-১৯ রোগী ভর্তি করার নির্দেশনা এরই মধ্যে দেওয়া হয়েছে। “কোভিড-১৯ চিকিৎসা দেওয়া সরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগী কম আসলে ধীরে ধীরে তাতে অন্য রোগী ভর্তি করাতে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগী না আসলে আমরা অন্যান্য রোগী ভর্তি করাতে বলে দিচ্ছি।”

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে দেখা গিয়েছে, ১৬ সেপ্টেম্বর সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালের ১৪ হাজার ২৭৫টি সাধারণ শয্যার ৩ হাজার ১১০টিতে করোনাভাইরাসের রোগী ভর্তি ছিল। খালি ছিল ১১ হাজার ১৬৫টি শয্যা। ৫৪৭টি আইসিইউ শয্যার ৩০১টিতে রোগী ভর্তির বিপরীতে খালি ছিল ২৪৬টি।

দেখা গিয়েছে, ঢাকার ২১টি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৬ হাজার ১০৭টি শয্যার ১ হাজার ৮৯৪টিতে রোগী ছিল। শয্যা খালি পড়ে ছিল ৪ হাজার ২১৩টি। ৩০৭টি আ্ইসিইউ শয্যার ১৯৫টিতে রোগী ভর্তি ছিল, খালি ছিল ১১২টি শয্যা।

চট্টগ্রামের ৯টি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের ৭৮২টি শয্যার ৬১২টিই খালি। রোগী ভর্তি হয়েছে ১৭০টি শয্যায়। ৩৯টি আইসিইউ শয্যার ১৮টিতে রোগী ভর্তির বিপরীতে খালি থেকেছে ২১টি শয্যা।

১৬ সেপ্টেম্বরের হিসাবে দেখা গিয়েছে, ঢাকা মহানগর হাসপাতালের ৬৬টি সাধারণ শয্যার ১১টি, লালকুঠি হাসপাতালের ১২১ শয্যার ১টি এবং বসুন্ধরা কোভিড হাসপাতালের ২০১৩টি শয্যার মধ্যে ৩০টিতে রোগী ভর্তি ছিল।

এসব হাসপাতালে রোগী না থাকলেও ডাক্তার, নার্স এবং সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিদের পিছনে বিশেষ ভাতা, আবাসন এবং খাবার ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে সরকারের কোটি কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে।

আরও পড়ুন-বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের সুনাম, ১৬০টি দেশে হচ্ছে রফতানি

Previous articleবউকে করোনার ধোঁকা দিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে মস্তি! যুবককে ধরে আনল পুলিশ
Next articleমহালয়ার এক মাস পেরিয়ে কার্তিকে দুর্গাপুজো, কেন ‘মলিন’ আশ্বিন?