ফেব্রুয়ারিতে করোনা টিকা পাবেন ২৫ হাজার গণমাধ্যম কর্মী

খায়রুল আলম, ঢাকা

২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার ৫০ লাখ টিকা বেক্সিমকোর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসবে। বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে দুদিন থাকার পর সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকা অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন জেলায় টিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয়ভাবে টিকাদান শুরু হবে।  প্রথম দফায় দেশে আসা ৫০ লাখ করোনার টিকা দেওয়া হবে ৫০ লাখ মানুষকে। তবে ১৮ বছরের নিচে এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে না। বাকিদের চলতি বছরেই টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

যারা আগে টিকা পাবেন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৈরি করা তালিতায় ফেজ-১ এ টিকার আওতায় থাকছেন ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে কোডিভ-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি যুক্ত সরকারি ৪ লাখ ৫২ হাজার ২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী প্রথম মাসেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসেই টিকা পাবেন। একই সঙ্গে কোডিভ-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সব অনুমোদিত বেসরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালের ৬ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী। বীর মুক্তিযোদ্ধা ২ লাখ ১০ হাজার। করোনাকালে সামনের সারি থেকে সেবাদানকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ জনের মধ্যে প্রথম মাসে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩১০ জন এবং দ্বিতীয় মাসে বাকিরা টিকা পাবেন। সামরিক ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ জনের মধ্যে প্রথম মাসে ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৭ জন এবং দ্বিতীয় মাসে সমান সংখ্যক সদস্য টিকা পাবেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কার্যালয়গুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৫০ হাজার। প্রথম মাসে তাদের ২৫ হাজার এবং দ্বিতীয় মাসে বাকিরা টিকা পাবেন। সম্মুখসারিতে থেকে তথ্যসেবা দিচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। তাই দেশের ৫০ হাজার গণমাধ্যমকর্মীর ২৫ হাজার প্রথম মাসে এবং বাকি ২৫ হাজার দ্বিতীয় মাসে টিকা পাবেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন। প্রথম মাসে ৮৯ হাজার ১৪৯ জন এবং দ্বিতীয় মাসে সমান সংখ্যক জনপ্রতিনিধি টিকা পাবেন।

তাছাড়া সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার সম্মুখসারির ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মচারীর মধ্যে অর্ধেক প্রথম মাসে এবং বাকি অর্ধেক দ্বিতীয় মাসে টিকা পাবেন।

ধর্মীয় প্রতিনিধি রয়েছেন ৫ লাখ ৪১ হাজার। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় মাসে ২ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ জন এবং পঞ্চম মাসে সমান সংখ্যক ধর্মীয় প্রতিনিধি টিকা পাবেন।

এছাড়া মরদেহ সৎকারে (দাফন/শবদাহ) নিয়োজিত ব্যক্তি ৭৫ হাজারের মধ্যে প্রথম মাসে ৩৭ হাজার ৫০০ জন এবং দ্বিতীয় মাসে বাকি অর্ধেক টিকা পাবেন।

জরুরি পানি, গ্যাস, পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবহন কর্মচারী রয়েছেন ৪ লাখ। এর মধ্যে প্রথম মাসে ২ লাখ এবং দ্বিতীয় মাসে বাকি অর্ধেক টিকা পাবেন। স্থল, নৌ ও বিমান বন্দর কর্মী ১ লাখ ৫০ হাজারের মধ্যে প্রথম মাসে ৭৫ হাজার এবং দ্বিতীয় মাসে ৭৫ হাজার টিকা পাবেন। প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক ১ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে প্রথম মাসে ৬০ হাজার এবং দ্বিতীয় মাসে সমান সংখ্যক টিকা পাবেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি ৪ লাখ কর্মচারীর মধ্যে প্রথম মাসে ২ লাখ এবং দ্বিতীয় মাসে ২ লাখ কর্মচারী টিকা পাবেন। ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন। দ্বিতীয় মাসে তাদের টিকা দেওয়া হবে। স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠী (যক্ষ্মা, এইডস রোগী, ক্যান্সার রোগী) রয়েছেন ৬ লাখ ২৫ হাজার। তাদেরও প্রথম ধাপে টিকা দেওয়া হবে।

এদিকে ৭৭ থেকে ৭৯ বছরের ১১ লাখ ৩ হাজার ৬৫৩ জন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী ১৩ লাখ ১২ হাজার ৯৭৩ জনের সবাই প্রথম মাসে টিকা পাবেন।

৭৪ থেকে ৭৬ বছরের জনসংখ্যা ৯ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৩। তারা টিকা পাবেন দ্বিতীয় মাসে। ৭০ থেকে ৭৩ বছরের জনসংখ্যা ধরা হয়েছে ২০ লাখ ৬ হাজার ৮৭৯ জন। তাদেরও দ্বিতীয় মাসে টিকা দেওয়া হবে। ৬৭ থেকে ৬৯ বছরের মোট ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জনের মধ্যে পঞ্চম মাসে ২২ লাখ ৪ হাজার ৫০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে।

৬৪ থেকে ৬৬ বছরের মোট ২৪ লাখ ৭৫ হাজার জন পঞ্চম মাসে টিকা পাবেন। জাতীয় দলের খেলোয়াড় (ফুটবল, ক্রিকেট, হকি ইত্যাদি) ২১ হাজার ৮৬৩ জনের মধ্যে প্রথম মাসে ১০ হাজার ৯৩২ জন এবং দ্বিতীয় মাসে বাকিরা টিকা (ভ্যাকসিন) পাবেন।

বাফার, ইমার্জেন্সি ও আউটব্রেক প্রথম মাসে ৭০ হাজার, দ্বিতীয় মাসে ৫০ হাজার এবং পঞ্চম মাসে ৫০ হাজার জন টিকা পাবেন। মোট দেড় কোটি লোকের মধ্যে প্রথম মাসে ৫০ লাখ, দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ এবং পঞ্চম মাসে ৫০ লাখ মানুষ টিকা পাচ্ছেন।

কীভাবে টিকা বিতরণ হবে:

তালিকাভুক্ত জনগোষ্ঠীকে ৮ সপ্তাহের ব্যবধানে (প্রথম ডোজের ৮ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ) টিকা দেওয়া হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের টিকা দেওয়া হবে। কেউ যদি ২ ডোজ টিকা নিতে চান, তবে তাকে অবশ্যই ২ ডোজের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান নির্ধারিত ৮ সপ্তাহ দেশে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে তাকে বৈধ কাগজপত্র (পাসপোর্ট, ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ইত্যাদি) দাখিল করতে হবে। ভ্যাকসিন পরিবহন, সংরক্ষণ ও দেওয়ার সময় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দেশের পুলিশ বাহিনী সাহায্য করবে। ভ্যাকসিন বিষয়ক সরকারি প্রচার-প্রচারণা নিশ্চিত করতে তথ্য মন্ত্রণালয়কে সাবির্ক দায়িত্ব পালন করবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে অনলাইন নিবন্ধন, ভ্যাকসিন কার্ড, সম্মতিপত্র, ভ্যাকসিন সনদ দিতে ‘সুরক্ষা ওয়েবসাইট’ নামে সেবা প্রস্তুত করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের আইসিটি বিভাগ।

আরও পড়ুন- ৮০ বছরের বেশি বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অক্ষমদের জন্য পোস্টাল ব্যালট: সূত্র

Advt

 

Previous articleরাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যসচিব
Next articleকত জনের বাড়ি বিদেশে, জানতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন