কেন্দ্রের আমন্ত্রিতরা বোঝালেন নেতাজি- স্মরণ নেহাতই ছল, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হলো, নেতাজি সুভাষকে স্মরণ করা নেহাতই ছল ছিলো৷ সরকারি অনুষ্ঠানেই খসে গেলো মুখোশ৷ ‘গাইডেড’ ভক্তরা বোঝালেন সার কথা, ‘কে নেতাজি? রামচন্দ্রই আসল, বাকি সবটাই ঠাণ্ডা মাথায় সাজানো’৷

একদল বাঁদরের হাতে খোলা তরবারি তুলে দিলে যা যা হওয়ার, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে ঠিক সেটাই হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী নিজে যে সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত, সেই অনুষ্ঠানের তাল কেটে দিয়ে ওই রামভক্তরা খোদ মোদিকেই হাস্যকর জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে৷ এই তথাকথিত রামভক্তরা এতটাই অশিক্ষিত যে তাদের ন্যূনতম এই জ্ঞানটাও নেই কখন, কোথায় শ্রীরামচন্দ্রের জয়গান গাইতে হবে৷

নেতাজি সুভাষকে শ্রদ্ধা জানাতে নয়, ঠিক যে কাজ করতে তাদের পাঠানো হয়েছিলো,’গভীর নিষ্ঠার’ সঙ্গে সেই কাজ করে তারা বোঝালেন বাঙালি হৃদয়ে চিরশ্রদ্ধার আসনে থাকা নেতাজি সুভাষচন্দ্রে তাদের এবং তাদের মেন্টরদের আদৌ কোনও আগ্রহ নেই৷ এবং স্পষ্ট করেছে, ভোটের মুখে নির্দিষ্ট অ্যাজেণ্ডা নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শনিবার কলকাতায় এসেছিলেন৷ ধারনা ছিলো, নেতাজির নাম আওড়ে বাংলায় থেকে কিছু পয়েন্ট সংগ্রহ করে দিল্লি ফিরবেন৷ সেই পয়েন্ট ব্যবহৃত হবে ভোটপ্রচারে৷ কিন্তু ফল হলো বিপরীত৷ বাঙালি হৃদয়ে বিশেষ আসনে থাকা নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জন্মজয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানে একদল রামভক্ত ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে বুঝিয়ে দিলেন, ওই ধ্বনি যে দলটির লাইফ-লাইন, সেই দলের কাছে নেতাজির কানাকড়িও মূল্য নেই৷ তাদের কাছে ধর্মই প্রথম এবং শেষ৷ কে নেতাজি, তাতে এদের কিছুই যায় আসে না৷ অথচ প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় এসেছিলেন তাঁর ‘নেতাজি-প্রেম’-কে সামনে রেখে ভোট- বৈতরণী অতিক্রম করার রসদ সংগ্রহের জন্য৷ কিন্তু একদল চরম অশিক্ষিত ভক্ত মোদির সাজানো ছকে জল ঢেলে দিল রামচন্দ্রকে সামনে রেখে৷ বাঙালির একরাশ ঘৃণা সঙ্গে নিয়ে ফিরে গেলেন মোদি৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই বলছেন, ওই অনুষ্ঠানে “জয় শ্রীরাম” ধ্বনি যে উঠবে, তা প্রধানমন্ত্রী জানতেন না, এমন নাও হতে পারে৷ তবে এই ধারনার সঙ্গে একমত হওয়া যাচ্ছে না৷ ভোটের মুখে নেওয়া অনেক বড় স্কিম, রুটিন জয়ধ্বনিতে ভেস্তে যাক, প্রধানমন্ত্রী তা সম্ভবত চাননি৷ বিষয়টি একেবারেই বাঁদর এবং তরবারির৷ তবে ডুগডুগি নিয়ে যারা বাঁদরদের নাচিয়েছে, তারা প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত, হতমান, অপমান করলো কি’না, তা এবার বুঝে নিন নরেন্দ্র মোদি৷

কেন্দ্রের শাসক দলের কিছু কর্মী-সমর্থকের হঠকারিতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি জয়ন্তী পালনের অনুষ্ঠানের তাল যেভাবে কাটলো, তা বিজেপির পক্ষে গেলো কতখানি ? ওই ঘটনার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তৃতা করলেন না ক্ষুব্ধ, বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সরকারি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আমায় এখানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু কাউকে আমন্ত্রণ করে অসম্মান করাটা শোভনীয় নয়। এর প্রতিবাদে আমি এখানে কিছু বলছি না। জয় হিন্দ! জয় বাংলা!’’ মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ না দিলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে পুরো সময়ই মঞ্চে ছিলেন৷ না থাকলেও পারতেন৷ থাকতেই হবে এমন কোনও বাধ্যকতাও ছিলো না৷ অপমানিত বোধ করেও সৌজন্য প্রদর্শন করেছেন৷ তথাকথিত ‘ স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞরা’ ভাবতে বসুন, কার বা কাদের গালে থাপ্পড়টি লাগলো ! কোনওকালেই দুরাত্মাদের ছলের অভাব হয়নি, এটা নিশ্চিত, আজও হবেনা৷

যে যা খুশি সাফাই দিতেই পারেন, কিন্তু বাস্তব এটাই, ভারতবর্ষের ‘পোস্টার-ম্যান’ স্বয়ং যে অনুষ্ঠানে আলো জ্বলে বসেছিলেন, ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির পর সেই অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে নেহাতই দায়সারা৷ ‘শেষ হলে বাঁচি’ গোছের৷ রাজ্যের ভক্তরা এইটুকু ‘উপহার’ তো দিতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদিকে৷ বিজেপি অবশ্য ভাবতে পারে, ‘তবু তো ওনাকে কিছু দিতে পারলাম’৷

কেন্দ্রীয় সরকারের আমন্ত্রণে এদিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে সমবেত হওয়া দর্শক-শ্রোতারা সকলেই নাকি বাঙলার বীর সন্তান সুভাষচন্দ্রকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন৷

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমন্ত্রিত অতিথিদের একাংশ এদিন নেতাজিকে কেমন শ্রদ্ধা জানালেন, বাংলার মানুষ দু’চোখ ভরে তা দেখেছেন৷

নেতাজির প্রতি অশ্রদ্ধা, অভব্যতা যারা দেখালেন, বাংলার মানুষ নিশ্চয়ই তাদের মনে রাখবেন৷

আরও পড়ুন- এবার টিটাগড়ে গুলি করে খুন তৃণমূল কর্মীকে

Advt

Previous articleসর্বভারতীয় সমীক্ষায় প্রথম সারিতে মমতা, একে যোগী
Next articleপাঞ্জাব ম‍্যাচে তিন পয়েন্ট লক্ষ‍্য হাবিয়ার