বইমেলায় দুই গিল্ড কর্তা, আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বসিত

 

চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় 

দুদিন আগেই বইমেলার সাফল্য নিয়ে তারা সন্দিহান ছিলেন । সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন মহামারি পরিস্থিতিতে বইমেলা আয়োজন করা নিয়ে । অথচ ২৪ঘন্টা পেরোতেই দুই গিল্ড কর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ও সুধাংশুশেখর দে হাজির হলেন হৃষীকেশ পার্কে
বইমেলা 2021-এর দ্বিতীয় দিনে। বইমেলার ব্যবস্থাপনা, আয়োজন, বইপিপাসুদের ভিড়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবকিছু দেখে গিল্ড কর্তারা উচ্ছ্বসিত । শুধুমাত্র তাই নয়, বললেন এত কম সময়ে এত সুষ্ঠ আয়োজন দেখে খুব ভালো লাগছে । এভাবে যে চটজলদি একটি মেলার আয়োজন করা যায় তা দেখে তারা বিস্মিত ।

ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বললেন, এই মেলা দেখে আমি খুব আনন্দিত । আমাদের অসম্ভব আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে । কারণ,এই আয়োজন আমাদের কাছে সত্যি সত্যিই অপ্রত্যাশিত । এত অল্প সময়ের মধ্যে এত সুন্দর এত চমৎকার আয়োজন ভাবা যায় না। সারা পশ্চিমবঙ্গের যেখানেই এই ধরনের ছোট আকারে বইমেলা হয় তাদের সঙ্গে আমরা থাকি, সাহায্য করার চেষ্টা করি। যে কোভিডের কারণে এবার কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা হতে পারল না অথচ এবার কলকাতায় একটি নতুন বই মেলা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ, দেব সাহিত্য কুটিরের প্রকাশক রুপা মজুমদার তাদের উদ্যোগে করে দেখালেন । এতগুলি ছোট ছোট স্টলে প্রকাশকদের এক জায়গায় নিয়ে আসা, এত মানুষের ভিড়, খাবার স্টল , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লিটল ম্যাগাজিন, সব মিলিয়ে কিন্তু একটা স্বয়ংসম্পুর্ণ আয়োজন দেখে আমরা মুগ্ধ ।এর জন্য আয়োজকদের অকুণ্ঠ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কারণ , এই আয়োজন করার জন্য যে সাহস তারা দেখিয়েছেন এই বাহবা তাদের প্রাপ্য।

এই বইমেলায় ক্রেতাদের ২৫% ছাড় দেওয়া প্রসঙ্গে ত্রিদিববাবুর  মন্তব্য  , এটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত এবং এর মাধ্যমে একটা পথ খুলে দেওয়া হলো। এভাবেও যে বইপ্রেমীদের ছাড় দেওয়া সম্ভব তা উদ্যোক্তারা দেখিয়ে দিয়েছেন । এর ভালো মন্দ বিচার ভবিষ্যতে হবে । কিন্তু উদ্যোগটি অবশ্যই অভিনব এবং অভিনন্দনযোগ্য। কেননা একজন পাঠক বইপাড়ায় গিয়ে ২০ শতাংশ ছাড় পান। কেন তিনি এমন একটি বই মেলায় ১০% ছাড়ের জন্য বই কিনতে আসবেন। তাই তাকে ২৫% ছাড়ের ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা । এবং যেভাবে তারা প্রকাশকদের বিনামূল্যে স্টলগুলি তৈরি করে দিয়েছেন স্পনসরশিপের অর্থে এবং সেই স্টল তৈরির খরচ থেকে গ্রাহককে ২৫% ছাড় দিয়ে বই কিনতে আগ্রহী করতে বলেছেন, এই ভাবনাটাও সত্যিই অভিনব এবং অভিনন্দন যোগ্য।

আর এক গিল্ড কর্তা সুধাংশুশেখর দে বলেন, সবকিছু দেখে অত্যন্ত ভালো লাগছে। বইমেলা যত হয় ততই ভালো । এবার কোভিড এর কারণে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা পিছিয়ে আছে। কিন্তু ছোট আকারে হলেও একটি পার্কে এত স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়োজন যেভাবে করে দেখিয়েছেন উদ্যোক্তারা তা দেখে আমরা মুগ্ধ। ছোট আকারের হলেও এই বইমেলা প্রকাশকদের অক্সিজেন জুগিয়েছে। কারণ কোভিড ও আমফানের কারণে দীর্ঘদিন প্রকাশকরা বই বিক্রি করতে পারেন নি। সেখানে এমন আয়োজন আমাদের খুব ভালো লাগছে । খুব সুন্দর হয়েছে এই বইমেলা। প্রকাশকদের স্পন্সরশিপের টাকায় স্টল তৈরি করে দিয়ে বইপ্রেমীদের ২৫% ছাড় দেওয়ার আবেদন উদ্যোক্তারা করেছিলেন। তা প্রকাশকরা রাখায় সত্যিই ভালো লাগছে। এবং যেভাবে বইপ্রেমীরা স্টলে স্টলে ঘুরে বই দেখছেন, বই কিনছেন তা দেখে আমরা মুগ্ধ । কারণ, আমরা একদিকে প্রকাশক এবং বইমেলার উদ্যোক্তা। তাই এমন সুন্দর আয়োজন করার জন্য উদ্যোক্তাদের অনেক অনেক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।

বইমেলার দ্বিতীয় দিনে
হৃষীকেশ পার্কে বইপ্রেমীদের ঢল নেমেছিল ।এসেছিলেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ, অয়ন চক্রবর্তী, সাংবাদিক পূষণ গুপ্ত প্রমুখ। এদিনের আলোচনাচক্রের বিষয় ছিল- শিশুসাহিত্য কি ফুরিয়ে যাচ্ছে? বক্তব্য রাখেন রীতা বসু, সৈকত মুখোপাধ্যায়, জয়দীপ চক্রবর্তী প্রমুখ।
মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, বাঙালি বই ভালোবাসে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রীও বইপ্রেমী।বইমেলা হোক সবসময় চান। তার নিজের লেখা অনেকগুলি বই আছে। কোভিড কে হারিয়ে দিয়েছে এই বইমেলা। আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, এত সুন্দর ভাবে বইমেলার আয়োজন করার জন্য অভিনন্দন ।আমরা বই ভালোবাসি, বোমা নয়। তা এই পরিস্থিতিতেও প্রমাণ হয়ে গেল।
এদিন সঙ্গীতশিল্পী তীর্থ ও অভিজিৎ ঘোষ বাংলা চিরসবুজ গানে সবার মন ভরিয়ে দিয়েছেন।
প্রকাশকরাও খুশি বইপ্রেমীদের ঢল দেখে। এই মেলা চলবে বুধবার ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সবমিলিয়ে বঙ্গীয় প্রকাশক সমন্বয় কমিটির আয়োজনে বইপার্বন রীতিমতো জমজমাট। একদিকে ২৫% ছাড়, এরই পাশাপাশি নতুন বই সংগ্রহ, গান, খাওয়া সব হাতের মুঠোয় পেয়ে যারপরনাই খুশি বইপ্রেমীরাও।

Previous articleবিজেপি-তৃণমূলকে একযোগে কটাক্ষ সেলিমের
Next articleব্রেকফাস্ট নিউজ