‘শ্রাচি’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি শ্রাবণ কুমার টোডি (Shrawan Kumar Todi) প্রয়াত। সোমবার সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। অল্প কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি রেখে গেলেন স্ত্রী, দুই পুত্র রবি ও রাহুল (Rabi and Rahul), দুই পুত্রবধূ এবং তিন নাতনিকে। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর (Sangbad Pratidin) সূচনা লগ্ন থেকেই তিনি পরিচালনমণ্ডলীতে ছিলেন। কার্যত তিনিই ছিলেন এই কাগজের প্রতিষ্ঠাতা।

১৯৪৩ সালে রাজস্থানের (Rajasthan) শিকারে শ্রাবণ টোডির জন্ম। তারপর তাঁর পরিবার চলে যায় তৎকালীন পূর্ববঙ্গে। ঢাকা (Dhaka) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ এবং এম কম পাস করেন শ্রাবণ কুমার। ১৯৬০-এর প্রথমদিকে কলকাতায় (Kolkata) চলে আসেন টোডিরা। এখানেই ‘শ্রাচি’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠা হয়। নিজের দক্ষতা এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ‘শ্রাচি’ (Shrachi) গ্রুপকে শিল্পজগতে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রাবণ কুমার টোডি। রিয়েল এস্টেট, ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাগ্রো মেশিনারি, স্টেশনারি থেকে শুরু করে শিল্পের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে কাজ করতে থাকে ‘শ্রাচি’ গ্রুপ।

শ্রাবণ কুমারের হাত ধরে পূর্বভারতে রিয়েল এস্টেটের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে যায়। কলকাতায় মল তৈরির পরিকল্পনাও তাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত। ‘শ্রাচি’ গ্রুপের তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে ‘সাউথ সিটি’ (South City) মল। আর্বানা (Urbana) এবং সাউথ সিটি রেসিডেন্সের মতো বিলাসবহুল হাউজিং কমপ্লেক্সও তৈরি করে তাঁর সংস্থা।

তবে শুধু রিয়েল এস্টেট নয়, অ্যাগ্রো মেশিনারি শিল্পেও প্রথমসারিতে শ্রাবণ কুমারের সংস্থা। তাঁর পাওয়ার টিলার সমৃদ্ধ করেছিল কৃষিক্ষেত্রকে। শুধু নিজের ব্যবসাকে বাড়ানোই নয়, তাঁর লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান করা। নিজের বিভিন্ন প্রকল্পে বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান করেন শ্রাবণবাবু। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতার ছাপ রাখেন তিনি। আমরি (Amri) হাসপাতাল এবং সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মতো আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। তাঁর চলে যাওয়ার খবরে শোকোস্তব্ধ সব মহল।

শ্রাবণ টোডি শিল্পপতি হয়ে উঠলেন মনেপ্রাণে ছিলেন বামপন্থী। সিপিএম সমর্থক। জ্যোতি বসু স্নেহ করতেন তাঁকে। ব্রিগেডে একাধিকবার দেখা গিয়েছে মাঠের ঘাসে কমরেডদের সঙ্গে সভা শুনছেন শ্রাচি সংস্থার কর্ণধার। মনপ্রাণ দিয়ে বামেদের শুভানুধ্যায়ী ছিলেন তিনি। তবে সুসম্পর্ক ছিল সবার সঙ্গে।

আমরি হাসপাতালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে তাঁকে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। সেই সময় তাঁর বহু বন্ধু পাশ থেকে সরে যায়। যদিও ওই দুর্ঘটনায় কিছুই করার ছিল না শ্রাবণবাবুর। এই অধ্যায়টি তাঁর মত মানুষের জীবনে বড় বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছিল।

পদবী অনুযায়ী ব্যাকরণগতভাবে বাঙালি না হলেও তিনি ছিলেন অনেক বাঙালির থেকে বড় বাঙালি। বাংলা ভাষার পাঠক। বাংলা কাগজের জনক। বহু বাঙালির অন্নদাতা। বহু বাঙালির পৃষ্ঠপোষক। বাংলাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। এখন সেই পতাকা থাকল তাঁর পুত্রদের হাতে।

আরও পড়ুন-সাধারণতন্ত্র দিবসে লালকেল্লা কাণ্ডে অবশেষে গ্রেফতার অভিনেতা দীপ সিধু
