ভবানীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনে “ঘরের মেয়ে” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কাছে পেয়ে খুশি মানুষ। তাঁর জেতা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা। গেরুয়া শিবিরের যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত ভবানীপুরের মানূষ। অন্যদিকে বিজেপির প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে কাদাছোঁড়াছুঁড়ি। দলের প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দলের ভেতরেই উঠছে প্রশ্ন। ঢাক ঢোল বাজিয়ে মনোনয়ন পেশ করলেও প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালকে নিয়ে বিরোধিতা করেছেন অনেকেই। এমনকি সূত্রের খবর, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও চান না এই প্রার্থী জমানতরক্ষা করুন, কারণ ইনি মূলত দিলীপবিরোধী শিবিরে থাকেন। ফলে ভবানীপুরে তৃণমূলের প্রচার যখন তুঙ্গে, তখন বিজেপির ঘরোয়া মহলেই চলছে অন্তর্কলহ। এমনকি সিপিএমের থেকেও কম ভোট পাওয়ার অনুমান করছে বিজেপির একাংশ।

আরও পড়ুন:ভবানীপুর উপনির্বাচন: বিজেপি করোনা বিধি ভাঙলেও বাম প্রার্থীর মনোনয়ন ছিল সাদামাটা
1) বিজেপি সূত্রের খবর এই প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল কোনও নেত্রী নন। দু’একজনের মদতে কোনওভাবে কমিটিতে ঢোকা। মহিলা মোর্চার একটি পদে ছিলেন। সবচেয়ে বড় খবর হল লকেট চট্টোপাধ্যায় যখন মহিলা মোর্চার সভানেত্রী, তখন এই প্রিয়াঙ্কাকে সামনে রেখে লকেটকে উত্যক্ত করত দলের একটি শিবির। প্রিয়াঙ্কা তখন গায়ক-মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র বিশেষ স্নেহধন্য থাকায় লকেটকে তিতিবিরক্ত করা হত। এককথায় চূড়ান্ত দলবাজি চলত। লকেটকে সরানোর খেলা চলত। লকেট অপমানিতও হতেন। শেষে একবার রেগেমেগে কমিটি বদল করে প্রিয়াঙ্কাকে মহিলা মোর্চা থেকেই তাড়িয়ে দিয়েছিলেন লকেট। সংগঠনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বাড়ায় এরকম পদক্ষেপ নিতেই হয়। ফলে দলেই প্রমাণিত যে টিবরেওয়াল গ্রহণযোগ্য নন। এখন লকেট যাতে রেগে না থাকেন, তাই প্রচারক তালিকায় তাঁর নাম রেখে হাতেপায়ে ধরার প্রক্রিয়া চলছে।

2) ভবানীপুরে প্রার্থী পাচ্ছিল না বিজেপি। দিলীপ ঘোষ স্বয়ং একথা প্রকাশ্যে বলে দেন। দলীয় সূত্রে খবর, তারপরেও টিবরেওয়াল দলের পছন্দ ছিলেন না। এখানে দাঁড়াতে বলা হয় লকেট চট্টোপাধ্যায়কেই। কিন্তু লকেট সটান না বলে দেন। তখন ঠিক হয় কিছুদিন অন্তত প্রচারে থাকার স্বান্ত্বনা পুরস্কার দিয়ে টিবরেওয়ালকে দাঁড় করানো হবে। যেহেতু তিনি বাবুলের স্নেহধন্য এবং বাবুল-শুভেন্দুর বন্ধুত্বসূত্রে নামটি আসা, তাই দিলীপ ঘোষ শিবির চাইছে এর জামানত বাজেয়াপ্ত হোক।

3) আর এস এসের বড় অংশ বেদম ক্ষুব্ধ এই টিবরেওয়ালকে নিয়ে। এতটাই ক্ষোভ, যে সিনিয়র আর এস এস সংগঠক, পুরনো বিজেপি কর্মী স্বপন দাস, যিনি এখন বিভিন্ন টিভি বিতর্কে বিজেপির পক্ষে বলেন, তিনিও একটি সংবাদমাধ্যমে নিজের কলমে লিখেছেন টিবরেওয়ালকে প্রার্থী করে নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারলো বিজেপি। নিজের যুক্তিগুলো সবিস্তারে ব্যাখ্যা করে স্বপনবাবু লিখেছেন,” আমরাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার বাংলার মুখ করে তুললাম।” আর এস এসের এই ক্ষোভ যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

4) ভবানীপুরে বুথে বুথে স্থানীয় এজেন্ট পাচ্ছে না বিজেপি। কেন্দ্রের নির্বাচন কমিশনের নতুন নিয়মের সুযোগ নিয়ে অন্য বুথ থেকে দু’চারজনকে আনছে। কিন্তু শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাচ্ছে না।

5) বিজেপিতে এখন পরিকল্পনা হচ্ছে প্রচারে প্রার্থীর শুধু নাম রাখার, টিবরেওয়াল পদবি উল্লেখ বেশি না করার বা ছোট করে রাখার। হঠাৎ এই নির্দেশ যাচ্ছে দলে।

6) লকেট মহিলা মোর্চা থেকে টিবরেওয়ালকে সরানোর পর তাঁর কোনও পদ ছিল না। তখন তিনি লোকসভার টিকিটের জন্য বর্ধমান, দুর্গাপুর এলাকায় পড়ে থাকতেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয় সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান, যিনি দিলীপ ঘোষ শিবিরের বিরুদ্ধে। তবে তাঁকে দল টিকিটের যোগ্য মনে করেনি। তখন টিবরেওয়াল ফের এন্টালিতে এসে ভিড়ে যান। বিধানসভায় এবার লড়েন। গোহারা হেরে যান তৃণমূলের স্বর্ণকমল সাহার কাছে। এরপর ভবানীপুরে কেউ না দাঁড়াতে চাওয়ায় তাঁকে টিকিট দিয়েছে দল।

7) বিজেপির একাংশ যেভাবে আইনজীবী হিসেবে টিবরেওয়ালকে দেখাতে চাইছে, তিনি আদৌ তেমন কিছু নন। বিজেপির সূত্রই বলছে, দলের মামলা আসলে লড়েন অন্য সিনিয়ররা। দলের নেতাদের সঙ্গে সুসসম্পর্কের জেরে কেউ কেউ প্রচারের সুযোগটা নেন। বাস্তবটা দলের সবাই জানেন। বেশ কিছু আইনজীবী এনিয়ে নেতৃত্বের উপর ক্ষুব্ধ।

এহেন পরিস্থিতিতে বিজেপির ভবানীপুরের প্রার্থীকে তাদের দলেই নানা চোরাস্রোত। আন্দোলন বা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে না উঠে এসে সটান মঞ্চে বসা জনভিত্তিহীন টিবরেওয়ালকে দলই মেনে নিচ্ছে না, দলের বাইরের বৃত্তের মানুষ তো মানছেনই না। এদিকে ঘরের মেয়ের পাশে জনজোয়ার। নন্দীগ্রামের ষড়যন্ত্রের যোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত ভবানীপুরের মানুষ। পুজোর আগেই ঘরের মেয়ের রেকর্ড ভোটে জেতা কেবল সময়ের অপেক্ষা।

