Monday, November 3, 2025

বদলেছে জঙ্গলমহল, সৌজন্যে মমতার সরকার:চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলম

Date:

চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকৃতির সঙ্গে তার নিবিড় যোগ।শাল-পিয়াল-মহুয়ায় ঘেরা জঙ্গল। ধূ ধূ প্রান্তর। রুক্ষ মাটির মায়াবী আবেশ। এরই মাঝে এক টুকরো প্রাণের ছোঁওয়া। একটা সময় কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছিল সেই প্রাণ। প্রাণোচ্ছ্বাস আর সবুজ মন ঢাকা পড়েছিল কুয়াশায়। বুটের আওয়াজ, মুখোশের মুখ বদলে দিয়েছিল স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ছন্দ। তাল কেটে গিয়েছিল জীবনের ছন্দে । বাদ পরেনি কচি মনগুলোও । পড়াশোনা থেকে খেলাধূলা সবই লাটে উঠেছিল।
কিন্তু আজ বদলেছে সবকিছু। জঙ্গলমহল ফিরে পেয়েছে তার স্বাভাবিকতা। প্রকৃতি ফের এখানে হাসছে। আর সেইসঙ্গে হাসছে প্রকৃতির সন্তানেরাও।
ফিরে চলুন সেই দিনগুলোতে। রোজই খবরের শিরোনামে তখন জঙ্গলমহল। খুন-রক্ত-বিস্ফোরণ-হামলা – রোজনামচা হয়ে উঠেছিল। রাজ্যে তখন বাম শাসন। মাও দমনে ব্যর্থ প্রশাসন। সাধারণ মানুষের জীবনে আতঙ্কের দিবারাত্রি। বেলা ডোবার আগেই ঘরে ফেরার তাড়া আট থেকে আশি সবার। যিনি বাড়ি থেকে বেরোলেন সকালে, তিনি নিজেও জানেন না আদৌ ফিরবেন কিনা! হয়তো পরিজনরা শুনবেন তার রক্তাক্ত প্রস্থান ইহজগত থেকে ।
২০১১-য় রাজ্যে পালাবদলের পর ছবিটা আস্তে আস্তে পাল্টে গেল। মাও সন্ত্রাস প্রতিহত করে এলাকায় শান্তি ফেরালো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। উন্নয়ন পৌঁছে দিল সহজ সরল মানুষগুলোর দুয়ারে। ফের হাসির ঝিলিক, খুশির ফোয়ারা ।
সেই জঙ্গলমহল এখন কেমন আছে। কি বলছেন সেখানকার মানুষ? স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় কতটা পরিবর্তন এসেছে? রুক্ষ মাটি থেকে সত্যের সন্ধানে গিয়ে সবে পৌঁছেছি ঝালদা শহর ছাড়িয়ে। ঝালিদা রেল ক্রশিং পেরিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটছে গাড়ি। যেদিকে চোখ যায় শুধু সুবিস্তৃত শাল গার্ডেন। দুপুরের রোদ ঢাকা পড়েছে জঙ্গল ঘেরা রাস্তায়। ঘন্টা দুয়েক পথ পেরোনোর পর গাড়ি থামাতে হল। ছেলেদের কোলাহলে এবার অবাক হওয়ার পালা। জঙ্গলের মাঝখানে সবুজে ঘেরা স্পোর্টস গ্রাউন্ড। ব্যাট বল হাতে সৌরভ- সচিন হওয়ার সে কী দামাল উদ্দীপনা। সত্যিই যেন হাসছে জঙ্গলমহল। আরও কিছুটা রাস্তা।
জঙ্গল ঘেরা রুক্ষ জমিতে শক্তি প্রদর্শন করে চলেছে ছিপছিপে এক মেয়ে। অদম্য সাহস, অদম্য শক্তি সঞ্চয়ের যেন কসরত চলছে প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে ।
আসলে এখানে এলে বোঝা যায় যে প্রতিভার অভাব নেই। বরং অনেকের চেয়ে তারা খেলাধুলোয় বেশ কয়েক কদম এগিয়েই। উপযুক্ত সেই প্রশিক্ষণের পাঠও এখন সরকারের দৌলতে হাতের নাগালে । তাই তো নতুন খেলোয়াড় তৈরির স্বপ্ন দেখছে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহল। শান্তির আবহে উৎসাহিত জঙ্গলমহলের নতুন প্রজন্ম।
আর আতিথেয়তা , সে তো নতুন করে বলার কিছু নেই । প্রকৃতির কোলে ওদের স্বচ্ছ, সহজ – সরল মন নিয়ে যখন বলে, ‘বাবু দাওয়ায় বসে দুটো মুড়ি অন্তত খেয়ে যান।’ তখন সত্যিই মনে হয় জঙ্গলমহলে এখন শান্তির বাতাবরণ ।

 

Related articles

‘বন্দেমাতরম’-এর সার্ধ শতবর্ষে রাজ্যজুড়ে উদযাপন, মুখ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার 

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অমর সৃষ্টি ‘বন্দেমাতরম’-এর সার্ধ শতবর্ষ উদযাপন করবে রাজ্য সরকার। সোমবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত...

বিদেশি বন্দি-মুক্তির দাবি! জনস্বার্থ মামলা দায়ের কলকাতা হাইকোর্টে 

রাজ্যে মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে ভোটার তালিকা সংশোধনীর কাজ বা এসআইআর। ঠিক এই সময়েই আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের...

রাজ্যের প্রতিটি জেলায় খুলছে সোশ্যাল মিডিয়া ইউনিট, সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার

রাজ্যের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ এবার আরও দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছবে সামাজিক মাধ্যমের মাধ্যমে। সেই লক্ষ্যেই প্রতিটি জেলায় পৃথক সোশ্যাল...

অস্ট্রেলিয়ায় রাত জেগে স্মৃতিদের বিশ্বকাপজয়ের সাক্ষী থাকলেন সূর্যরা

মুম্বইয়ে বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে ভারতীয় মহিলা দল(Indian women team)। গোটা দেশ সাক্ষী থেকেছে হরমনপ্রীতদের অবিস্মরণীয় কীর্তির।...
Exit mobile version