উহানের ল্যাব থেকে মুছে ফেলা হয়েছে করোনার উৎস, দাবি গবেষকের

করোনার উৎস খুঁজতে গিয়ে ফের নতুন করে প্রশ্ন তুলছে আমেরিকা। উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে করোনাভাইরাস তৈরি হয়েছিল কিনা, তা নিয়ে ফের জল্পনা তৈরি হয়েছে। আর এই জল্পনাকে উস্কে দিয়েছে আমেরিকা। অবশ্য এর কারণও আছে। চিনের সার্স প্রজাতির ভাইরাস বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, ২০১৫ সাল থেকে উহানের বায়োসেফটি ল্যাবরেটরিতে করোনার মতো ভাইরাস নিয়ে কাজ হচ্ছিল। বাদুড় থেকে ছড়ানো ভাইরাসের উপর এবং বাদুড় অধ্যুষিত এলাকায় অনুসন্ধানের জন্য এই শি ঝেংলি ‘ব্যাট ওম্যান’ নামে পরিচিত। যদিও উহানের ল্যাব শি ঝেংলির এই দাবি মানতে চায়নি। প্রাথমিক পর্বে, তাঁরা সবটাই বুজরুকি বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু থেমে থাকেননি ঝেংলি। তিনি ফের দাবি করেছেন, উহানে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার আগেই ভাইরাস সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট ডিলিট করে দিয়েছিল উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি।
ঝেংলির দাবি, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম উহানের খোলা মাছ মাংসের বাজার থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের খবর আসে। তাঁর তিনমাস আগেই অর্থ্যাৎ সেপ্টেম্বর মাসে ল্যাবোরেটরির ডেটাবেস থেকে যাবতীয় তথ্য উড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি ভাইরাস নিয়ে কী কী গবেষণা হয়েছিল, তাঁর কোনও চিহ্নও রাখা হয়নি।
করোনাভাইরাস আগেও প্রকৃতিতে ছিল। কিন্তু সার্স-কর্ভ-২ নামে করোনা পরিবারের যে ভাইরালের স্ট্রেন বিশ্বে অতিমারীতে পরিণত হয়েছে, তাঁর সঙ্গে করোনাভাইরাসের বাকি প্রজাতির খুব একটা মিল নেই বলে দাবি শি ঝেংলির। আর এরপর থেকেই উহানের ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে করোনাভাইরাস তৈরি হয়েছিল কিনা, তার সন্দেহ আরও জোরদার হয়। সার্স-কর্ভ-২ ভাইরাস যেভাবে জিনের গঠন বদলাচ্ছে বা মিউটেশন হচ্ছে তা অন্য প্রজাতির ভাইরাসের মধ্যে দেখা যায় না। কাজেই এই ভাইরাস এতটা সংক্রামক হল কীভাবে, নাকি কৃত্রিমভাবে ভাইরাসটিকে সংক্রামক করা হয়েছে, সেটা খুঁজে বের করাই ঝেংলির লক্ষ্য। শুধু এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। করোনার উৎস খুঁজে বের করতে একটি বিশেষজ্ঞ টিমও গড়ে তুলেছে৩ন তিনি। যার নাম DRASTIC অর্থ্যাৎ ডিসেন্ট্রালাইজড রেডিক্যাল অটোনোমাস সার্চ টিম ইনভেস্টিগেটিং কোভিড-১৯। ঝেংলির পাশাপাশি তা৬র টিমের দাবি, প্রকৃতিতে এই মারণভাইরাস জন্মায়নি, কৃত্রিমভাবে মিউট্যান্ট ভাইরাস তৈরি করা হয়েছে। তাঁরা সাফ জানিয়েছেন, উহানের ল্যাব থেকেই এই ভাইরাস লিক করেছে।

উহানের ল্যাব থেকে পাওয়া তথ্যগুলি হল-
২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে শি ঝেংলি জানিয়েছিলেন, উহানের বায়োসেফটি ল্যাবরেটরির ডেটাবেস আর অ্যা কসেস করা যাচ্ছে না। সাইবার নিরাপত্তার জন্য উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরালজি এধরণের ব্যবস্থা করেছিল। ওই ডেটাবেসে ভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণার যাবতীয় তথ্য ছিল ।
২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারি শি ঝেংলি ফের জানান, ডেটাবেসের সব তথ্য অনলাইন থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। কেউ যাতে নজরদারি চালাতে না পারে তাই সবকিছুই অফলাইন করে দেওয়া হয়েছে। টমি ক্লেরিকে ইমেলে এমনটাই জানিয়েছিলেন ঝেংলি।
২০২১ সালের মার্চ মাসে আরও একটি সাক্ষাৎকারে নিউ ইয়র্কের ইকো-হেলথ আলিয়ান্সের প্রধান পিটার ডাসজাক শি ঝেংলিকে এমন অভিযোগ তোলার কারণ জিজ্ঞাসা করায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে উহানের ল্যাবকে সাহায্য করার পিছনে এই সংস্থারই নাম জড়িয়েছে। এছাড়াও শোনা যায়, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা অনুদান উহানের ল্যাবকে পাইয়ে দিতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল পিটারের সংস্থা। এও জানা যায়, যে কাজের জন্য সেই অনুদান দেওয়া হয়েছিল, সেটা ছিল ভাইরাস নিয়েই গবেষণামূলক কোনও কাজ। ঝেংলির অভিযোগ, সাধারণ ভাইরাসকে কৃত্রিম উপায়ে সংক্রামক বানিয়ে তোলার কাজ হচ্ছিল ল্যাবরেটরিতে। একারণেই পিটারের সংস্থা থেকে আর্থিক সাহায্য গিয়েছিল।

Advt

 

Previous articleঅভিষেককে আক্রমণ করতে গিয়ে কুণালের তীব্র কটাক্ষের মুখে শুভেন্দু
Next articleরাজ্যে টানা কমছে করোনা সংক্রমণ, বাড়ছে সুস্থতার হার