গত বছরের মহামারির সেই করুণ ছবি ফিরছে। অভিশপ্ত দিনগুলির বীভৎসতা ফের টাটকা হতে শুরু করেছে। দেশজুড়ে আছড়ে পড়েছে করোনার (Corona) দ্বিতীয় ঢেউ (Second Wave)। অক্সিজেন নেই, নেই ভ্যাকসিন, হাসপাতেলেও বেড নেই। সংক্রমণের রেকর্ড। শ্মশানের (Burning Ghat) বাইরে লম্বা লাইন। এরই মধ্যে আরও এক মর্মান্তিক-বেদনাদায়ক ঘটনার সাক্ষী থাকলো গোটা দেশ।

মৃত্যুর (Dead Body) পর দেহ শ্মশান পর্যন্ত নিয়ে যেতে চায়নি কোনও গাড়ি বা এম্বুলেন্স। অগত্যা কাতর আবেদন আর অপেক্ষার সীমা ছাড়িয়ে কাপড়ে জড়িয়েই স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে হাঁটা লাগালেন স্বামী। ৩ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে শ্মশানে পৌঁছলেন। সেখানেও অপেক্ষা। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে হল সৎকার। সভ্য দেশে এমন “মধ্যযুগীয়” ঘটনার সাক্ষী দক্ষিণের রাজ্য তেলঙ্গানার (Telengana) কামারেড্ডি (Kamareddi)।

জানা গিয়েছে, মহিলার নাম নাগলক্ষ্মী। প্রয়াত নাগলক্ষ্মী এবং তাঁর স্বামী কামারেড্ডি রেলস্টেশনের কাছে একটি ঝুপড়িতে থাকতেন। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। ভিক্ষা করেই কোনওরকমে চলতো। সম্প্রতি, খুব অসুস্থ ছিলেন নাগলক্ষ্মী। স্ত্রীর চিকিৎসার সামর্থ্য ছিল না ভিক্ষুক স্বামীর। তবে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না তা জানার আগেই নাগলক্ষ্মীর মৃত্যু হয়।

আরও পড়ুন-করোনা রোগীদের সাহায্য করতে WBDF এর উদ্যোগ

মৃত্যুর পর শেষকৃত্যের জন্য রেলের পক্ষ থেকে আড়াই হাজার টাকা দেওয়া হয় নাগলক্ষ্মীর স্বামীকে। কিন্তু সেই টাকা দিতে চেয়ে স্ত্রীর মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গাড়িও পাননি তিনি। করোনা সংক্রমণের জন্যই নাগলক্ষ্মীর মৃত্যু হয়েছে, এমন খবর চাউর হওয়ায় আতঙ্কে কোনও গাড়ির চালক নিয়ে যেতে চায়নি মৃতদেহ। ফলে বাধ্য হয়েই স্ত্রীর মৃতদেহ কাঁধে তুলে নিয়ে হেঁটেই শ্মশানে যান তিনি।

এই ঘটনা সামনে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে গোটা দেশজুড়ে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সত্যিই করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকলেও কেন তাঁকে পরিবারের লোককেই নিয়ে যেতে হবে শ্মশান পর্যন্ত প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। প্রশাসনের গাফিলতির জন্যেই নির্মম দৃশ্যের সাক্ষী থাকল তেলেঙ্গানা।

অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, “সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র…, এটাই কি মোদির আত্মনির্ভর ভারতের প্রকৃত কঙ্কালসার ছবি!”
