Saturday, November 15, 2025

আগে পাওনা মেটান, জ্বালানি কর নেবে না রাজ্য: মোদির মিথ্যাচারের জবাব দিল তৃণমূল

Date:

বৈঠক ডাকা হয়েছিল করোনা মহামারির চতুর্থ ঢেউ নিয়ে আগাম সতর্কতার জন্য। কিন্তু সেই বৈঠকেই সুকৌশলে পেট্রোল,ডিজেলের-সহ জ্বালানির ক্রমাগত দামবৃদ্ধি নিয়ে কার্যত অবিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের অস্বস্তিতে ফেলার প্রয়াস। পেট্রোল-ডিজেলের উপরে কর না কমানোর জন্য মহারাষ্ট্র, কেরলের মতো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের নামও নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি অবিলম্বে পেট্রোল-ডিজেলের উপর থেকে কর কমানোর জন্য রাজ্যগুলিকে বার্তা দেন।

আর পেট্রল-ডিজেলের দাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কৌশলী বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন, তাঁর সরকার চেয়েছিল পেট্রল-ডিজেলের উপরে রাজস্বের আধাআধি ভাগ হোক কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে। সেটা না মেনে ৭৫ শতাংশ রাজস্বই কেন্দ্র নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মমতা বলেন, কেন্দ্র বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে উদারতা দেখালেও বিরোধীদের হাতে থাকা রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিমাতৃসূলভ আচরণ করছে।

মুখ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরই মোদিকে নিশানা করে কেন্দ্রকে তুলোধনা করতে আসরে নামে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। বুধবার দলীয় দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে মোদি সরকারের মুখোশ খুলে দেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ ও রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার।

সাংবাদিক বৈঠক থেকে কুণাল ঘোষ মোদিকে সরাসরি তোপ দেগে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বলব মিথ্যে কথা বলা বন্ধ করুন’। তাঁর কথায়, ‘প্রধানমন্ত্রী আজ যেটা করলেন, সেটা কোনও বৈঠক হতে পারে না। বৈঠকের নামে উনি মন কি বাত করেছেন। ভদ্রলোক কোনওদিন সাংবাদিক বৈঠক করেননি। কারও কথা শোনেনি। উনি আজ বৈঠকের নামে একতরফাভাবে প্রচারের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নির্ধারিত সূচির বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যে কথা বলেছেন। উনি নিজের সরকারের অপদার্থতার দায়ভার রাজ্যগুলির ওপর চাপিয়েছেন। ওনার বক্তব্যে বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ আরও বাড়ল। কেন্দ্রের কাছে এ রাজ্যের ৯৮ হাজার কোটি টাকা প্রাপ্য, তা স্কিম ধরে ধরে জানানো হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে পাওনা মিটিয়ে দিচ্ছে। আর এ রাজ্যে বিজেপি বিরোধী সরকার চলছে বলে বাংলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অবিলম্বে রাজ্যের বকেয়া মেটানো হোক।’

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের একের পর এক বঞ্চনার খতিয়ান তুলে ধরে কুণাল ঘোষ দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী দাম বাড়াচ্ছেন, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা ভেবে দাম কমাচ্ছেন। কুণাল বলেন, ‘কেন্দ্রেই কাছে রাজ্যের ৯৮ হাজার কোটি টাকা বকেয়া। এটা বাংলার সাধারণ মানুষের টাকা। যা দিয়ে বাংলার উন্নয়ন করা যেত। বিপুল ঋণ মাথায় নিয়ে সরকারে এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কিন্তু জিনিসের দাম বাড়তে দেননি। টোল টাক্স কমিয়েছেন।”

এদিন কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দিয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বলছি, রাজ্যের পাওনা ৯৮ হাজার কোটি টাকা পেলে আগামী ৫ বছর রাজ্য পেট্রোল-ডিজেলের ওপর কোনও কর নেবে না। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিকে প্রাপের বেশি টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। এই মুহূর্তে কেন্দ্র পেট্রোলে ২৫% কর বেশি নিচ্ছে। ডিজেলে ৫৪% বেশি নিচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে মোদি সরকার ১৭ লক্ষ ৩১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা তুলেছে এখনও পর্যন্ত। এটা ঘুরিয়ে দেশের মানুষের ওপর চাপানো হয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হবে। ৩০ এপ্রিল ছাত্র তৃণমূল পরিষদ মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে মিছিল করবে।’

