ফুটবলে জাগে বিশ্ব, উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

আর্জেন্টিনা হেরেছে সৌদির কাছে। পেনাল্টি থেকে মেসির করা গোলে এগিয়ে গিয়েও বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম‍্যাচে দু’দুটো গোল হজম ক’রে মাথা নিচু করে মাঠ ছেড়েছে। কাতারে শুরুতেই ঘটেছে এই বিরাট অঘটন। ল‍্যাটিন আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ঘরানার অন‍্যতম ধারক ও বাহক দু’বারের বিশ্ব
চ‍্যাম্পিয়ন একটা দল এশিয়ার একটা দলের কাছে হারছে এটা কিন্তু ফুটবলের পক্ষে ভালো খবর। বিশ্ব ফুটবলে মাত্র দু’তিনটি দলের কর্তৃত্ব ও একচেটিয়া আধিপত্য বহুদিন আগেই খর্ব হয়েছে। এখন তো প্রচুর অঘটন ঘটছে এবং প্রায়শই। ফুটবলে এশিয়ার উদীয়মান সূর্য হিসেবে জাপানের সঙ্গে সৌদি আরবের নামও এখন থেকে উল্লেখ করতে হবে। বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতি থেকে সরে এসে ফুটবলকে যদি শুধুমাত্র ফুটবল দিয়েই বিচার করতে হয়, যদি খেলার মান ও উৎকর্ষতাই একমাত্র বিচার্য হয় তাহলে অকপটে স্বীকার করতেই হয় যে আর্জেন্টিনার থেকে অনেক ভালো ফুটবল খেলেছে সৌদি। তাদের প্রথম গোলটা ভালোই, আর দ্বিতীয়টা তো অসাধারণ। তেমনি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন।

এই অঘটন নিয়ে মিডিয়ায় জমে উঠেছে চর্চা। উঠছে চায়ের কাপে তুফান। বাঘ নিরীহ হরিণের ঘাড় কামড়ে নিশ্চিন্তে বসে আছে ঘন অরণ‍্যে এ ছবি তো হামেশাই দেখা যায়। কিন্তু ন‍্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ‍্যানেলে কখনো কখনও এই অদ্ভুত দৃশ্যও দেখায় যে বাঘ রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ভয়ঙ্কর কাতরাচ্ছে, হরিণের এবড়ো-খেবড়ো শিং ঢুকে গেছে বাঘের পেটে। এই দৃশ্য দেখতে শুধু যে ভালো লাগে তা-ই নয়, অনেকেরই বেঁচে থাকার স্পৃহা বেড়ে যায়। ব‍্যতিক্রমও তো ভারসাম্যের অন‍্যতম রক্ষাকবচ। অঘটনও তাই-ই। তথাকথিত ছোট দলের জয় অনেকেই কামনা করেন ফলাফলের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায়। তাই বলতেই হয় জয় সৌদি, জয় এশিয়া। ছোট দলগুলো যদি বড় দলগুলোর ওপর পাল্টা আধিপত্য বিস্তার করে তবেই তো এগোবে ফুটবল। বদলাবে ইতিহাস।

দুর্ঘটনা নয়, ফুটবলে অঘটন দেখতে চান বহু মানুষ। যে কোনো খেলাই বেঁচে থাকে অঘটনের রৌদ্রছায়ায়।
মালিক তার কর্মচারীর চুলের মুঠি তো ধরবেই, কিন্তু কর্মচারীও যেন মাঝেমধ‍্যে মালিকের হাত মুচড়ে দেওয়ার দুঃসাহস দেখায়, তবেই না ভারসাম্য বজায় থাকে! ফুটবল ভক্তদের এই সমস্ত অসামান্য চর্চার মধ‍্যেই ঘটে গেছে আরও একটি বড়ো অঘটন। দোর্দন্ডপ্রতাপ, চার বারের বিশ্ব চ‍্যাম্পিয়ন জার্মানিকে তাদের প্রথম ম‍্যাচেই পরাস্ত করেছে জাপান।

