শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠতার অপরাধে আরও দুই নেতাকে শাস্তি দিলো তৃণমূল

অমূল্য মাইতি ও গৌতম রায়

শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের বিরুদ্ধে একে একে ব্যবস্থা নিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস৷

নন্দীগ্রাম-১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মেঘনাথ পাল এবং ভগবানপুর-২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মানব পায়রাকে দলীয় পদ থেকে আগেই সরানো হয়েছিলো৷

এবার তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকার কারনে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায়কে সাসপেন্ড করল দল। তিনিই রাজ্যে প্রথম পুরুলিয়া শহরে ‘দাদার অনুগামী’দের অফিস চালু করেছেন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সরকারপাড়ায়৷

একইসঙ্গে ‌শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতিকেও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ গত শুক্রবার অমূল্যবাবুর সরকারি নিরাপত্তাও প্রত্যাহার করে নিয়েছে প্রশাসন।

পুরুলিয়া তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায়কে শুধু পদ থেকে নয়, দল থেকেই সাসপেন্ড করা হয়েছে৷ পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা ওই জেলার জেলা পরিষদের শিক্ষা- সংস্কৃতি- তথ্য-ক্রীড়া স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ গুরুপদ টুডু ও দলের জেলা মুখপাত্র নবেন্দু মাহালী মঙ্গলবার রাতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। গুরুপদবাবু বলেছেন, “রাজ্য তৃণমূলের নির্দেশ অনুযায়ীই পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায়কে ৬ বছরের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা মানেননি এবং দলবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন।”

পুরুলিয়ার শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ নেতা গৌতম রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনিই গোটা রাজ্যে প্রথম ‘দাদার অনুগামী’ কার্যালয় খুলেছেন পুরুলিয়া শহরে। এবং সংবাদমাধ্যমে দলবিরোধী কথা বলেছেন৷

ওদিকে সাসপেনশনের খবর শোনার পর গৌতমবাবু পাল্টা বলেছেন, “সাসপেনশনের প্রশ্নই নেই, কারন, তিনি নিজেই দুপুরে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ-পত্র রাজ্য তৃণমূলের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ তাঁর স্পষ্ট বার্তা, “দলে আর কাজ করার কোনও পরিবেশ না থাকার কারণেই জেলা সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি”। ‘দাদার অনুগামী’ কার্যালয় চালু করার প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “জেলার নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। দাদার বক্তব্য, মানুষের সঙ্গে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। সে জন্য আলাদা অফিসের খুব দরকার হয়ে পড়েছিল। তা ছাড়া, দলের অফিসে গেলে কেউ কেউ সন্দেহের চোখে দেখছিলেন। তাই আলাদা অফিসের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে”à§· জানা গিয়েছে, জেলায় ‘দাদার অনুগামী‘ হিসাবে পরিচিত গৌতম। তিনিই প্রথম ‘দাদার অনুগামী‘ হিসাবে বিজয়া সম্মিলনী করেন৷ পরে তাঁর জগদ্ধাত্রী পুজোতেও তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দু যান। গৌতম রায় আগাগোড়াই শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ বলে জেলার রাজনৈতিক মহলে পরিচিত।

ওদিকে, সরকারি নিরাপত্তার পর এবার জেলা পরিষদে পদও হারাতে চলেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা শুভেন্দু-অনুগামী অমূল্য মাইতি। গত শুক্রবার তাঁর সরকারি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করে প্রশাসন। শোনা যাচ্ছে, এবার তাঁকে তাঁর পদ থেকেই সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে এ কথাই জানা গিয়েছে৷ ইতিমধ্যেই অমূল্য মাইতিকে জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ পেয়ে গিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিং হাজরা ও সহ সভাধিপতি তথা দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার মেদিনীপুর ছাড়ার আগে এই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। এ কথা স্বীকার করেছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতি এ ব্যাপারে অমূল্য মাইতির কোনও কথা বলতে রাজি হননি৷

দিনকয়েক আগে সবংয়ে গিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। তখন অনুগামীদের দিয়ে তাঁকে এসকর্ট করে নিয়ে আসেন অমূল্য মাইতি। তার পরই রাতে ওই এলাকায় একাধিক ‘‌দাদার অনুগামী’‌র বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এলাকায় চলে বোমাবাজি। এ ঘটনায় তৃণমূল সাংসদ মানস ভুঁইয়ার অনুগামীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ এনেছিলেন এই অমূল্য মাইতি-ই।

মনে করা হচ্ছে, শুভেন্দু– অনুগামীদের কড়া বার্তা দিতেই তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতাদের একের পর এক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ তবে গৌতম রায়কে আরও বড় ‘শাস্তি’ দিয়ে তাঁকে সাসপেণ্ড করা হয়েছে৷ অনুগামীদের বক্তব্য, দাদাও তৃণমূলে আছেন, আমরাও তৃণমূলেই আছি৷ তৃণমূলে থাকা কোনও নেতার সঙ্গে থাকার অর্থ ‘দলবিরোধী’ কোন আইনে হয়, সেটা জানতে চাই৷

আরও পড়ুন- নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে রাজ্য