সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সম্পাদিত কপি সম্প্রচার: দায় চাপলো বেতারের ঘাড়ে

খায়রুল আলম, ঢাকা

জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে গত রবিবার জাতির পিতাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে সাধারণ প্রস্তাব গ্রহণের আগে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর সংসদে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অডিও শোনানো হয়। স্টিল ছবি যুক্ত করে সংসদে প্রচারিত এই ভাষণটি সম্পাদনা করে প্রচার হয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ উঠেছে। সংসদে প্রচারিত ভাষণে বঙ্গবন্ধু ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে যে কথা বলেছিলেন, তা বাদ পড়েছে। জাতির পিতার ভাষণের লিখিত কপি ও অডিও শুনে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে। অবশ্য বিষয়টি সংসদের নজরেও এসেছে। এ বিষয়ে সংসদ সচিবালয় থেকে বলা হয়েছে, এই ভাষণটি তারা বাংলাদেশ বেতার থেকে সংগ্রহ করে সম্প্রচার করেছেন। এডিট বা কোনও কিছু হয়ে থাকলে সেখানেই হয়েছে। আর কেবল ধর্ম নিরপেক্ষতার অংশ নয়, সংসদের প্রসিডিংসের আরও কিছু বিষয় ভাষণের অডিওতে নেই।

রবিবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরপরই জাতির পিতার ৪ নভেম্বর ১৯৭২ সালের ভাষণের অডিও শোনানো হয়। ৪৬ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ভাষণে প্রণীত সংবিধান নিয়ে নানা বিষয় ব্যাখ্যা করেন বঙ্গবন্ধু। এতে তিনি বাহাত্তরের রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি— জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন। কিন্তু রবিবার সংসদে প্রচারিত অডিওতে মূলনীতির প্রথম তিনটি বিষয় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য তুলে ধরা হলেও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তিনি যেসব কথা বলেছিলেন, সেই অংশ ছিল না।

সংসদে সম্প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অডিও শুনে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রয়াত সাংবাদিক বেবী মওদুদ সম্পাদিত‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৭২-৭৫)’ বইটি পড়েন। সেখানে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে সমাজতন্ত্র নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের শেষের একটি অংশ এবং ধর্ম নিরপেক্ষাতা নিয়ে তাঁর বক্তব্যের বেশিরভাগ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি সমাজতন্ত্র নিয়েও তার বক্তব্যের ছোট একটি অংশ বাদ পড়েছে।

সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অডিও বাজানোর পর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গবেষক মাহবুবুর রহমান জালাল তাঁর ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এডিট করে প্রচার করার কথা তুলে ধরেন। সুইৎজারল্যান্ড প্রবাসী ব্লগার অমি রহমান পিয়ালও এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। ভাষণে কোন অংশটি বাদ পড়েছে সেটাও তুলে ধরা হয়। ভাষণের ধর্ম নিরপেক্ষতার অংশটি বাদ পড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, ‘‘আমরা ওই অডিও ভার্সনটি বাংলাদেশ বেতার থেকে নিয়ে এসেছি। আমরা এটাকে এডিট করিনি। আমরা তাদের থেকে যে বক্তৃতা পেয়েছি হুবহু সেটাই শুনিয়েছি। সংসদে এটার কোনও কিছুতেই হাত দেওয়া হয়নি।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় এটার জন্য সংসদকে দায়ী করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে স্পিকার বলেন, ‘‘সংসদ এখানে কিছুই করেনি। ভাষণটি যেভাবে পেয়েছি, সেভাবেই শুনিয়েছি। বাংলাদেশ বেতারে কী হয়েছে সেটা আমরা তো বলতে পারি না। এটা কোথায় পড়েছিল? কে কেটেছে? কে এডিট করেছে? তবে আমাদের সংসদের ছাপানো প্রসিডিংসে যেটা আছে হার্ড কপি। সেটার মধ্যে যে কথাগুলো আছে, তার অনেকটাই অডিও ভার্সনে নেই, এটা ঠিক। শুধু ধর্ম নিরপেক্ষতা নয়, ওর পরেও আরও অনেক কথা আছে যেটা লিখিত কপিতে আছে, কিন্তু প্রচারিত ভাষণে নেই।’’

আরও পড়ুন- ডিডি-র প্রোগ্রামগুলির প্রথম দশে ‘ফির সুবহা হোগি’, কৃতিত্ব পরিচালক-প্রযোজকের

Previous articleডিডি-র প্রোগ্রামগুলির প্রথম দশে ‘ফির সুবহা হোগি’, কৃতিত্ব পরিচালক-প্রযোজকের
Next articleসুজাপুরে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন, আর্থিক সাহায্য প্রদান ফিরহাদের