বলতেই হয় জয় এশিয়া। দৈত্যসংহার দেখতে কে না পছন্দ করে! জার্মানি জিতবে ভেবেই তো খেলা দেখতে বসা। কিন্তু জাপান জিতলে সেটা অঘটন হলেও কোটি কোটি ফুটবলভক্তদের কাছে এই জয় কিন্তু বিশাল বার্তাবহ। খেলার শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো যে জাপান সহজে হার মানবে না। এগারো জন জাপানি বুক চিতিয়ে প্রাণপনে লড়ে যাচ্ছিলো দেশের জন্য। খেলছিল ভয়ডরহীন ফুটবল।তথাকথিত বড় দলের ভয়ে কুঁকড়ে যায় নি। বিশেষ ক’রে নিজেদের ডান প্রান্ত ধরে
( জার্মানির বাঁ-প্রান্ত ) জাপানের বিদ‍্যুৎগতির ঝোড়ো আক্রমণগুলো সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলো জার্মানি। প্রথমে বিতর্কিত একটা পেনাল্টিতে গোল খেয়ে জেতার জন্য আরও মরিয়া হয়ে গোলশোধ তো করলোই, ম‍্যাচটাও জিতলো। অসাধারণ জাপান। অনবদ্য।
আবার জিতলো এশিয়া।

এবারের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকেই দেখা গেল এশিয়ার দেশগুলো ইউরোপ ও ল‍্যাটিন আমেরিকার চোখে চোখ রেখে ভয়ডরহীন ফুটবল খেলছে। বিশ্ব ফুটবলের পক্ষে খুবই স্বাস্থ্যকর এই সঙ্কেত। এতে ফুটবল আরও এগোবে, আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। মূলত প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবলের চমৎকার প্রয়োগ দেখাচ্ছে এশিয়ার দেশগুলো। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্কিল, শক্তি ও গতির চমৎকার ভারসাম্য। অসাধ‍্যসাধনের স্বাদ তারা ইতিমধ্যেই একাধিকবার পেয়ে গেছে। সবমিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে আর খুব বেশি দিন হয়তো অপেক্ষা করতে হবে না। অদূর ভবিষ্যতে এশিয়ার দেশগুলোই নিয়ন্ত্রণ করবে ফুটবলবিশ্বকে। কাতারের দেওয়াল লিখন তারই স্পষ্ট সঙ্কেত দিচ্ছে।
পরিশেষে শেষ ষোলোর চরম উত্তেজক পর্বের ঠিক আগের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ম‍্যাচের ফলাফল :

স্পেন ৭— ০ কোস্টারিকা,
পর্তুগাল ৩ — ২ ঘানা,
ব্রাজিল ২ — ০ সার্বিয়া,
পোল‍্যান্ড ২ — ০ সৌদি,
ফ্রান্স ২ — ১ ডেনমার্ক,
আর্জেন্টিনা ২ — ০ মেক্সিকো,
স্পেন ১ — ১ জার্মানি,
ক‍্যামেরুন ৩ — ৩ সার্বিয়া,
ব্রাজিল ১ — ০ সুইৎজারল‍্যান্ড,
পর্তুগাল ২ — ০ উরুগুয়ে
আর হ‍্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি
কাতার-বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নিলো জার্মানি।

আরও পড়ুন- যত্রতত্র জঞ্জালের স্তূপ! সকাল থেকেই শুরু দিল্লি পুর নিগমের নির্বাচন

 

 

 

Previous articleযত্রতত্র জঞ্জালের স্তূপ! সকাল থেকেই শুরু দিল্লি পুর নিগমের নির্বাচন
Next articleসিঁড়ি থেকে সটান নীচে পড়ে গেলেন পুতিন! কেমন আছেন তিনি?