আয়ুশ চিকিৎসকরাও করতে পারবেন অস্ত্রোপচার, সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

আয়ুশ চিকিৎসকরাও করতে পারবেন অস্ত্রোপচার, সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

এবার থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরাও করতে পারবেন অস্ত্রোপচার। সুশ্রুতমুনিকে শল্য চিকিৎসার জনক বলে মনে করা হয়। কিন্তু আইনি জটিলতায় শল্য চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা ‘জেনারেল সার্জারি’-র সুযোগ বা অধিকার পাচ্ছিলেন না। অর্শ, ভগন্দর, ফিসচুলা বা হাইড্রোসিলের মতো কয়েকটি অস্ত্রোপচারে আটকে আবদ্ধ ছিল তাঁদের কাজ। এবার কেন্দ্রীয় সরকার আইন সংশোধন করে আয়ুর্বেদ সার্জনদের কাজের পরিধি বাড়ালো। এখন জেনারেল সার্জারির আওতাভুক্ত প্রায় সব অস্ত্রোপচারের টেবিলে ওঁরা ছুরি-ফরসেপ ধরতে পারবেন। তা সে অ্যাপেনডিক্স বাদ দেওয়া হোক বা দাঁত তোলা, কিংবা টনসিল বা নাকের প্লাস্টিক সার্জারি। এমনকী, কোলেস্টোমি ও হার্নিয়া অপারেশনও করতে পারবেন আয়ুর্বেদে এমএস সার্জনরা।

প্রসঙ্গত, দশ বছর আগেও জেবি রায় কলেজের প্রসূতি বিভাগের লেবার রুমে সিজার হত। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধ, আইনি জটিলতার জেরে সেই সুযোগ কমে যায়। এখন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের স্যালাইন দেওয়ারও অনুমতি নেই। অথচ যে কোনও অস্ত্রোপচারের আগে-পরে রোগীকে ‘আইভি ফ্লুইড’ দিতেই হয়। এছাড়াও টিটেনাস-সহ বেশ কিছু ইঞ্জেকশনও দিতে হয়, যা ক্ষত শুকানোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক। এগুলি প্রয়োগের স্বাধীনতা না পেলে একুশ শতকে সার্জারি করা মুশকিল। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের দাবি, এখন তাঁরা অনেক জটিল অপারেশন করার দক্ষতা রাখেন। রাইনোপ্লাস্টি-র মতো জটিল অস্ত্রোপচারের উল্লেখ রয়েছে সুশ্রুত সংহিতায়। টিপু সুলতানের সঙ্গে যুদ্ধে জখম ব্রিটিশ সৈনিকের কাটা নাক জোড়া লাগিয়েছিলেন এক মাদ্রাজি বৈদ্য। প্রায় ২৬০০ বছর আগে মহর্ষি সুশ্রুত মাছের পটকায় জল ভরে ছাত্রদের অস্ত্রোপচার শিখিয়েছিলেন। সুশ্রুত সংহিতায় ১০১ রকম সার্জারি যন্ত্র ও ২০ রকম শস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। জে বি রায়ের সার্জারির অধ্যাপক ডা. অর্ণব রায় জানিয়েছেন, “সুযোগ পেলে এখানে সপ্তাহে তিরিশটি অপারেশনও করা সম্ভব। আয়ুর্বেদ হাসপাতালে অ্যানাস্থেশিস্টও রয়েছেন। এখন কিছু উন্নত যন্ত্রপাতি চাই। আর চাই বিমার সুবিধা। যাতে আয়ুর্বেদ নিয়ে পড়াশোনা করা শল্য চিকিৎসকরা আয়ুর্বেদ হাসপাতালের বাইরেও অস্ত্রোপচার করতে পারেন।”

এই অবস্থায় আশা জাগাল সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ান মেডিসিন-এর পরমর্শ মেনে তৈরি কেন্দ্রীয় আইন। এই নয়া আইনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ‘অল ইন্ডিয়া সার্জিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর বঙ্গীয় শাখার ভাবি প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মাখনলাল সাহা। তাঁর কথায়, “এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক প্রবণতা। হাতেগোনা কয়েকটি অ্যালোপ্যাথি ওষুধ প্রেসক্রাইব করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে আয়ুশ চিকিৎসকদের। তাই নিয়ে জেনারেল সার্জারি অসম্ভব। পাঠ্যক্রমে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।” যদিও অ্যালোপ্যাথদের একাংশ কেন্দ্রের এই আইনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মত, মডার্ন মেডিসিনে এমএস করা সার্জনরা গ্রামে যেতে চান না। রাতবিরেতে ব্যথা উঠলে কোয়াকরাই অ্যাপেনডিসাইটিস অপারেশন করেন। সেখানে তিন বছর এমএস করার পর আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা যদি অস্ত্রোপচার করেন ক্ষতি কী।”

আরও পড়ুন-করোনার হানা মহাত্মা গান্ধীর পরিবারে, মৃত্যু গান্ধীজির প্রপৌত্রর

Previous articleরক্তদানে ক্লাবকে সাহায্য, পাশে রোটারি
Next articleআড়ালে, নিশ্চুপে গুটি সাজাচ্ছেন গুরুং!