‘ডমিনিক দাদা’ নেই! মানতে পারছে না সুন্দরবন, শূন্যস্থান পূরণে উদ্যোগী রাজ্য  

২০০৮ সালে ভারতে পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন ডমিনিক। পেশায় সাংবাদিক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক ডমিনিক লাপিয়েরের 'দ্য সিটি অফ জয়'-এর পটভূমি ছিল কলকাতা এবং হাওড়া। সেই বইয়ের রয়্যালটির টাকা তিনি খরচ করেছিলেন কলকাতা, হাওড়া ও সুন্দরবনের মানুষের হিতার্থে। তাঁর অর্থ সাহায্যে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দাদের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে চালু হয়েছিল ভাসমান ক্লিনিক।

‘সিটি অব জয়ে’র লেখক ডমিনিক ল্যাপিয়েরের ভারতের প্রতি ভালোবাসার কথা অনেকেরই জানা। ৯১ বছর বয়সে প্রয়াত হন ফরাসি লেখক। রবিবার তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে ফরাসি সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। কলকাতায় রিক্সাওয়ালার কাহিনী তুলে ধরে তাঁর সিটি অব জয় উপন্যাসে তুলে ধরেছিলেন ডমিনিক। লেখককে বড়সড় সাফল্য এনে দিয়েছিল সেই বই। লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রিও হয়েছিল। পরে তাঁর সেই উপন্যাস নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও তৈরি হয়।

ওম পুরি, শাবানা আজমি, প্যাট্রিক সোয়েজ অভিনীত সেই ছবিও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। শুধু তাঁর লেখনিতেই ভারতের কথা ছিল তাই নয়, ভারতের অনেক মানবিক খাতে অনুদানও দিয়েছেন তিনি। ২০০৫ সালে অনুদানের জন্য পাঠক ও সিনেমার দর্শকদের ধন্যবাদ জানান তিনি। ডমিনিক জানিয়েছিলেন, পাঠকরা পাশে ছিলেন বলেই দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত ৯ হাজার শিশুর সেবা করা সম্ভব হয়েছে। প্রায় ১০ লক্ষ যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। তবে ডমিনিকের বেশ কয়েকটি প্রজেক্টকে বিগত কয়েকবছর ধরেই আর্থিক সাহায্য করে আসছে রাজ্য সরকার। শিশুদের জন্য হোম, ১১টিরও বেশি প্রাইমারি স্কুল, ১০টি রিহ্যাব সেন্টার, সুন্দরবনে ৪ টি ভাসমান হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে।

২০০৮ সালে ভারতে পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হন ডমিনিক। পেশায় সাংবাদিক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক ডমিনিক লাপিয়েরের ‘দ্য সিটি অফ জয়’-এর পটভূমি ছিল কলকাতা এবং হাওড়া। সেই বইয়ের রয়্যালটির টাকা তিনি খরচ করেছিলেন কলকাতা, হাওড়া ও সুন্দরবনের মানুষের হিতার্থে। তাঁর অর্থ সাহায্যে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপের বাসিন্দাদের কাছে চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে চালু হয়েছিল ভাসমান ক্লিনিক। এছাড়াও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসায় অকাতরে সাহায্য করেছেন তিনি। পাশাপাশি হাওড়ায় অনাথ ছেলেমেয়েদের স্কুল চালানোর জন্যও প্রভূত অনুদান দেওয়া হয়েছিল। আরও টাকা জোগাড় করতে দেশ-বিদেশ ঘুরতেন তিনি। পরিচিতদের থেকে টাকা চেয়ে আনতেন তিনি। প্যারিসে নিজের বাড়িটাও বেচে দিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে প্রথম কলকাতায় আসেন ডমিনিক। প্রথমে থাকতেন হাও়ডার পিলখানা বস্তিতে ৫ নম্বর বিএল রায় রোডে। এখানে থাকাকালীনই ‘দ্য সিটি অফ জয়’ লেখেন।

তখন থেকে লেখকের সঙ্গী ছিলেন মার্কোস টোপ্পর। তাঁর কথায়, ‘ডমিনিক এত বড় মাপের মানুষ হয়েও একেবারে সাধারণ জীবন কাটাতেন। যে সব প্রতিষ্ঠানকে উনি অনুদান দিতেন, সেখানেই থাকতেন। যা পাওয়া যেত, তাই খেতেন। কোনও দিন হোটেলে থাকতে দেখিনি। পাশপাপাশি আইকর্ড, আশা ভবন, সাদার্ন হেল্প ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি, হাওড়া সাউথ পয়েন্ট-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে তিনি আর্থিক সাহায্য করতেন। আকারে ইঙ্গিতে মার্কোসের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এখন সে সব প্রতিষ্ঠান কেমন চলছে? সাদার্ন হেল্প ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি-র সম্পাদক এমএ ওহাব বলেন, বিদেশ থেকে যাঁরা এখানে কাজ করতে আসেন, তাঁদের সাধারণত কোনও নিজস্ব অ্যাজেন্ডা থাকে। কিন্তু ডমিনিক মানবতার জন্যেই কাজ করেছেন। ছিলেন প্রকৃতই ভারতের শুভাকাঙ্ক্ষী। তিনি জানান, ওঁর আর্থিক সাহায্যে সুন্দরবনের কয়েক লক্ষ মানুষ যক্ষ্মা থেকে সেরে উঠেছেন। ওহাব বলেন, কেউ নাই মনে রাখুক, সুন্দরবনের মানুষ ওঁকে চিরকাল মনে রাখবেন। কত লোকে ফোনে জানতে চাইছেন, ডমিনিক দাদা কি সত্যিই মারা গিয়েছেন?

 

 

Previous articleমরক্কোকে ইতিহাসে পৌঁছনোর কারিগর হাকিমি কে জানেন?
Next articleকুণালের অনুরোধে অরূপের পদক্ষেপ, বিদ্যুৎ সংযোগের ফর্ম বিলি শুরু হলদিয়ার দুই গ্রামে