Thursday, May 15, 2025

সরস্বতী পুজোর স্মৃতিচারণঃ “ভাগ্যিস আমরা আমাদের সন্তান নই”

Date:

Share post:

দেবাশিস বিশ্বাস

(ভেটারনারি অফিসার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার)

আজ রাত (Night) থেকে আবার বৃষ্টি (rain) শুরু হল। সরস্বতী পুজো (Saraswati Pujo) না ভেসে যায়। আমাদের বাসাতে অবশ্য আর হয় না। আগে মেয়ে যখন থাকতো তখন প্রতি বছর হত। তারপর মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক (Higher Secondary) পরীক্ষার পর কলকাতায়(Kolkata) পড়তে যাবার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ফ্ল্যাটে হয় এখানে মানে ঝাড়্গ্রামে, দুর্গাপুরে ও সরকারি আবাসনে বিরাট ধুমধাম করে হত।

সে যা হবার হবে। বৃষ্টি (rain) শুরু হতেই সব বাড়ির ছেলে মেয়েদের তাদের মা বাবারা প্রচুর শীত বস্ত্র পরিয়ে দিয়েছেন। এখনকার সব ছেলে মেয়েদের “ঠান্ডার ধাত”, তাদের নাকি অল্পেই ঠান্ডা (cold) লেগে যায়।

আমাদের ছোটবেলায় কিন্তু এত ঠান্ডা (cold) লাগতো না। বৃষ্টি (rain) হলে তাকে ভয় পেতাম না, উপভোগ করতাম। শীতকালে ভিজলে কষ্ট হত, কিন্তু অন্য সময় ভেজার আনন্দ আলাদা। দল বেঁধে ভিজতাম, কাদা মাঠে ফুটবল খেলতাম, গুলি খেলতাম, ডাংগুলি খেলতাম, গায়ে কাদা মাখতাম, কিস্যু হত না, আর হলেই বা কে পাত্তা দিত? আর আমরাই যখন মা বাবা হয়ে গেলাম, আমাদের সন্তানদের “ঠান্ডার ধাত” হয়ে গেল।

আরও পড়ুনঃ Parliament: বেচুবাবু মোদি গঠন করেননি কিছুই, অথচ বিক্রি করেছেন ২৩ টি রাষ্ট্রায়াত্ত সংস্থা

কি অদ্ভুত কথা! বৃষ্টিতে (rain) ভিজলে নাকি গায়ে জল বসে যাবে। এত বোকা বোকা কথাও আমরা বলি। বাইরের জল শরীরে ঢুকতে পারে? মানব শরীরের (human body) মতন ওয়াটার প্রুফ (water proof) আর কিছু আছে? সারা দিন রাত জলে ডুবে বসে থাকলেও এক বিন্দু জল চামড়া দিয়ে শরীরে ঢুকতে পারবে না। ভিজে জামা কাপড়ের জল শরীরে কোনও মতেই ঢুকতে পারবে না। ভিজে জামার জল হাওয়ায় টেনে নেয়, শরীর নয়। ওই ভিজে জামাটা কোনও চেয়ারে বা বাইকে দিয়ে দেন, আরও তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে, কারন জল কি বাইকের ভিতরে ঢুকবে? সমান ভাবে ভেজা মাথার জলও মাথায় ঢোকে না। জল বাতাসে মিশে যায় বাষ্প হয়ে। হ্যাঁ বাষ্প হবার সময় লীন তাপ (latent heat) ত্বক থেকে নেয় বলে একটু ঠাণ্ডা (cold) অনুভব হয়, যেটা এই গরমের দেশে যথেষ্ট আরামদায়ক, এবং ভালোও। অথচ আমরা বোকার মতন বলি যে ভিজে জামার জল শরীরে ঢুকবে, গায়ে ঘাম বসবে ইত্যাদি। দেহ যখন গরম হয়ে যায়, তাকে শীতল করার জন্য দেহ ঘাম তৈরি করে। ঘাম দেখে বোঝা উচিত দেহ নিজেকে ঠান্ডা করতে চাইছে, তখন শরীর ভেজানো ভাল, আর আমরা করি উল্টোটা। ঘাম মুছেদি, তাহলেও ঘাম শুকিয়ে শরীর ঠাণ্ডা হতে পারে না।

