দল ঐক্যবদ্ধ, রাজীবের মন্ত্রিত্ব ত্যাগ নিয়ে বিচলিত নন তৃণমূল নেতারা

অবশেষে জল্পনার অবসান। শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary), লক্ষ্মীরতন শুক্লাদের (Laxmi Ratan Sukla) পথ ধরেই এবার রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। সকালেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী (CM) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) কাছে ইস্তফাপত্র পাঠানোর পর রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল (Governor) জগদীপ ধনকড়ের (Jagdeep Dhankar) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন। যদিও বিধায়ক পদ বা দল থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইস্তফা দেননি রাজীব। কিন্তু জলছে দিকে গড়াচ্ছে তাতে স্পষ্ট রাজিবের দল ছাড়া শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।

এরপর খুব স্বভাবিকভাবেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে নতুন করে জর্দা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। রাজীবকে নিজেদের দলে টানতে ইতিমধ্যেই প্রতিক্রিয়া দেওয়া শুরু করেছেন বিজেপি নেতারা। দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে লকেট চট্টোপাধ্যায়, প্রত্যেকেই বিজেপিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

অন্যদিকে, তৃণমূল নেতাদের একাংশ নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় রাজীবের মন্ত্রিত্ব ত্যাগকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁদের মতে, বলে এর কোনও প্রভাব পড়বে না। তৃণমূল ঐক্যবদ্ধ আছে। তবে তাঁরা এটাও জানিয়েছেন, ভোটের আগে রাজ্যের মন্ত্রীদের ইস্তফা দুর্ভাগ্যজনক।

এ নিয়ে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “উনিই বলতে পারবেন, কেন মন্ত্রিত্ব ছাড়লেন। নিশ্চয়ই কোনও অসুবিধা হচ্ছিল। তবে আমি বলব, এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। একদিন তাঁরা ঠিক বুঝবেন যে তাঁদের ভুল হয়েছিল। কোনও কর্মী তো দল ছাড়ছেন না। কর্মীরাই দলের সম্পদ। তৃণমূল একটা মহা সমুদ্রের মতো। সেখান থেকে দু-ঘটি জল চলে গেলে কোনও ক্ষতি হবে না।”

রাজ্যের আরেক মন্ত্রী অরূপ রায়ও রাজীবের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে একেবারেই বিচলিত নন। তাঁর কথায়, “ও দল কতদিন ধরে করছে? আমরা বহু আগে থেকে দল করছি। কেউ কেউ দলে নতুন যোগ দিয়ে, কাজ করার পরই যদি নানারকম বায়না, নালিশ করেন, তাহলে মুশকিল। যা হওয়ার তাই হয়েছে। এতে দলের কোনও ক্ষতি নেই। দল ঐক্যবদ্ধই রয়েছে।”

অন্যদিকে, যে সৌগত রায় কয়েকদিন আগেও বলেছিলেন যে রাজীব দল ছাড়বেন না, তিনিই কার্যত হার স্বীকার করে নিলেন। এদিন রাজীবের পদত্যাগের পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সৌগত রায় বলেন, “ওনার মান ভঞ্জনের চেষ্টা হয়েছিল, মান ভঞ্জিত হয়নি। পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজীবকে বহুবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু উনি বুঝতে চাননি। ফেসবুক লাইভে যেসব বক্তব্য রেখেছেন রাজীব, তা মন্ত্রিসভায় রাখতে পারতেন।”

প্রসঙ্গত, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় “বেসুরো” হতেই তাঁকে বোঝানোর জন্য দফায় দফায় তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় আলোচনায় বসেন। সেই বৈঠক সেরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি বনমন্ত্রী। তবে মন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে বাধা পাচ্ছেন, সেই অভিযোগে বারবারই সরব হতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।
গত শনিবার ফেসবুক লাইভ করে ধৈর্য ধরার কথা বললেও দলের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। সপ্তাহ পেরোনোর আগেই তিনি মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করলেন। এবার হয়তো দলও ছাড়তে পারেন তিনি।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ফেসবুক লাইভ করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাজীব তাঁর অনুগামী, শুভানুধ্যায়ী ও সাধারণ মানুষের মন বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। সেই ফেসবুক লাইভ-এর পর কমেন্ট, বিভিন্ন জায়গা থেকে পাওয়া ফোন কল বিশ্লেষণ করে রাজীবের হয়তো মনে হচ্ছে, আর তৃণমূলে থাকা যায় না। তাই মন্ত্রিত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত।বাকিটা সময় বলবে!

আরও পড়ুন:জাভেদ আখতারের সঙ্গে বিরোধের জের, কঙ্গনাকে সমন মুম্বই পুলিশের

Advt

 

Previous articleজাভেদ আখতারের সঙ্গে বিরোধের জের, কঙ্গনাকে সমন মুম্বই পুলিশের
Next articleনেই বিদ্যুৎ-পানীয় জল, টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ হরিশ্চন্দ্রপুরে