Friday, November 7, 2025

বিরুদ্ধে নয়, প্রশাসনের পাশেই দাঁড়ালো কোর্ট, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

কণাদ দাশগুপ্ত

প্রশাসন-বিরোধী নয়, পুজো নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে নিশ্চিতভাবেই শাপে বর হয়েছে রাজ্য সরকারের৷

রাজ্য সরকার জানে, সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে, তা সামাল দেওয়ার পরিকাঠামোর অভাব আছে৷ ওনাম উৎসবের জেরে কেরল তছনছ করে দিচ্ছে করোনা-অসুর৷ সেই ছবি বাংলার চালচিত্রে ফুটে উঠলে সব আঙুল সঙ্গত কারনেই উঠতো প্রশাসনের দিকেই, যেমন আজ কাঠগড়ায় উঠেছে পিনারাই বিজয়ন সরকার৷
এসব জানা সত্ত্বেও কিছু করার ছিলো না প্রশাসনের৷ ইচ্ছা থাকলেও পুজো নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করার অবস্থানে প্রশাসন ছিলো না৷ ঠিক সেই সময় আশীর্বাদের মতো এসেছে হাইকোর্টের পুজো-নির্দেশ, যে আদেশ হয়তো রক্ষা করেছে সরকারকে৷ তাই রাজ্যের বিরুদ্ধে নয়, আদালতের রায় আসলে রাজ্যের পক্ষেই গিয়েছে৷

করোনা-আবহে যাতে পুজোর ক’ দিনে জনসুনামি না হয়, সেজন্য চেষ্টাও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেছিলেন, তৃতীয়ার দিন থেকে ভাগে ভাগে প্রতিমা দর্শন করুন মানুষ৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রস্তাব মেনে, আজ, সোমবার থেকেই রাজপথে পর্যাপ্ত পুলিশি বন্দোবস্তও করা হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকিয়েই প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা কতখানি সফল করা সম্ভব, তার অগ্নিপরীক্ষাতে সোমবারই নেমেছে পুলিশ৷ ঠিক সেই সময়ে আদালতের এই রায় প্রশাসন এবং পুলিশের হাতকেই শক্ত করলো সন্দেহ নেই৷

আসলে এটা ভোটের বছর৷ হিন্দুত্বকে সামনে রেখেই যখন প্রধান বিরোধী দল ভোটের পসরা সাজিয়েছে, তখন দুর্গাপুজো নিয়ে একটু বেশি ঝুঁকিই নিতে হয়েছে শাসকদের৷ সন্দেহ নেই, এক্ষেত্রে ঝুঁকিটা প্রায় জুয়া খেলার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে৷ অনেকটা পেনাল্টি কিকের মতো৷ গোল দিলে বাহবা কম, মিস করলে মুখ দেখানোই দায়৷ রাজনীতির অঙ্ক এমনই হয়৷ ভোটের বছরে পুজোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করলে, বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে পুজোপ্রেমী মানুষের মধ্যে৷ এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন EVM পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে মরিয়া চেষ্টা করতোই বিরোধীরা, বিশেষত বিজেপি৷ ফলে সংক্রমণের কথা মাথায় থাকলেও, কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথ ছিলো সংকীর্ণ ৷ হয়তো বা বিকল্প কোনও পথ খুঁজছিলো প্রশাসন৷ সেই পথটাই তো দেখালো আদালত ৷

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের করোনা-রিপোর্ট ভয়ঙ্কর সংক্রমণের ছবি তুলে ধরা সত্ত্বেও, রাজ্যের ছোট-বড় সব কমিটিই নিজেদের মতো করে পুজো সফল করতে নেমেছে৷ সব ধরনের মিডিয়ায় সংক্রমণের থেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে পুজোর ছবি-খবর৷ আশ্চর্য হলেও এটা দেখতে হয়েছে, এই সংকটজনক পরিস্থিতিতেও বেশ কিছু মেগা-পুজো গর্বের সঙ্গে তাদের ‘থিম’ ঘোষণা করছে৷ এই মরিয়া চেষ্টার মূল উদ্দেশ্য, জনমানসে প্রতিমা দেখতে আসার একটা ইচ্ছা তৈরি করা৷
এই চেষ্টা কিছুটা ফলপ্রসূ হয়েছে৷ উদ্বোধন হয়ে যাওয়া মণ্ডপগুলিতে গত ২-৩ ধরে আতঙ্কজনক ভিড় হয়েছে৷ ভিড় করে কত মানুষ ঠাকুর দর্শন করবেন, তা আন্দাজ করার সুযোগ পুজো কমিটি বা প্রশাসনের নেই৷ সবটাই নির্ভর করে সাধারণ মানুষের উপরই৷ রবিবার লক্ষ্য করা গিয়েছে, ভয়ঙ্কর এই সংক্রমণ মাথায় নিয়েই মানুষ ঠাকুর দেখতে পথে নেমেছে, মণ্ডপে ঢুকেছে৷ এনাদের বদ্ধমূল ধারনা হয়েছে, করোনা ভাইরাস তাদের স্পর্শ করবে না৷ আর এই ভাবনায় চালিত হয়েই বিশাল এই দর্শনার্থী বাহিনী রবিবার কলকাতায় ভাইরাস ছড়ানোর মহান দায়িত্ব নিয়ে সপরিবারে পথে নেমেছিলেন৷ এই জনস্রোতকে পুজো কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বা পুলিশ ঠেকাবে কীভাবে ? ঠাকুর দেখতে আসা জনতাকে পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে বাড়ি পাঠাতে পারবে না৷ মণ্ডপে ঢুকতে বাধা দিতে পারবে না৷ তাহলে মণ্ডপে জনস্রোত নিয়ন্ত্রণে আসবে কোন ম্যাজিকে ?

এখানেই নিরুপায় সরকার৷ সরকার বাঙালির মহোৎসবে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে না, প্রতিমা দেখতে আসা জনতাকে ফেরত পাঠাতে পারবে না৷ অথচ সরকার উদ্বিগ্ন, সংক্রমণ ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে, মৃত্যুমিছিলও দীর্ঘায়িত হচ্ছে৷

ঠিক এই সময়েই রাজ্য সরকারের কাছে কার্যত হাঁফ ছেড়ে বাঁচানোর ডালি নিয়ে এসেছে হাইকোর্টের রায়৷ এই রায় রাজ্য সরকারকে মহাবিপদের হাত থেকে রক্ষা করেছে৷ সামাজিক দূরত্ববিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, মাস্ক থুতনিতে ঝুলিয়ে ঠাকুর দেখার জনস্রোত রাজ্যকে মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতোই৷ অসহায়ভাবে সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া প্রশাসনের বিকল্প কিছু ছিলো না৷
হাইকোর্টের রায় কার্যকর করে পুরোপুরি না হলেও মহাবিপদ হয়তো কিছুটা ঠেকানো যাবে৷

তবে এখন দেখার, কোনও ‘অদৃশ্য’ চাপে রাজ্য সরকার আবার এই রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে না পায়ে রাখে৷ তেমন হলে বলতেই হবে এই সরকার সত্যিই ‘হারাকিরি’ পছন্দ করে৷

আরও পড়ুন-অবিমৃশ্যকারিতা! কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Related articles

শিলিগুড়িতে উৎসবের মেজাজেই সোনার মেয়েকে বরণ, নিজের অনুভূতির কথা জানালেন আপ্লুত রিচা

বিগত কয়েক বছর ধরেই পুরুষ এবং মহিলা ক্রিকেটের মধ্যে ব্যবধান একটু একটু কমছে। আইসিসি বিশ্বকাপ জিতে ভারতীয় ক্রিকেটেই...

পথশ্রী প্রকল্প বেনিয়ম বরদাস্ত নয়: স্পষ্ট নির্দেশ মুখ্যসচিবের

পথশ্রী প্রকল্পের অধীনে গ্রামীণ রাস্তাগুলির মান বজায় রাখতে জেলা প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিলেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। শুক্রবার...

ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুয়েরেন্স স্ট্যান্ডার্ড প্রতিযোগিতায় রাজ্যে সেরা বসিরহাট পুরসভা

ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুয়েরেন্স স্ট্যান্ডার্ড (National Quality Assurance Standard) প্রতিযোগিতায় ১২৯টি পুরসভার মধ্যে প্রথম স্থান ছিনিয়ে নিল বসিরহাট পুরসভা...

‘হিন্দি বলয়ের লোক’! বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়ে অস্বস্তি বাড়ালেন অভিজিৎ

বাংলা বিরোধী বিজেপির বিরুদ্ধে প্রবল বাঙালি বিদ্বেষ ঠিক কীভাবে বাংলার মানুষের ক্ষতি করেছে তা বারবার তুলে ধরেছে বাংলার...
Exit mobile version