বাংলার মুকুটে এক নতুন পালক যুক্ত হয়েছে। ইউনেস্কো বাংলার দুর্গাপুজোকে “হেরিটেজ” তকমা দিয়েছে। ২০২১ সালে ডিসেম্বর মাসে ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি হিসেবে দুর্গাপুজোকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জানেন কী বাংলার দুর্গাপুজোর এই খেতাব সহজে মেলেনি!দুর্গাপুজোকে আন্তর্জাতিক দরবারে তুলে ধরার জন্য রয়েছে এক বাঙালি নারীর নিরলস গবেষণা।

তিনি তপতী গুহ ঠাকুরতা। তার নিরলস গবেষণা বিশ্ব আঙিনায় দুর্গাপুজোকে “হেরিটেজ” হিসাবে তুলে ধরেছে। ২০০৩ সাল থেকে শুরু হয় তার কর্মযজ্ঞ।২০১৮-১৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রক থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি থেকে সামান্য গ্রান্ট নিয়ে তিনি এই গবেষণা শুরু করেন। এরপর তিনি ইউনেস্কোর একটি ফর্ম ফিলাপ করেন। ২০টি ছবি ও ১টি ভিডিও দিয়ে তিনি ইউনেস্কোর ফর্ম ফিলাপ করেছিলেন। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বীকৃতি পায় তার গবেষণা পত্র। তারপরেই, আবহমান অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিভাগে স্বীকৃতি পায় বাংলার দুর্গাপুজো।

বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে তপতীকে সম্বর্ধনা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতি সম্পর্কে খোদ গবেষক জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় যা প্রচারিত হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। কারণ, তার এই গবেষণার সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত আছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি শিল্পী থেকে শুরু করে যারা মন্ডপ তৈরি করেন, যারা থিম নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন, তাদের প্রত্যেকের কথা উল্লেখ করেন। তপতী বলেন, এই স্বীকৃতি মুখ্যমন্ত্রী চুরি করেছেন বলে যা প্রচার হচ্ছে সেটাও ঠিক নয়। উনি আমাদের গবেষণার কথা জানার পর যোগোযোগ করোন। আমরা আমাদের কাজ করেছি মুখ্যমন্ত্রী ও তার সরকার পুরো বিষয়টিকে প্রশাসনিক স্তরে একটা অন্য রূপ দিয়েছেন। এমনকি তিনি জানান যে কোনওদিনই তিনি প্রেসিডেন্সিতে অধ্যাপনা করেননি।
মূলত ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে পছন্দ করেন তপতী।তিনি অতীতের দুর্গাপুজোর সঙ্গে বর্তমান দুর্গাপুজোর সংস্কৃতির বিশ্লেষণ করে একটি বইও লেখেন। তার লেখা “নেম অফ দ্য গডেস: দুর্গাপুজাস অফ কনটেম্পোরারি কলকাতা” বইটি প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। এই বইটিতে তিনি আলোচনা করেছেন কিভাবে অতীতের সাথে বর্তমানে দুর্গাপুজোর ধারা ও সংস্কৃতি পরিবর্তিত হয়েছে।

তপতী গুহ ঠাকুরতার মতে গত দুই দশকে কলকাতার দূর্গাপুজোর ভাবনা চিন্তায় অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে। আগের থেকে বর্তমানে শিল্পীদের জন্য বরাদ্দ বেড়েছে অনেকটাই। শিল্পীর শিল্প সত্তাকে প্রদর্শন করার একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে দুর্গাপুজো। এছাড়াও নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা এখন ফুটে উঠছে দুর্গাপুজোর থিমের মাধ্যমে। দুর্গাপুজো শুধু কোনও ধর্মীয় রীতি নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কিছু দিকও।