৮০ ফুট নীচে কুয়োয় আটকে একরত্তি, ১১৭ ঘণ্টা কথা বললেন অনিল !

টানা প্রায় পাঁচ দিন ধরে উপুড় হয়ে শুয়ে ৮০ ফুট কুয়োয় পড়ে যাওয়া কিশোরকে বলে যাচ্ছিলেন রাহুল ওঠো… রাহুল জেগে আছ?

জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ)-র সদস্য বি অনিল কুমার অসাধ্য সাধন করলেন। টানা প্রায় পাঁচ দিন ধরে উপুড় হয়ে শুয়ে ৮০ ফুট কুয়োয় পড়ে যাওয়া কিশোরকে বলে যাচ্ছিলেন রাহুল ওঠো… রাহুল জেগে আছ?… রাহুল, তোমার জন্য কলা এনেছি…।

আশ্চর্যের এই যে বছর এগারোর রাহুল কানে শোনে না, কথাও বলতে পারে না। তবু দমে যাননি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ওই কর্মী । সব জেনেও তিনি অনবরত রাহুলের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন, তাকে জাগিয়ে রাখার জন্য। এবং আশ্চর্যজনক ভাবে তার সেই শব্দের কম্পনে মাঝেমধ্যেই সাড়া দিয়েছে ১১ বছরের রাহুল।
রাহুলের অবস্থান জানতে দড়ির সাহায্যে কুয়োর ভিতের ক্যামেরা পাঠানো হয়েছিল। অনিল বলেন, সেই ক্যামেরার মাধ্যমে দেখার চেষ্টা করছিলাম, রাহুল ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে। প্রথমে মনে একটা ভয় তৈরি হয়েছিল যে, ছেলেটি বেঁচে আছে তো? কিন্তু ক্যামেরায় ওর নড়াচড়া দেখার পরই মনে জোর পেয়েছিলাম। নিজেকে বার বার বলছিলাম, বাচ্চাটিকে বাঁচাতেই হবে।তাঁর কথায়, “সে কারণেই বাচ্চাটির পরিস্থিতি দেখে কান্না পেলেও কাঁদতে পারিনি। কেন না, ভেঙে পড়া আমাদের কাজ নয়। যে করেই হোক প্রাণ বাঁচানোই আমাদের কাজ। তাই যত বারই রাহুল আমার ডাকে সাড়া দিয়েছে, গলা বুজে এলেও কাঁদতে পারিনি।”
তাঁর কথায়, “রাহুলকে উদ্ধারের জন্য যখন ড্রিল মেশিন দিয়ে বড় বড় পাথর কাটা হচ্ছিল, তখন তার হৃদ্‌স্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল। শ্বাসপ্রশ্বাস জোরে জোরে চলছিল। চিৎকার করে সেই ড্রিল বন্ধ করতে বলেছিলাম। কারণ ভয়ে ছেলেটির যে কোনও মুহূর্তে হার্টফেল হতে পারত। তাঁকে অভয় দেওয়ার চেষ্টা করে গিয়েছি অনবরত। তার ভরসা এবং বিশ্বাস জুগিয়েছি প্রথমে। ছেলেটি কাঁদছিল। ওর কাছে কলা এবং এক প্যাকেট ফলের রস পাঠিয়েছিলাম। খেয়েওছিল সে।
তাঁর কথায়, “রাহুলকে দেড় ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে দিইনি। আমার লক্ষ্য ছিল, যে ভাবেই হোক ওকে জাগিয়ে রাখতে হবে।
শুক্রবার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত টানা বুকের উপর ভর দিয়ে শুয়ে কুয়োর ভিতরে থাকা ছেলেটির শারীরিক অবস্থার উপর এভাবেই নজর রাখছিলেন অনিল।

Previous articleঅগ্নিপথ সেনায় নিয়োগে আবেদনের বয়স ২১ থেকে বাড়িয়ে ২৩ করল কেন্দ্র
Next articleMorning news : ব্রেকফাস্ট নিউজ