কাঁথি হারলেই সব শেষ! কুণাল যেতেই আরও মরিয়া হয়ে উঠেছে শুভেন্দু

'‘ঘরের ছেলেকে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে আশীর্বাদ করবেন। কাঁথিতে পদ্মফুলকে জেতাতেই হবে। নইলে আমি গোটা রাজ্যে লড়াই করব কী ভাবে!’'

আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের ১০৮টি পৌরসভার সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতেও নির্বাচন। একটি সময়ে এই কাঁথিকে অধিকারীদের গড় বলা হতো। যদিও সময়ের সঙ্গে বদলেছে রাজনীতির গতিপথ। অধিকারীরা গেরুয়া শিবিরে গা ভাসাতেই বদলে গিয়েছে অঙ্ক। কাঁথি গড়ে মিথ ভেঙেছে অধিকারীদের। তাই কাঁথি পৌরসভা ভোট এবার নজর কাড়ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আরও পড়ুন:প্রকল্প শুরুই আগেই দেউচা-পাঁচামির ২২২জনকে চাকরি দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

সম্প্রতি, তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ টানা দুদিন কাঁথিতে প্রচারে ঝড় তোলায় খেলা আরও জমে গিয়েছে। কুণাল কাঁথিতে পা রাখতে অধিকারীদের হাড়ে কাঁপুনি ধরেছে, তা শুভেন্দু অধিকারীর কথাতেই স্পষ্ট। এবার অধিকারী পরিবার থেকে পৌরভোটে কেউ টিকিট না পেলেও কাঁথি ছেড়ে নড়ছেন না রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।

কাঁথির পুরভোটের লড়াই যে তাঁর কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই, প্রচারে বেরিয়ে সেই বার্তাই দিচ্ছেন বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। কাঁথি পুরভোটে হারের আশঙ্কা থেকে রাজনৈতিক অস্তিত্বরক্ষার লড়াইয়ে কার্যত চাপে পড়ে কাঁথিবাসীর সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন শুভেন্দু। তাঁর কাতর আর্জি, ‘‘ঘরের ছেলেকে সম্মান রক্ষার লড়াইয়ে আশীর্বাদ করবেন। কাঁথিতে পদ্মফুলকে জেতাতেই হবে। নইলে আমি গোটা রাজ্যে লড়াই করব কী ভাবে!’’

কাঁথি পুরভোটে তৃণমূল প্রার্থী সুপ্রকাশ গিরি সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, শুভেন্দু বুঝে গিয়েছেন কাঁথিতে বিজেপির পরাজয় নিশ্চিত। তাই নিজের ও পরিবারের রাজনৈতিক অস্তিত্বরক্ষা করতে কাঁথিতে ঘুরে ঘুরে মানুষের হাতেপায়ে ধরছেন। ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু কাঁথির মানুষ বোকা নয়, শুভেন্দু ও তাঁর পরিবারের কীর্তিকলাপ সকলে জানে। মানুষ বেইমান ও কাঁথির দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জবাব দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের সঙ্গে থাকবে। শুভেন্দুর কথায় কেউ ভুলবে না, অধিকারীরা নিজেদের বুথেও হারবে। যারা একটি অনাথ আশ্রমকে অন্যায়ভাবে দখল করে গ্যারেজ বানিয়ে নেয়, কাঁথির মানুষ তাদের ক্ষমা করবে না।

পটাশপুরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলায় পুর-নির্বাচনী কমিটির অন্যতম সদস্য উত্তম বারিক বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে অনেকে শুভেন্দুর কথা শুনে ভুল করেছেন। তবে পুরসভায় উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে কাঁথির মানুষ এ বার আর বিরোধী দলনেতার ফাঁদে পা দেবেন না, সেটা উনি ভাল করেই বুঝতে পেরেছেন। তাই নিজের কষ্টের কথা সকলকে বলে বেড়াচ্ছেন।”

এর আগে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ কাঁথির বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করে শুভেন্দু অধিকারীর মুখে ঝামা ঘষে দেন। কাঁথির বুকে দাঁড়িয়ে নব্য বিজেপি নেতাকে ধুয়ে দিয়ে কুণাল বলেন, “অধিকারী প্রাইভেট লিমিটেড এতদিন শুধু নিজেদের উন্নয়ন করেছে। এবার তৃণমূলের নেতৃত্বে আদর্শ শহর হবে কাঁথি।”

শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে ইঙ্গিত করে কুণাল বলেন, “ঘোড়ার ডিমের চেয়ারম্যান ছিল ও। হারবে বলে দাঁড়ায়নি। বিদায়ী চেয়ারম্যান যেখানে মানুষের মুখোমুখি হতে পারে না, তার দলের ভোট চাওয়ার কোনও নৈতিক অধিকার নেই। মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলকে সমর্থন করবেন।” আদি বিজেপি কর্মীদের কেন তৎকাল বিজেপির বিরোধিতা করা উচিত, তারও ব্যাখ্যা দেন কুণাল।

একই সঙ্গে কুণাল দাবি করেন, শুভেন্দু তাঁর বাবা শিশির অধিকারীকেই ঈর্ষা করেন, তিনি আবার কাঁথির মানুষের কীভাবে ভালো চাইবেন। শুভেন্দু বরাবরই স্বার্থপর সেটা বোঝাতে কুণাল বলেন, “২০০৯ সালে মমতাদি যখন শিশিরদাকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করছিলেন, তখন বাবাকে বাদ দিয়ে নিজে মন্ত্রী হওয়ার জেদ ধরেছিল শুভেন্দু। নিজে মন্ত্রী হয়নি বলে বাবার শপথ বয়কট করে কলকাতা ফিরে যায়। শেষে শিশিরদা তড়িঘড়ি দিব্যেন্দুকে দিল্লি আনিয়ে শপথে রেখেছিলেন। যে ক্ষমতার জন্য বাবাকে হিংসে করে, তার আবার বড়বড় কথা!”

Previous articleরাজ্যের পাঠানো ফাইল ফেরালেন রাজ্যপাল, চাইলেন আর্থিক মঞ্জুরি সংক্রান্ত ফাইলের তথ্য
Next articleকেষ্ট থেকে অনুব্রত হয়ে ওঠার আত্মকাহিনী নিয়ে প্রকাশিত বই “খেলা হবে”