আরও পড়ুনঃ উত্তরপ্রদেশে গুলিকাণ্ড: আসাদুদ্দিন ওয়েইসিকে ‘Z’ ক্যাটাগরির নিরাপত্তা দিল কেন্দ্র

আমাদের ছোটবেলায় এসব অপবিজ্ঞান ছিল না, তাই আনন্দ করেছি। আমরা অল্পবিদ্যায় ভয়ঙ্করী, তাই নিজেদের সন্তানদের শৈশব ধ্বংস করে তাকে এক ভীরু কূপমন্ডুক বানাচ্ছি। চুপি চুপি বলি, আমরা কিন্তু খুবই বৃষ্টিতে ভিজতে পছন্দ করি। ভিজে জবজবে হয়ে বাইক চালাই, ভিজে জামা গায়ে শুকিয়ে প্রাকৃতিক AC এর আনন্দ উপভোগ করি। আমার গিন্নি আর মেয়েও প্রচুর ভিজতে পছন্দ করে, শিলা বৃষ্টি হলে শিল কুড়ায় শিশুদের মতন। নাহ কোনও ঠান্ডার ধাত নেই। কখনও ঠান্ডা লাগেনি। তবে হ্যাঁ বৃষ্টিতে (Rain) ভিজলেই খিচুড়ি বেগুনভাজা খেতে মন চায়। তাই খিচুড়ির ধাত আছে আমাদের।

আনন্দ করুন, জীবনকে সিম্পল করুন। একটাই জীবন, শুধু শুধু সাবধান হতে গিয়ে এটাকে বরবাদ করবেন না। আপনার সন্তান যখন বড় হবে, সে পিছন ফিরে দেখবে তার শৈশব কৈশোর বলে কিছু নেই, সবটাই বার্ধক্য। কম বয়সে বার্ধক্য, যৌবনে বার্ধক্য।

ভাগ্যিস আমরা আমাদের সন্তান নই!

 

spot_img

Related articles

বাজার থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ! রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের পরীক্ষায় ডাহা ফেল ৫১ জীবনদায়ী ওষুধ

রাজ্যের বাজারে ফের মিলল জাল ও নিম্নমানের ওষুধের হদিশ। রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের সাম্প্রতিক নমুনা পরীক্ষায় গুণমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ...

অ্যাক্রোপলিস মলে মাতৃত্বের জাদুতে মাতোয়ারা শহর, বিশেষ দিনে সম্মানিত হলেন মা ও সন্তানরা

“মা” শব্দটি শুধু একটিমাত্র ডাক নয়—এ এক অনুভব, এক শক্তি। সেই মাতৃত্বের জাদুকেই সম্মান জানিয়ে মাতৃ দিবস উপলক্ষে...

চেন্নাইকে টেক্কা বাংলার! মৃত্যুর মুখ থেকে রুক্মিণীকে ফিরিয়ে আনল হাওড়ার হাসপাতাল

‘উন্নত চিকিৎসা মানেই দক্ষিণ ভারত’— এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন উদাহরণ তৈরি করল হাওড়ার নারায়ণা হাসপাতাল। বাইকের ধাক্কায়...

মরণোত্তর অঙ্গদানে অনন্য দৃষ্টান্ত! চার জনকে নতুন জীবন দিলেন জয়েশ 

মৃত্যুর পরেও চারটি প্রাণে জীবনপ্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন দমদমের কাশিপুরের যুবক জয়েশ লক্ষ্মীশঙ্কর জয়সওয়াল। মাত্র ২৫ বছর বয়সে...