কুণাল ঘোষের পাশাপাশি তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকারও তথ্য তুলে ধরে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন। জাতীয়স্তরের বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন সামনে এনে
জহর সরকার বলেন, ‘২০২০ -২১ অর্থবর্ষে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা তুলেছে কেন্দ্র। ২১- ২২-এর হিসেব দেয়নি, কিন্তু ৪ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি তুলেছে মোদি সরকার। আরটিআই বলছে, তিনবছরে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি তুলেছে। এটাকে মুনাফা হিসেবে দেখছে কেন্দ্র। করোনার সময় ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা কর্পোরেট হাউসকে দিয়েছে। কিন্তু কটা শিল্প আনতে পেরেছে। ৫ লক্ষ ৭৯ কোটি টাকা ছাড় দিয়েছে।
বিজেপি শাসিত গুজরাত কর্ণাটককে ভরিয়ে দিচ্ছে। বঞ্চিত বাংলা-সহ অবিজেপি রাজ্যগুলি। প্রধানমন্ত্রী বৈষম্য তৈরির চেষ্টা করছেন। মোদিজীকে কে বোঝাবে, এভাবে দাম বাড়তে থাকলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। আমি চাকরি করার সময়ও বোঝাতে পারিনি।”

উল্লেখ্য, পেট্রোল-ডিজেলের লাগাতার ও আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির জন্য বরাবর বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে৷ উত্তর প্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশের পরই লাগাতার বেড়েছে পেট্রোল- ডিজেলের দাম৷ এ দিনের বৈঠকে কৌশলে প্রধানমন্ত্রী পেট্রোল-ডিজেলের চড়া দামের দায় বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির উপরেই চাপিয়ে দিলেন। অথচ, এই নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং তাঁর দল বিজেপি কেন্দ্রের বিরোধী আসনে ছিল, তখন তিনি পেট্রোল-ডিজেলের দাম নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্র সরকারের সমালোচনায় সরব ছিলেন। আর এখন নিজের ব্যর্থতার দায়ভার চাপাচ্ছেন রাজ্যগুলির উপর, কিন্তু রাজ্যের প্রাপ্য পাওনা মেটাচ্ছে না কেন্দ্রের মোদি সরকার। এদিন তারই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দলের সাংসদ, নেতারা।

আরও পড়ুন- দুর্নীতি-দুষ্কর্মে রং না দেখে কড়া পদক্ষেপ: দল-প্রশাসনকে একযোগে কড়া বার্তা মমতার

 

 

 

Related articles

রবীন্দ্র সরোবরের ছয় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি: সম্পূর্ণ আইনি পথে কর্পোরেশন

প্রায় পাঁচ দশক পর রাবীন্দ্র সরোবর চত্বরে অবস্থিত ছ’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাড়ার চুক্তি করল কলকাতা...

বিহারে কমিশনের কারচুপি, তোপ অখিলেশের: ঘুরিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ ওমরের

বিহারে এসআইআর প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস-আরজেডির (RJD) মহাজোটের এটাই ছিল বিহার নির্বাচনের মূল...

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে: ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট JD(U)-এর!

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৮৯ আসনে জয়ী। নীতীশ কুমারের জেডিইউ জিতেছে ৮৫ টি আসন।...

জাদুসম্রাটের বাড়িতে বিয়ের আসর! বিজ্ঞাপন দেখে পাত্র পছন্দ মৌবনীর

জিনা বন্দ্যোপাধ্যায় জনে জনে বার্তা রুটি গেল ক্রমে, বিয়ে করছেন মৌবনী শীতের মরশুমে! মেয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন পিসি সরকার, সেখান থেকেই পাত্র...
Exit mobile version