Friday, December 19, 2025

পায়ে পায়ে ৩০০দিন পার যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিন, স্থায়ীকরণে বুঁদ সিপিএম নেতৃত্ব

Date:

Share post:

পায়ে পায়ে ৩০০দিন পেরলো যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিন । বুধবার ৩০০তম দিনেও প্রায় ৭৫০ জনকে খাবার দেওয়া হল। এবার লক্ষ্য ৩৬৫ দিন। সারা বছর মানুষের পাশে থেকে অন্ন যোগানোর প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছেন বামেরা।
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী থেকে রিকশা চালক, বিদেশে কর্মরত ক্যান্সার গবেষক থেকে গৃহ পরিচারিকা, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সহায়তা সম্বল করেই বিনামূল্যে বা ন্যূনতম দামে টানা ৩০০ দিন ধরে আম জনতাকে দুপুরের খাবার তুলে দিয়েছে ‘যাদবপুরের রান্নাঘর’। যার পোশাকি নাম ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’। যেখানে রোজ দুপুরে ২০ টাকায় লাঞ্চ প্যাকেট পাওয়া গিয়েছে । কোনও দিন মেনুতে ছিল ভাত, দু’রকম তরকারি আবার কোনও দিন ভাত, এক রকম সব্জি ও ডিম।
এই ২০ টাকাতেই দক্ষিণ কলকাতার একটি বড় শপিং মলের নিরাপত্তারক্ষী থেকে নির্মাণ শ্রমিক, ছোটখাটো দোকানের কর্মী থেকে ই কমার্স সংস্থার ডেলিভারি বয়- সবাই খাবার নিয়েছেন এতদিন । গড়ে রোজ ৭০০ লাঞ্চ প্যাকেট দেওয়া হয়েছে আম জনতাকে। নিখরচায় খাবারের প্যাকেট দেওয়া হতদরিদ্র ১০০ জনকে। ৩০০ দিনে দেওয়া হয়েছে সব মিলিয়ে প্রায় ২লক্ষ৫০হাজার প্যাকেট।
এর নেপথ্যে যাদবপুরে সিপিএমের ছাত্র ও যুব ফ্রন্টের প্রায় ৮৫ জন কর্মী। রোস্টার তৈরি করে রোজ সকাল-বিকেল ৩০-৩৫ জন কাজ করেছেন।
কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? কোথা থেকে আসছে টাকা? সিপিআইএম কলকাতা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুদীপ সেনগুপ্তর কথায়, “প্রথমে পার্টির ছেলেরাই নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে ক্যান্টিন শুরু করে। তখন অনেকই বলেছিল, দশ দিনেই বন্ধ হয়ে যাবে। তবে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাহায্যে ৩০০দিন ধরে ক্যান্টিন চলছে।”
‘যৌথ রান্নাঘর’ – এই মডেলেই চলছে যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিন। লকডাউনে বিজয়গড়, বাপুজি নগর, শ্রী কলোনি, নাকতলা অরবিন্দ নগর, এই চার জায়গায় রান্নাঘর চালিয়েছে সিপিআইএম। এমনও হয়েছে, দিনে ১৫০০ মানুষ এই রান্নাঘরের রান্না করা খাবার খেয়েছেন।
সুদীপ সেনগুপ্ত জানালেন, “সাধারণ মানুষের সহযোগিতাতেই ক্যান্টিন চলছে। ফান্ড কালেকশন সহ চেনা-পরিচিত, বন্ধু-বান্ধব, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এবং যাদবপুর, টালিগঞ্জের মানুষ অর্থ দিয়ে সাহায্য করছেন। অনেকেই রয়েছেন, যারা দেশের বাইরে আছেন, রাজ্যের বাইরে আছেন তাঁরা টাকা পাঠাচ্ছেন। তাছাড়াও অনেক মানুষই চাল, ডাল দিয়ে সাহায্য করছেন।” শুধু তাই নয়, করোনার কারণে সামাজিক অনুষ্ঠান পালনে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে, তার মুশকিল আসান করেছে এই ক্যান্টিন। জন্মদিন পালন, বিবাহবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকীর মতো অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে সিপিআইএম-এর শ্রমজীবী ক্যান্টিনে। ঠিক যেমন ৩০০দিনে ছোট্ট মেয়ে উড়ানের জন্মদিন পালন করা হল এই শ্রমজীবী ক্যান্টিনে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এই ক্যান্টিন থেকে শুধুমাত্র শ্রমজীবী মানুষের অন্নসংস্থানই হচ্ছে না, কর্মসংস্থানের পথও খুলেছে। ৫ জন স্থায়ী রাঁধুনী এবং খাবার প্যাকেজিংয়ের জন্য আরও অন্তত ৫ জন রয়েছেন, যাদের রোজের পারিশ্রমিক দেয় পার্টি। সবমিলিয়ে শ্রমজীবী ক্যান্টিন স্থায়ী করার লক্ষ্যে এখন কোমর বাঁধছেন যাদবপুরের সিপিএম নেতৃত্ব ।

spot_img

Related articles

বহরমপুরে টানা তিনদিন আটকে রেখে গণধর্ষণ, পুলিশের তৎপরতায় দ্রুত গ্রেফতার ২

বহরমপুরে এক আদিবাসী মহিলার উপর ভয়াবহ নির্যাতনের (Sextual harassments) অভিযোগ। তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে একটি ফাঁকা...

মার্লিন গ্রুপের উদ্যোগে কলকাতায় জাতীয় বধির ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপের জমকালো উদ্বোধন

শীতের কলকাতায় জমজমাট ক্রিকেট, তবে এই  ক্রিকেট ম্যাচ একটু আলাদা, ২২ গজের নিয়ম এক, কিন্তু যারা খেলতে নেমেছেন...

বাংলায় আবার নিশ্চয়ই মমতার সরকার হবে, বাঙালিরাই দেশের ভবিষ্যৎ বলে দেয়: সংসদ চত্বরে সরব জয়া

তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে দীর্ঘদিন সুসম্পর্ক সমাজবাদী পার্টির (SP) রাজ্যসভার (RajyaSabha) সাংসদ...

মেসি ইভেন্টের আর্থিক তদন্তে ইডি, শতদ্রুর বাড়িতে পুলিশের হানা

মেসি ইভেন্টে বিশৃঙ্খলা কাণ্ডে তদন্তে ইডি(ED )। শতদ্রু দত্তের অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদনের তদন্ত করবে কেন্দ্রীয় সংস্থা।...