নেই ন্যূনতম সুরক্ষা ব্যবস্থা, পাইপের মধ্যে নেমে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু শ্রমিকের

মর্মান্তিক (Tragic) বললেও কম বলা হয়৷ দুই সহকর্মী শ্রমিককে (Labour) বাঁচিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারলেন না ‘ত্রাতা’ শ্রমিকটি৷ নতুন তৈরি হওয়া ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নিকাশি নালার ভিতরে নেমে রং করতে গিয়ে মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। গুরুতর অসুস্থ আরও দুই শ্রমিক। ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার বানতলা চর্মনগরীতে। যাঁরা পরিশোধন প্লান্টের ভিতরে নেমে কাজ করেন, তাঁদের জন্য অক্সিজেন মাস্ক, সেফটি বেল্ট, চোখে ওয়াটারপ্রুফ চশমা, মাথায় হেলমেট-সহ অন্যান্য ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। ওই প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ ওই কাজে তাঁদের ন্যূনতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি ঠিকাদার সংস্থা৷

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম সাহিন গাজি (২০)। অসুস্থ দুই শ্রমিকের নাম সাবির কয়াল ও নাসির মোল্লা। সাহিন ও নাসিরের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ থানার কুমারজোল গ্রামে। সাবির উত্তর ২৪ পরগনার ন্যাজাট থানার মঠবাড়ির বাসিন্দা।মৃত সাহিন গাজির দাদু অহেদ আলি গাজি বলেছেন, ‘‘দুই সহকর্মীর প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে ছেলেটা নিজে অকালে চলে গেল। ওকে বাঁচাতে কেউই এগিয়ে গেলো না।’’ বানতলা চর্মনগরীর নতুন জল পরিশোধন প্লান্টে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য এ সবের কিছুই ছিল না বলে অভিযোগ। তদন্তকারী আধিকারিকেরা জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের এই সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়নি।

কর্তৃপক্ষের একাংশের গাফিলতির কারণেই দুর্ঘটনা ঘটল বলে দাবি করেছেন শ্রমিকেরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঠিকাদার সংস্থার আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, বানতলা চর্মনগরীতে পুরনো জল পরিশোধন প্লান্টের পাশাপাশি আরও একটি নতুন জল পরিশোধন প্লান্ট KMDA তৈরি করছে৷ বিভিন্ন কারখানার চামড়া শোধন করার নোংরা জল পাইপলাইনের মাধ্যমে ওই পরিশোধন প্লান্টে জমা হবে। সেখানে ওই জল পরিশোধিত হয়ে ফের বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহ করা হবে চামড়া শোধনের জন্য। প্লান্টের জন্য KMDA বানতলা চর্মনগরীর ৩ নম্বর গেটের কাছে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন বসানোর কাজ করছে।
ওই পাইপলাইনের সঙ্গে যুক্ত ম্যানহোলগুলিতে রং করার কাজ করছিলেন কয়েক জন শ্রমিক। সেই সময়ে চর্মনগরীর মূল গেটের বাইরে পাইপের ভিতরে রং করতে নেমে অসুস্থ বোধ করতে থাকেন সাবির ও নাসির নামে দুই শ্রমিক। তাঁরা উপরে ওঠার জন্য চিৎকার শুরু করেন। তাঁদের বাঁচাতে ভিতরে নামেন সাহিন। সাবির ও নাসিরকে উপরে তুলে দিতে পারলেও নিজে ভিতরেই আটকে পড়েন তিনি। অন্য শ্রমিকেরা চেষ্টা করেও সাহিনকে তুলে আনতে পারেননি। সঙ্কটজনক অবস্থায় সাবির ও নাসিরকে কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। খবর দেওয়া হয় কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানায়। পুলিশও চেষ্টা করে সাহিনকে তুলতে ব্যর্থ হয়। পরে খবর দেওয়া হয় দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরকে। কিন্তু পাইপের ভিতরে আটকে পড়া সাহিনকে উদ্ধার করতে গিয়ে রীতিমতো বেগ পেতে হয় তাদের। পরে একটি জেসিবি মেশিন নিয়ে এসে ভেঙে ফেলা হয় নিকাশি নালার পাইপ ও ম্যানহোল। আটকে পড়ার দীর্ঘক্ষণ পরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সাহিনকে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন-চাক্কা জ্যাম: কড়া নিরাপত্তার চাদরে লালকেল্লা-সহ রাজধানী দিল্লি

Advt

Previous articleবাড়ছে তাপমাত্রা, এই জেলাগুলিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা আজ রাত থেকেই
Next article‘গান্ধিগিরি’ : পেরেকের বদলে ফুলের চারা পুঁতলেন কৃষকরা