Sunday, November 9, 2025

লালা আর ইসিএল কর্তাদের গোপন আঁতাত ক্রমশ প্রকাশ্যে

Date:

Share post:

কয়লাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড লালাকে নিয়ে তদন্ত যত এগোচ্ছে ততোই লালার আসল রূপ সামনে চলে আসছে। আর সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতেই, চোখ কপালে উঠেছে সিবিআই আধিকারিকদের। কারণ, তাদের কথায় বড় খিলাড়ি লালা! নিজে নেপথ্যে থেকে পুরো সাম্রাজ্য কীভাবে সামলাতে হয় তা লালার নেটওয়ার্ক না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
কয়েকদিন আগেই
সিবিআইয়ের (CBI) হাতে আটক হয়েছিল এক লালা ঘনিষ্ঠ। শিলিগুড়ি থেকে আটক করা হয়েছে বামাপদ দে নামে ওই ব্যক্তিকে। ইতিমধ্যেই কলকাতায় সিবিআই দফতর নিজাম প্যালেসে নিয়ে এসে তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে । সিবিআই সূত্রে খবর, লালার টাকা বিভিন্ন প্রভাবশালীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এই বামাপদর হাতে। লালার ‘হ্যান্ডলার’ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তাঁর হাত দিয়ে সপ্তাহে কোটি, কোটি টাকার লেনদেন হতো। অন্যদিকে কয়লাকাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর মোড়। নজরে বেশ কয়েকজন আইপিএস অফিসারের দিকেও।
সপ্তাহ খানেক আগে রণধীর বার্নওয়াল নামে বাঁশদ্রোণীর এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শুধু ব্যবসায়ীদের টাকাই নয়, বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী পুলিশ অফিসারের টাকাও থাকত ব্যবসায়ী রণধীর বার্নওয়ালের কাছে। লালা ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও তাঁর অফিসে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিবিআই।
যদিও এই ‘অভিযানে’ (Coal Scam) লালার (Lala) দোসর ছিলেন ইসিএলের আধিকারিকদেরই একাংশ।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, রাজ্যে নতুন কয়লা খনির সন্ধানে সমীক্ষার রিপোর্ট পৌঁছাত কয়লাচক্রের মূল চাঁই অনুপ মাজি ওরফে লালার হাতে। সেই রিপোর্ট ধরেই নতুন নতুন খনির গহ্বর থেকে কালো হিরে তুলে আনতেন তিনি। এভাবেই কয়েক লক্ষ কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। আর এ ক্ষেত্রে লালার ‘সাগরেদ’ ছিলেন ইসিএল আধিকারিকদের একাংশ।
তদন্তে উঠে এসেছে আরও মারাত্মক তথ্য । কী সেই তথ্য? ইসিএল প্রতি বছর একটি সমীক্ষা চালাত। তাদের লিজের যে সমস্ত জমি রয়েছে, তার বাইরেও কয়লা পাওয়া যেতে পারে এমন সম্ভাব্য জমির তালিকা তৈরি করতেন ইপিএল আধিকারিকরা । এটি একেবারেই ইসিএলের ‘সিক্রেট ইনফরমেশন’। অথচ সিবিআই জানতে পেরেছে, লালার কাছে সেই সমীক্ষার রিপোর্ট অনায়াসেই পৌঁছে যেত। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেই রিপোর্ট বিক্রি করতেন ইসিএলেরই কোনও না কোনও আধিকারিক। এভাবে লালা ২৬৮টি জমি কেনে। ইতিমধ্যেই সিবিআই সেই জমির তালিকা আদালতে জমা দিয়েছে। সিবিআই সেই জমি বাজেয়াপ্ত করতে চায়। অর্থাৎ লালা শুধু ইসিএলের জমি থেকে কয়লা চুরি করেই থেমে থাকেন নি। ইসিএলের চিহ্নিত জমিও নেটওয়ার্ক ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিজের কব্জায় নিয়েছেন।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পুরুলিয়া, নিতুরিয়া, আসানসোল, বাঁকুড়া, রানিগঞ্জ, বীরভূম-সহ বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে এই সব জমি। যার নীচে মিলেছে কালো হীরের হদিশ। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন , নির্দিষ্ট সময় অন্তর ওই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরেই জমি কিনতে তৎপর হয়ে পড়তেন লালা। তারপর তাতে খনন চালিয়ে হত কয়লা পাচার। কয়েক দফায় কেনা কয়েকশো একর জমির বাজার দর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
ইপিএলে কর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এভাবে জমি হাতিয়ে কয়লা পাচার যে সম্ভব নয়, তা মানছেন সিবিআই কর্তারাও।

spot_img

Related articles

বেঁচে থাকলে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত! পুরুলিয়ার সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ দেবাংশুর

ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বেঁচে নেই। নইলে বিজেপি রবীন্দ্রনাথকে রোহিঙ্গা ও নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত। শনিবার পুরুলিয়া শহরের...

টাকা পেয়েও কাজে দেরি! ‘বাংলার বাড়ি’ নিয়ে কড়া প্রশাসন, রিপোর্ট চাইল নবান্ন

প্রথম দফায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওয়ার পরও বহু উপভোক্তা এখনও ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের কাজ শুরু করেননি।...

ঝুলনের চোখে বাংলার সেরা ক্রিকেটার রিচা, মহিলা ক্রিকেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সৌরভ

বাংলার বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র ক্রিকেট তারকা রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন...

সৌরভ ছাড়া অন্য কারও ICC সভাপতি থাকার কথা নয়: বললেন ‘ঠোঁটকাটা’ মমতা

ছিল বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শনিবার ইডেনে সেই অনুষ্ঠানে বোমা ফাটালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের...