বিদ্রোহী” রাহুল সিনহা আদৌ কতটা এগোবেন?

বিজেপির জাতীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন রাহুল সিনহা। তিনি অন্যতম সম্পাদক ছিলেন। এবার সত্তর জনের কমিটিতে তিনি নেই। বাংলা থেকে যে তিনজন আছেন, সেই মুকুল রায়, অনুপম হাজরা, রাজু বিস্তা- তিনজনেই নতুন বিজেপি। আদি বিজেপির একজনকেও ঠাঁই দেয়নি দিল্লি।
এরপরই এক ভিডিও বার্তায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে রাহুল সিনহা বলেছেন,” চল্লিশ বছর বিজেপি করার এই প্রতিদান। শুরু থেকে বিজেপি করার পর তৃণমূলের নেতাদের আনতে আমাকে বাদ দেওয়া হল। আমি কী করব, তা দশ বারো দিনের মধ্যে জানাবো।”

আরও পড়ুন- বিতর্কিত কৃষি বিলের প্রতিবাদে NDA ত্যাগ শিরোমণি অকালি দলের

এর পরেই জল্পনা বাড়ে কী করবেন রাহুল?
রাহুল বিজেপির পুরনো নেতাদের মধ্যে অন্যতম। এটা ঘটনা যে বহুকাল ধরে তিনি বিজেপি করছেন। সেই তপন শিকদারদের যুগ থেকে যুবক রাহুল প্রথম সারিতে ছিলেন। বিজেপিকে বাংলার মাটিতে যাঁরা চিরকাল ধরে রেখেছেন, তার মধ্যে রাহুল অন্যতম। কিন্তু তাঁর বিরোধীশিবিরের মতে তিনি বারবার ভোটে হেরেছেন। নিজে প্রার্থী হিসেবে বা রাজ্য সভাপতি হিসেবে সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ। তা সত্ত্বেও তাঁকে কেন্দ্রীয় সম্পাদক করা হয়েছিল। মূলত রাজনাথ সিং, বেঙ্কাইয়া নাইডুদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো। এবার তৃণমূল থেকে আসা নেতাদের জায়গা করে দিতে তাঁকে বাদ দেওয়া হল।

আরও পড়ুন- পুজোর আগেই কি চলবে রেল? রিষড়া স্টেশনে শুরু মার্কিংয়ের কাজ

জল্পনা চলছে, রাহুলের বিদ্রোহ কতটা এগোবে? তিনি কি তৃণমূল কংগ্রেসে যাবেন? নাকি বিকল্প কিছু ভাববেন? দশ বারোদিন পরে তিনি কোন্ পথে যাবেন? রাহুল সেই অর্থে জননেতা না হলেও এটা ঘটনা যে রাহুল সিনহা বিজেপির অন্যতম মুখ।

এখনও পর্যন্ত পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আগামী দুচারদিন জল্পনার কেন্দ্রে থাকলেও রাহুল বিজেপি ছাড়বেন না। তিনি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাময়িক বেদনায়। কিন্তু দল ছাড়ার সাহস দেখিয়ে নতুন ভাবনাচিন্তার মত কর্মীসমর্থন তাঁর সঙ্গে নেই। বরং এই অন্তর্বর্তী সময়ে রাহুলের অভিমান ভাঙতে বিজেপি নেতারা তাঁর সঙ্গে কথা বলবেন। তাঁকে দলের মধ্যেই বিকল্প কোনো কাজ দেওয়া হবে। এরপর দেখা যাবে নতুনদের পাশে বসেই হাসিমুখে ছবি উঠছে তাঁর। তবে ভিতরে ফাটলটা থেকে যাবে। অর্থাৎ বাদ পড়ার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাহুল সিনহার যে ভিডিও বিস্ফোরণটি দেখা যাচ্ছে, তা যতটা বিজেপি নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণী গর্জনের, ততটা বর্ষণের নয়। তাছাড়া রাহুল বিভিন্ন ভোটে এতবার হেরেছেন যে দলে তাঁর জোর কমেছে। এই অবস্থায় আগামী বিধানসভা ভোটে বিজেপির একটি প্রার্থী হওয়াই তাঁর জন্যে যথেষ্ট। তাছাড়া রাহুলের সঙ্গে যে দুতিনজন নেতা থাকেন, সেই রীতেশ তেওয়ারিরাও চাইবেন না এই সময় রাহুল দল ছাড়ুন। আপাতত বাদ পড়ার যন্ত্রণা হজম করে ভোটের টিকিটই তাঁদের অগ্রাধিকার হবে। এহেন অবস্থায় রাহুল বিদ্রোহের জল আদৌ গড়াতে পারবেন না। দেখা যাবে বিজেপি নেতারা তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। রাহুলকে দিল্লি ডাকা হচ্ছে। বা কৈলাসরা তাঁর কাছে ছুটছেন। তারপর রাহুল বিবৃতিতে বলবেন তিনি বিজেপিতেই থাকবেন।

আরও পড়ুন- দেশের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান সম্মানে নাম ছ’জন বাঙালির, ‘‌ফেলুদা’‌ আবিষ্কারক পেলেন অ্যাওয়ার্ড

তবে এটা ঠিক যে এবারের বিজেপির জাতীয় কমিটিতে যেভাবে বাংলার আদি বিজেপি নেতাদের মুছে ফেলা হয়েছে, তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। যাঁরা এতকাল বাংলায় বিজেপিকে ধরে রাখলেন, তাঁদের একজনকেও সর্বভারতীয় কমিটিতে রাখার প্রয়োজন মনে করেনি দিল্লি। বরং যারা এতদিন বিজেপিকে গালমন্দ করেছেন, সেই তৃণমূলের নেতাদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে শুধু দিলীপ ঘোষের শিবির নয়, বাংলার পুরনো বিজেপি ও আরএসএস কর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ। অনেকেই অপমানিত বোধ করছেন। এঁদের মধ্যে, একসময়ে দলের কাজ আর দলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে যে পদ পেতে হত; এখন বাইরে থেকে এসে সেসব দখল হয়ে যাচ্ছে। কৈলাস বিজয়বর্গীয়রাই এই মডেলে দল চালাচ্ছেন বলে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। ফলে অবিলম্বে দিল্লিকে ড্যামেজ কন্ট্রোলে একাধিক পদক্ষেপ নিতে হবে বলে খবর। বাংলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কৈলাস, অরবিন্দ মেনন, শিবপ্রকাশ।

রাহুল সিনহার বিদ্রোহী ভিডিওবার্তা প্রথম দিন খবরের গুরুত্বে নজর কাড়লেও এর আদৌ কোনো ধারাবাহিকতা থাকবে না বলে নতুন পদ পাওয়া শিবির মনে করছে। কারণ পারফরম্যান্সে রাহুল ব্যাকফুটে আছেন। তাছাড়া চিরকাল বিজেপি ঘরানায় থাকা রাহুলের পক্ষে দল ছেড়ে যাওয়াও এখন সম্ভব নয় বলে তাঁদের অঙ্ক। কারণ রাহুলের নিজস্ব অনুগামীর সংখ্যা নগণ্য। এই সময়ে তাঁরাও বিজেপি ছাড়তে চাইবেন না। রাহুলের পক্ষে ঝুঁকি নেওয়া কঠিন। ফলে এই বিদ্রোহের জল বেশিদূর গড়াবে না।

Previous articleব্রেকফাস্ট নিউজ
Next articleপ্রয়াত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিং