ভোটের আগে ছিল ঘরের ছেলে, এখন তাঁরাই পর! করোনা অতিমারিতে দেখা নেই বিজেপি বিধায়কদের

সুব্রত ঠাকুর, অশোক কীর্তনিয়া এবং বিশ্বজিৎ দাস

একুশের বিধানসভা ভোটে বাংলায় জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস। তৃতীয়বারের জন্য মসনদে বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে স্রোতে ভেসে গিয়েছে পদ্ম ফুল, আরও একবার ফুলে ফেঁপে উঠেছে ঘাসফুল। এরই মধ্যে বনগাঁ মহকুমার চারটি আসনেই জয়ী হয়েছেন বিজেপির প্রার্থীরা। আসনগুলি হল বনগাঁ উত্তর, বনগাঁ দক্ষিণ, বাগদা, গাইঘাটা। ভোটের আগে বিজেপি প্রার্থীরা হাতজোড় করে ভোট চাইতে এসেছিলেন। বাড়ি বয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন প্রতিশ্রুতি। আর ‘স্বপ্ন’ দেখতে শুরু করেছিলেন সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দারা। ভোট মিটতেই আর দেখা নেই বিজেপি বিধায়কদের এমনই অভিযোগ সেই এলাকার বাসিন্দাদের। তবে কি বিজেপি প্রার্থীরা তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা কি ভুলেই গিয়েছেন?

করোনা অতিমারি আবহে বিধায়ককে পাশে না পেয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বনগাঁ দক্ষিণের বাসিন্দারা। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “ভোটের আগে ঘরের ছেলে বলে প্রচার করেছিল বিজেপি। এখন দেখছি, ঘরের ছেলেই পর হয়ে গিয়েছে। ভোটে জেতার পর বিধায়ককে এলাকায় দেখা যায়নি।”

বনগাঁ উত্তর বিধানসভায় জয়ী হয়েছেন বিজেপির অশোক কীর্তনিয়া। সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভোটে জেতার পর থেকে বিধায়ককে এলাকায় দেখাই যায়নি। জানা গিয়েছে,সেই এলাকায় করোনায় আক্রান্ত বহু মানুষ। মারাও গিয়েছেন বেশ কয়েকজন। এই পরিস্থিতিতে বনগাঁর মানুষ বিধায়ককে পাশে পাননি বলে অভিযোগ। এক প্রবীণ বাসিন্দার কথায়, “ভোটে হারলেও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা করোনা অতিমারিতে যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু বিজেপি নেতাদের পাত্তা নেই। ভোটের আগে তাঁরাই ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।” তবে এলাকায় দেখা না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্থানীয় বিধায়ক অশোক কীর্তনিয়া। তিনি বলেন, “এই সময়ে সবাইকেই সরকারি বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। কেউ আমাকে ফোন করলে তাঁর পাশে থাকার চেষ্টা করছি। ভোটে জিতেই আমি নিজের উদ্যোগে ২ টি অ্যাম্বুলেন্স বের করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে তা করা যায়নি।”

আরও পড়ুন-তাণ্ডবের জন্য তৈরি হচ্ছে যশ, ঝড় সামলাতে প্রস্তুতি রাজ্যের

একই অভিযোগ রয়েছে বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের বিরুদ্ধে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভোটের আগে এলাকায় এসে হাতজোড় করে ‘ভোট ভিক্ষা’ করতে দেখা গিয়েছিল বিজেপি নেতাদের। ভোটে জেতার পর তাঁদের খোঁজ নিচ্ছেন না বিজেপি বিধায়ক। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস। তিনি বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে সকলের বাড়ি বাড়ি যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফোন করে খোঁজ নিচ্ছি। করোনা আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশে আছি।”

গাইঘাটা এলাকার মানুষরাও ক্ষুব্ধ তাঁদের বিধায়কের বিরুদ্ধে। ভোটে জেতার আগে গাইঘাটার মানুষের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন বিজেপির সুব্রত ঠাকুর। কিন্তু করোনা অতিমারিতে তাঁকে এলাকায় দেখতেই পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। সেখানকার মানুষের অভিযোগ, বিধায়ককে এখনও পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। পাল্টা জবাব দিয়ে সুব্রত ঠাকুর বলেন, “এখন জমায়েত করে কোনও কিছু করা উচিত নয়। গাইঘাটায় ৫০ বেডের সেফ হোম তৈরির ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি মাস্ক ও স্যানিটাইজার বিলি করা হচ্ছে।”

করোনাকালে বনগাঁ মহকুমার বাসিন্দাদের জন্য একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্যদফতর। বনগাঁ হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে ২৫০ টি বেড করা হয়েছে। যা আগে ছিল ৫০ টি বেডের ওয়ার্ড। হাসপাতালে ২ টি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও ৫০ বেডের এইচডিইউ ওয়ার্ড তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।

Advt

Previous articleতাণ্ডবের জন্য তৈরি হচ্ছে যশ, ঝড় সামলাতে প্রস্তুতি রাজ্যের
Next articleকোভিড কেড়ে নিল ‘শান্তিপুরের অভিভাবক’ অজয় দে’কে