Monday, May 5, 2025

এ বছর কোভিড ১৯ অতিমারির আবহে কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী মদনমোহন দেবের রাসমেলা না হলেও মন্দিরে রাসচক্র ঘুরিয়ে আজ, রবিবার শুরু হচ্ছে রাস উৎসব। কোচবিহার রাজ আমলের ইতিহাসের সাক্ষী এই মদনমোহন দেবের রাস উৎসব। ইতিহাস গবেষক দের মতে, এই মেলার সূচনা হয় জেলার ভেটাগুড়িতে ১৮১২ সালে মহারাজা হরেন্দ্র নারায়ণের আমলে ( ১৭৮৩-১৮৩৯ )। ভেটাগুড়িতে নতুন রাজপ্রাসাদের এর গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে রাসমেলার আসর বসেছিল। অনুমান করা হয় ১৮৯০ সালে শহরের বৈরাগী দিঘির উত্তর পাড়ে রাজাদের কুল দেবতা মদনমোহন দেবের মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। তখন থেকেই এখানে এই মেলার আয়োজন শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯১৭ মেলা স্থানান্তরিত হয় প্যারেড গ্রাউন্ড এ (বর্তমান রাসমেলা ময়দান)। জানা যায়, ১৯২৩ সালে শহরে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার জন্য সেবার মেলা বন্ধ রাখা হয়েছিল।

নিয়ম অনুযায়ী, আগামীকাল অর্থাৎ ২৯ নভেম্বর রাতে মন্দির সংলগ্ন রাসচক্র ঘুরিয়ে উৎসবের সূচনা করবেন দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের সভাপতি তথা কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান যার একসময় সূচনা করতেন কোচবিহারের মহারাজা। তারপর দর্শনার্থীরা পুণ্যলাভের আশায় রাসচক্র ঘুরিয়ে থাকেন। কিন্তু এবছর দর্শনার্থীদের করোনা বিধি মেনে রাসচক্র ঘোরাতে হবে।

দেবোত্তর ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, সকল পুণ্যার্থীদের মাস্ক পরার পর ও স্যানিটাইজ করিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করানো হবে। রাসচক্র ঘোরানোর স্থানে শারীরিক দূরত্ব বিধি মেনে চলার জন্য বৃত্তাকার দাগ দেওয়া থাকবে। রাসমেলার বদলে এবছর স্থানীয় এম জে এন স্টেডিয়ামে অল্প কিছু সরকারি স্টল ও খাবারের দোকান বসানোর পরিকল্পনা করেছে জেলা প্রশাসন।

কোচবিহারবাসীর প্রাণের ঠাকুর মদনমোহন এর রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে রাস মেলা সর্বধর্ম সমন্বয়ে এক মিলনের মেলা। ফি বছর ভিন রাজ্য ছাড়াও ওপার বাংলা থেকেও বহু ব্যবসায়ীরা বিভিন্নরকম পসরা নিয়ে উপস্থিত হন এই মেলায়। রাস উৎসব এর রাসচক্র তৈরি করেন শহরের তোর্সা পাড়ের একটি মুসলিম পরিবারের সদস্য আল তাপ মিয়া। তিনি আটত্রিশ বছর ধরে রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আল তাপ জানলেন, রাসচক্র তৈরি শুরু হয় তার ঠাকুরদাদা পান মহম্মদ মিয়ার হাতে। তারপর বংশানুক্রমে তাদের বাড়িতেই এটি তৈরি হয়ে আসছে। লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন থেকে রাসচক্র তৈরির কাজ শুরু হয়, তারপর রাস পূর্ণিমা পর্যন্ত ওই পরিবার নিরামিষ খেয়ে কাটান। রাস পূর্ণিমার দিন সকালে ঠাকুরবাড়িতে সেই চক্র পৌঁছে দিয়ে তিনি দায়িত্ব সম্পন্ন করেন। সর্বধর্ম সমন্বয়ের অন্যতম নিদর্শন এই রাসচক্র। যা অনেকটাই মুসলিমদের তাজিয়ার মত। যার উপর কাগজের কারুকার্য খচিত হিন্দু দেবদেবীর ছবি লাগানো হয়। রাসচক্র এর মাথায় থাকে গম্বুজ, যা জৈন ধর্মের এবং রাসচক্র এর উপরের দিকে কিছুটা অংশে লাল রং করা হয় যা খ্রিস্টান ধর্মের প্রতীক। তার কথায় এবছর পৃথিবীব্যাপী করোনা আবহে মেলা হচ্ছে না ঠিকই। মানুষ বেঁচে থাকলেই মেলা বেঁচে থাকবে । বেঁচে থাকবে উৎসব।

আরও পড়ুন-অল-আউট ঝাঁপাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী! ৯ ডিসেম্বর বনগাঁয় জনসভা মমতার

Related articles

দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রী পর্দার ‘বিনোদিনী’, রুক্মিণীকে শুভেচ্ছা দেবের

বাংলার নাট্য সম্রাজ্ঞীর জীবনকে বড়পর্দায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে দর্শকের প্রশংসা করিয়েছিলেন রুক্মিণী মৈত্র (Rukmini Maitra)। এবার 'বিনোদিনী, একটি নটীর...

চেনা মেজাজে মুখ্যমন্ত্রী, বহরমপুরে আচমকা ঢুকলেন প্রতিমাশিল্পীর বাড়ি

জনসংযোগ জননেত্রীর। বালিগঞ্জ হোক কিংবা বহরমপুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জায়গাতেই মিশে যান মানুষের ভিড়ে। মানুষের ঘরে। হ্যাঁ, ঘরে।...

পিএফ বঞ্চনার প্রতিবাদ! চা-বাগান মালিকদের বিরুদ্ধে বড় লড়াইয়ের ডাক আইএনটিটিইউসির

চা-বাগানের শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) বঞ্চনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শিলিগুড়ি পিএফ অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে অংশ নিলেন...

টুটুকে নিয়ে মিলল না সমাধান, ফের হবে বৈঠক

টুটু বোসের(Tutu Bose) পদত্যাগ গ্রহনের সিদ্ধান্ত ঝুলেই রইল। সোমবারের বৈঠকেও মিলল না সমাধান। পরের সপ্তাহে ফের মোহনবাগানের(Mohunbagan) কার্যকরী...
Exit mobile version