Thursday, August 28, 2025

কয়লাকাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড লালাকে নিয়ে তদন্ত যত এগোচ্ছে ততোই লালার আসল রূপ সামনে চলে আসছে। আর সেই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে আসতেই, চোখ কপালে উঠেছে সিবিআই আধিকারিকদের। কারণ, তাদের কথায় বড় খিলাড়ি লালা! নিজে নেপথ্যে থেকে পুরো সাম্রাজ্য কীভাবে সামলাতে হয় তা লালার নেটওয়ার্ক না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।
কয়েকদিন আগেই
সিবিআইয়ের (CBI) হাতে আটক হয়েছিল এক লালা ঘনিষ্ঠ। শিলিগুড়ি থেকে আটক করা হয়েছে বামাপদ দে নামে ওই ব্যক্তিকে। ইতিমধ্যেই কলকাতায় সিবিআই দফতর নিজাম প্যালেসে নিয়ে এসে তাকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে । সিবিআই সূত্রে খবর, লালার টাকা বিভিন্ন প্রভাবশালীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এই বামাপদর হাতে। লালার ‘হ্যান্ডলার’ হিসেবে কাজ করতেন তিনি। তাঁর হাত দিয়ে সপ্তাহে কোটি, কোটি টাকার লেনদেন হতো। অন্যদিকে কয়লাকাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর মোড়। নজরে বেশ কয়েকজন আইপিএস অফিসারের দিকেও।
সপ্তাহ খানেক আগে রণধীর বার্নওয়াল নামে বাঁশদ্রোণীর এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, শুধু ব্যবসায়ীদের টাকাই নয়, বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী পুলিশ অফিসারের টাকাও থাকত ব্যবসায়ী রণধীর বার্নওয়ালের কাছে। লালা ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ও তাঁর অফিসে তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে সিবিআই।
যদিও এই ‘অভিযানে’ (Coal Scam) লালার (Lala) দোসর ছিলেন ইসিএলের আধিকারিকদেরই একাংশ।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, রাজ্যে নতুন কয়লা খনির সন্ধানে সমীক্ষার রিপোর্ট পৌঁছাত কয়লাচক্রের মূল চাঁই অনুপ মাজি ওরফে লালার হাতে। সেই রিপোর্ট ধরেই নতুন নতুন খনির গহ্বর থেকে কালো হিরে তুলে আনতেন তিনি। এভাবেই কয়েক লক্ষ কোটি টাকার মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। আর এ ক্ষেত্রে লালার ‘সাগরেদ’ ছিলেন ইসিএল আধিকারিকদের একাংশ।
তদন্তে উঠে এসেছে আরও মারাত্মক তথ্য । কী সেই তথ্য? ইসিএল প্রতি বছর একটি সমীক্ষা চালাত। তাদের লিজের যে সমস্ত জমি রয়েছে, তার বাইরেও কয়লা পাওয়া যেতে পারে এমন সম্ভাব্য জমির তালিকা তৈরি করতেন ইপিএল আধিকারিকরা । এটি একেবারেই ইসিএলের ‘সিক্রেট ইনফরমেশন’। অথচ সিবিআই জানতে পেরেছে, লালার কাছে সেই সমীক্ষার রিপোর্ট অনায়াসেই পৌঁছে যেত। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সেই রিপোর্ট বিক্রি করতেন ইসিএলেরই কোনও না কোনও আধিকারিক। এভাবে লালা ২৬৮টি জমি কেনে। ইতিমধ্যেই সিবিআই সেই জমির তালিকা আদালতে জমা দিয়েছে। সিবিআই সেই জমি বাজেয়াপ্ত করতে চায়। অর্থাৎ লালা শুধু ইসিএলের জমি থেকে কয়লা চুরি করেই থেমে থাকেন নি। ইসিএলের চিহ্নিত জমিও নেটওয়ার্ক ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে নিজের কব্জায় নিয়েছেন।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, পুরুলিয়া, নিতুরিয়া, আসানসোল, বাঁকুড়া, রানিগঞ্জ, বীরভূম-সহ বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে এই সব জমি। যার নীচে মিলেছে কালো হীরের হদিশ। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন , নির্দিষ্ট সময় অন্তর ওই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরেই জমি কিনতে তৎপর হয়ে পড়তেন লালা। তারপর তাতে খনন চালিয়ে হত কয়লা পাচার। কয়েক দফায় কেনা কয়েকশো একর জমির বাজার দর প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
ইপিএলে কর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এভাবে জমি হাতিয়ে কয়লা পাচার যে সম্ভব নয়, তা মানছেন সিবিআই কর্তারাও।

Related articles

রজতজয়ন্তীতে ডব্লিউবিএনইউজেএসকে উচ্চ প্রশংসা, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রধান বিচারপতির

কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় (ডব্লিউবিএনইউজেএস)-এর উৎকর্ষতা এখন বেঙ্গালুরুর থেকেও এগিয়ে—রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের...

এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষা পিছবে না, আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট 

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেও লাভ হলো না কিছু প্রার্থীর। দেশের...

যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ! রবিবার টালিগঞ্জ থেকে ক্ষুদিরাম পর্যন্ত বন্ধ মেট্রো 

কলকাতার ব্লু লাইনের যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ। আগামী রবিবার মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন পর্যন্ত বন্ধ...

এনএইচএম কর্মীদের বড় উপহার, উৎসবের মুখে বোনাস ঘোষণা রাজ্যের 

উৎসবের দোরগোড়ায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের কাজে নিযুক্ত রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবক ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য বড় ঘোষণা করল রাজ্য সরকার।...
Exit mobile version