কালিয়াচক কাণ্ডে নয়া মোড়, সেক্স টেপ প্রকাশের হুমকিতেই দাদার মুখ বন্ধ করেছিল আসিফ?

মালদা জেলার কালিয়াচকের গণহত্যার ঘটনায় তদন্তে নেমে এবার সিআইডির হাতে চাঞ্চল্যকর সূত্র উঠে এল। একখানি সেক্স টেপ হাতে এসেছে সিআইডির। আর তার জেরেই এবার এই গণহত্যাকাণ্ডের মোড় ঘুরে যেতে চলেছে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ একটু অবাকই হয়েছিল বাড়ির বড় ছেলে কী এমন ভয় পেল যে চোখের সামনে বাবা-মা, বোন আর ঠাকুমাকে খুন হতে দেখেও চার মাস মুখ বুজে থাকল। আর তাও কলকাতায়। এবার সেই রহস্যের জট খুলতে চলেছে ।

ভবানীভবনের গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন বছর একুশের আরিফ জড়িয়ে ছিল প্রেমের সম্পর্কে। মেয়েটি তার বোনের বন্ধু। সেই সূত্রে তাদের বাড়িতেও আসতো। সেই সম্পর্কই গড়িয়েছে বিছানায়। কিন্তু তারা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেনি সব কিছু সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করে রাখছে আসিফ। যখন তারা তা জানতে পেরেছে তখন ব্ল্যাকমেলিং শুরু করে দিয়েছে আসিফ। আর তার জেরেই মালদার বাড়ি থেকে যেমন আরিফ দূরে থেকেছে তেমনি খুনের ঘটনা নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটেছে।

পুলিশ আসিফদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক আই-ফোন, অ্যাপলের ল্যাপটপ এবং টাকা ট্রান্সফারের যন্ত্রের মতো জিনিস পেয়েছে। সঙ্গে পেয়েছে দুই বন্ধুর বাড়িতে পাওয়া অস্ত্রও। আসিফদের বাড়ি থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত বেশি দূরে নয়। মাত্র ১৪-১৫ কিমি। আর এখানেই সিআইডির আধিকারিকদের মনে খটকা লেগেছে আসিফ কী চিনের গুপ্তচর?

সম্প্রতি মালদাতেই ধরা পড়েছে এক চিনা গুপ্তচর হান চুন ওয়ে। এই হানের সঙ্গে কী আসিফের কোনও যোগাযোগ ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু করে দিয়েছে সিআইডি।

আরও বেশ কিছু তথ্য রীতিমতো ভাবাচ্ছে সিআইডি কে। আসিফ তার বাড়ির ভেতরে ও বাইরের আশেপাশে নানা আধুনিক বৈদ্যুতিন যন্ত্র বা গ্যাজেট বসিয়েছিল। এই সব দামি যন্ত্রপাতি কেনার জন্যই সে প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করেছিল। এর জন্য বাবা জাওয়াদ আলির ৬ বিঘা লিচুর বাগান, পাঁচ বিঘা চাষের জমি, দু’টি ডাম্পার, একটি বোলেরো, দু’টি মোটরবাইক বছর খানেকের মধ্যেই বিক্রি করে দেয় আসিফ। সব মিলিয়ে যার মূল্য কোটি টাকার উপরে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আসিফের কাছ থেকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, একাধিক মোবাইল ফোন, রাউটার, ওয়াকিটকির মতো যন্ত্র উদ্ধার হয়েছে। আরও বেশ কিছু  বৈদ্যুতিন যন্ত্র উদ্ধার হয়েছে, যার ব্যবহার তাঁরাও জানেন না। সেই সব যন্ত্রের ব্যবহার জানতে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।

অস্ত্রের যোগান নিয়ে নিশ্চিত হয়েছে সিআইডি। আসিফের দুই বন্ধুকে জেরা করে তাঁরা জানতে পেরেছেন অস্ত্র কেনা হয়েছে ঝাড়খণ্ড থেকে। কিন্তু কেন সেই অস্ত্র কেনা হয়েছে তা তারাও জানে না। তবে অস্ত্র তাদের বাড়িতে লুকিয়ে রাখার জন্য বা এই গোটা বিষয়টি চেপে রাখার জন্য আসিফ তাদের প্রতি মাসে ১০-১২ হাজার টাকা করে দিতে শুরু করেছিল। কিন্তু এই টাকার উৎসবে কী? তা জানার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দারা ।
সিআইডি’র কর্তারা জেনেছেন, আসিফ মালদা জেলা পুলিশের সাইবার সেল হ্যাক করে দিয়েছিল একবার। সেই ঘটনায় পুলিশ তাকে আটকও করে। কিন্তু নাবালক হওয়ায় তখনকার মতো তাকে ছেড়েও দেয়। এইসব কিছু ভাবাচ্ছে সিআইডি আধিকারিকদের। তাঁদের ধারনা এই ঘটনা নিছক খুনের ঘটনা নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ও। কেননা তাঁরা প্রমাণ পেয়েছেন যে আন্তর্জাতিক হ্যাকারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল আসিফের। বাড়িটিকে সাইবার ল্যাব হিসাবে তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল আসিফের। সেই সঙ্গে ওই গুদাম ঘর হয়ে উঠেছিল অস্ত্র রাখার অন্যতম ঠেক।

Previous articleপ‍্যারাগুয়েকে হারিয়ে কোপার কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল আর্জেন্তিনা
Next articleশ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করবে রাজ্য সরকার