Saturday, December 20, 2025

শুধু কার্টুনিস্ট নন, পুরোদস্তুর শিশু সাহিত্যিক নারায়ণ দেবনাথ

Date:

Share post:

কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের সঙ্গে শুকতারা নবকল্লোলের সম্পাদিকা রূপা মজুমদার

নারায়ণ দেবনাথ অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে একের পর এক গল্প বলে গিয়েছেন। মাসে তিনটে করে। বাঁটুল, হাঁদাভোঁদা, নন্টে ফন্টে। তার সঙ্গে বাহাদুর বেড়াল, গোয়েন্দা কৌশিক। বাঁটুলের বয়স এখন ৫৫। হাঁদাভোঁদার বয়স এখন ৬৫। এই দীর্ঘ সময় ধরে দুপাতায় এক একটা স্বয়ং সম্পূর্ণ গল্পের শ্রষ্টা। এমন একজন সৃজনক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বকে কি শুধু কার্টুনিস্ট বা ব্যঙ্গচিত্রী বলা যায়? তিনি তো একজন পুরোদস্তুর গল্পকার। একজন শিশু সাহিত্যিক। এ ছাড়া অন্য কোনও অভিধায় তাঁকে কি মানায়?

সবচেয়ে বড় কথা, নারায়ণ দেবনাথ নিজে শিশু সাহিত্যিক হিসেবে অভিহিত হতে চাইতেন। উনি বলতেন, আমি ছবিতে গল্প বলি। আমি গল্প ছবিতে আঁকি। সুতরাং, আমি শিশু সাহিত্যিক।

এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল, বিশেষত লোকে যখন কমিকসের সাহিত্যগুণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করত। দুঃখ পাওয়ার পরক্ষণেই সব এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দিয়ে বলতেন, আমি মানুষকে আনন্দ দিতে পেরেছি, মানুষ সেটা স্বীকার করে, এটাই আমার সবচেয়ে বড় স্বীকৃতি।

আরও পড়ুন: নারায়ণ দেবনাথ : একটি প্রতিষ্ঠান, একটি যুগ, সাহিত্যে বেনজির

আদ্যোপান্ত একজন সহজ সরল বাঙালি। খেতে ভালবাসতেন, খাওয়াতেও। প্রিয় খাবার ছিল ফিস ফ্রাই। পছন্দের মাছের তালিকায় ইলিশ চিংড়ি দুই-ই ছিল। পছন্দের পোশাক ধুতি পাঞ্জাবি। নিজের তৈরি করা চরিত্রগুলোর বাইরে টম অ্যাণ্ড জেরি আর টারজান ছিল ভীষণ পছন্দের। সুধীন্দ্রনাথ রাহা অনূদিত টারজানের গল্পের ইলাসট্রেশনও করেছেন। কর্মজীবন শুরুই করেছিলেন দেব সাহিত্য কুটিরে, অলংকরণশিল্পী হিসেবে। প্রচ্ছদের রূপকার ছিলেন। তার পর তৈরি করলেন একের পর এক অনবদ্য সব চরিত্র। চিন-ভারত যুদ্ধের আবহে এল বাঁটুল দ্য গ্রেট। এল বাহাদুর বেড়াল, শুকতারার ভেতরে এক পাতা জুড়ে থাকত। এল গোয়েন্দা কৌশিক। শুকতারার প্রছদে তার যাত্রা শুরু। এল ডানপিটে দাদু আর কেমিক্যাল খাঁদু। ‘ছোটদের আসর’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হলেও বহু বাংলা পত্রিকার পৃষ্ঠায় এই দারুণ চরিত্র দুটোকে দেখা গিয়েছে। এ সবের বাইরেও ‘হিরের টায়রা’ একটা পূর্ণাঙ্গ কমিক স্ট্রিপ। প্রকাশিত হয় ১৯৬৫তে ‘নবকল্লোল’-এ। ‘পটলচাঁদ দ্য ম্যাজিশিয়ন’ বের হয় ১৯৬৯-এ।

বেশিরভাগ চরিত্রের নামে থাকত অনুপ্রাসের সূত্রে হাসির গমক। কী সব নাম! বেঁটে বক্রেশ্বর, পাঁকাল পেলো, গুলে গুণ্ডা, খুনে খ্যাঁদা, বক্সার হেঁপো বক্সি, গুপি গুঁই, মোক্ষদা মল্লিক ইত্যাদি। আর  বিশেষণের বিভীষিকার মধ্যে গোঁজা থাকত হাসির তারাবাজি। হতচ্ছাড়া, হতভাগা, ধেড়ে, হুমদো, বেল্লিক, ছুঁচো, মর্কট ইত্যাদি। একেবারে আগ মার্কা বঙ্গজ শব্দ যাতে যতটা না রাগ ছিটকায় তার চেয়ে বেশি ঝরে হাসির ফুলকি।

একেবারেই চাইতেন না আধুনিকীকরণ হোক। চাইতেন না, ডিজিটালের কেতাদুরস্ত ছোঁয়ায় প্রাণ হারাক তাঁর চরিত্রগুলো। ঠিক যেমনটা চেয়েছিলেন, তেমনভাবেই নিজের তৈরি চরিত্রগুলোকে নিখাদ জায়মান দশার বিশুদ্ধতা সমেত রেখে দিয়ে চলে গেলেন নারায়ণ দেবনাথ। তাঁর চরিত্র তাঁর জীবনসীমার পরেও বিবর্তিত বিবর্ধিত রূপান্তরিত হোক, এটা তো তিনি চাননি। কোনোদিনই চাননি। সেই ইচ্ছেটুকুর যেন মর্যাদাহানি না হয়।

 

spot_img

Related articles

বাংলায় হিংসা ছড়াচ্ছে অমিত মালব্য: পুলিশের দ্বারস্থ তৃণমূল

প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে কোনও রকম অশান্তি হলে তার আঁচ সবার আগে পড়ে বাংলায়। সেই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাত থেকে...

শীতের শহরে ম্যারাথনের উত্তাপ, ভারতীয় সংস্কৃতিতে মজে অলিম্পিক্স পদকজয়ী দৌড়বিদ

শীতের শহরে ম্যারাথনের উত্তাপ। রবিবার ভোরে কলকাতার রাজপথে ম্যারাথনে (World 25K Kolkata)অংশ নেবেন বিশ্বের খ্যতনামা রানাররা। ইতিমধ্যেই শহরে...

হার্দিক-বরুণের দাপটে স্বস্তির জয়, চিন্তা বজায় রাখলেন সূর্য

শনিবার টি২০  বিশ্বকাপের(T20 World Cup) দল ঘোষণা। তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি২০(T20) সিরিজ জিতল টিম ইন্ডিয়া। আহমেদাবাদে...

কবে থেকে ভোটারদের শুনানি: শুক্রেও নিরুত্তর কমিশন!

খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর। অন্যান্য রাজ্যের মতো অতিরিক্ত সময় চায়নি বাংলার নির্বাচন কমিশন (Election Commission)।...