সুমন করাতি, হুগলি

সাবেকি বনাম বারোয়ারির লড়াইটা আজ নতুন নয় । পুজোর (Puja) কটা দিন সেরার সেরা লড়াই চলে থিমের পুজোতে। তবে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য আলাদা। কলকাতার (Kolkata) সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলার পুজোতেও বাড়ছে ভিড়। তবে উত্তরপাড়ার (Uttarpara) চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজোতে আলাদা এক বিশেষত্ব রয়েছে। এই পুজো ২৭২ বছরে পা দিল। জানা যায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের যাতায়াত ছিল এই বাড়ির পুজোতে।পরিবার সূত্রে জানা যায় রামনিধি চট্টোপাধ্যায় (Ramnidhi Chatterjee) ছিলেন রায় চৌধুরীদের জামাই। বিবাহসূত্রে যৌতুক হিসেবে তিনি উত্তরপাড়া গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে সম্পত্তি লাভ করেন। তাঁর হাত ধরেই উত্তরপাড়া চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে প্রথম পুজো শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ২৭০ বছর আগে। আগে অবশ্য চন্ডীতলার গরলগাছার বাড়িতে দুর্গাপুজো হত।


এই বাড়ির পুজো নিয়ে রয়েছে নানা কাহিনী। পরিবার সূত্রে জানা যায় জ্যোতি বসু প্রফুল্ল সেন রাও এসেছেন এই চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে। কাজী নজরুল ইসলাম একবার অষ্টমীর ভোগ খেয়েছিলেন বলেও শোনা যায়। আগে পুজোর ভোগ নিবেদন করা হত ভাত, ডাল, শুক্ত, মোচার ঘন্ট , খিচুরি , এবং অস্টমীতে এঁচোড়ের ডালনা ছিল স্পেশাল মেনু। করোনা পরবর্তীকালে শুধু খিচুরি নিবেদন করা হয়। আগে নবমীতে আত্মীয় পরিজনরা পাত পেড়ে খাওয়া দাওয়া করতেন। প্রায় তিনশ লোকের আয়োজন হত। তবে এই বছর এবার নবমীর দিন মাছ মাংস দিয়ে তৈরি ভোজ ফিরতে চলেছে চট্টোপাধ্যায় বাড়িতে। চিতুই দিয়ে পায়েস পিঠে কলার বড়া হল এই বাড়ির পুজোর ভোগে বিশেষত্ব। দশমীর দিন ঠাকুর বরনের পর সিঁদুর খেলা আর কাঁধে করে বাবু ঘাটে নিয়ে গিয়ে ঠাকুর বিসর্জন, এই রীতি অপরিবর্তনীয় । বিসর্জনের পর চন্ডীর ঘট নিয়ে আসা হয় ঠাকুর দালানে। ঠাকুর বসার স্থান আজও মাটির। সেখানেই সারা বছর ধরে চন্ডী ঘট পুজো হয়। এই বংশের উত্তম পুরুষ ছিলেন অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় স্বদেশীদের সভা হতো তার বাড়িতে।অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামী সে সময় বাড়িতে আসতেন। গানের আসর, নাটক, বৈঠকি আড্ডা সবটাই এখানকার পুজোর বৈশিষ্ট্য ।
