Wednesday, May 7, 2025

বাধা দিচ্ছে বন্দর, লড়বে রাজ্য! হলদিয়ার বিদ্যুৎহীন গ্রাম আলো দেখবেই, স্পষ্ট জানালেন কুণাল

Date:

Share post:

দীর্ঘ বঞ্চনার পর যখন অসহায় মানুষগুলি আলোর স্বপ্ন দেখছেন, ঠিক তখনই কলকাঠি নাড়া শুরু হয়ে গেল কোনও এক অশুভ শক্তির। রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের কাছে হলদিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিষ্ণুরামচক ও সৌতানপুরে বিদ্যুতের খুঁটি বসানো যাবে না। পাল্টা বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের দাবি, ওই দিয়ে গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়ার যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা চলবে। প্রয়োজনে জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে যতদূর যেতে হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যাবে। আইনি পথে লড়াই হবে। কিন্তু আর অন্ধকারে থাকবেন না গ্রামবাসীরা। আজ, শুক্রবার বিষ্ণুরামচকে গ্রামবাসীদের মধ্যে বিদ্যুৎমন্ত্রীর সেই বার্তা দিতেই হাজির হয়েছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। গ্রামবাসীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগাতে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কুণালের পাল্টা হুঁশিয়ারি, কেন্দ্রীয় বাহিনী বা সিআইএসএফ দিয়ে বিদ্যুৎ দেওয়ার কাজে বাধা মানা হবে না। তৃণমূল নেতৃত্বকে টপকে গ্রামে ঢুকতে হবে বাহিনীকে।

 

এদিন গ্রামবাসীদের মধ্যে সাহস জোগাতে বিষ্ণুরামচকের ভরা গ্রামসভাতে কুণালের ঘোষণা, স্বাধীনতার এতদিন পরেও আপনাদের ঘরে বিদ্যুতের আলো নেই। আপনাদের প্রতি এটা বঞ্চনা, লজ্জার। তবে বিদ্যুৎমন্ত্রীর সক্রিয় পদক্ষেপে যতটা দ্রুত সম্ভব এই গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ফর্ম দিলে শুরু হয়েছে। আপনারা ফর্ম ফিলাপ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দিন। ন্যূনতম খরচে মানুষের বাড়ি বাড়ি বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। এই কাজের জন্য কাউকে একটি নয়া পয়সাও দেবেন না। এটা সরকারের কাজ সরকার করবে। দীর্ঘবান জামানা, তারপর শুভেন্দু আপনাদেরকে শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে। আপনাদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভোট নিয়েছে। কিন্তু কাজ করেনি। এখন গ্রামে বিদ্যুৎ আসবে। এখানে কোনও রাজনীতি নেই। বিদ্যুৎ যেমন তৃণমূল বাড়িতে পৌঁছবে, তেমনি বিজেপি-সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতেও পৌঁছবে। তাই এটা নিয়ে অযথা কেউ রাজনীতি করবেন না, সকলে সহযোগিতা করুন।

এরপরে কুণাল গ্রামবাসীদের জানান, গ্রামে যাতে বিদ্যুৎ না পৌঁছায় তার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ দফতরকে চিঠি দিয়েছে। তারা বলেছে এই দুটি গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়া যাবে না। কিন্তু আপনাদের কাছে বিদ্যুৎ আসবেই। কারণ, সুপ্রিম কোর্টে বলেছে, জমি সংক্রান্ত কোনও জটিলতা থাকলে সে মামলা তার মত চলবে, কিন্তু সেই জমিতে বসবাসকারী কোনও মানুষকে বিদ্যুৎ ও আলো থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। সুতরাং, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। কোনও অপপ্রচারে কান দেবেন না। বিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় ফরম ফিলাপ করুন। মামলা হলে রাজ্য সরকার লড়বে। রাজনীতি হলে আমরা লড়ব। আর যারা বাধা দিচ্ছে তাদের বাড়িগুলো চিহ্নিত করে রাখুন, গ্রামে বিদ্যুৎ ঢুকলে আমি নিজে হাতে প্রথমে সেই বাড়িগুলিতে মিষ্টি নিয়ে যাব। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে এনে প্রথম আলো জ্বালাবো গ্রামে।

প্রসঙ্গত, বন্দর থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে হলদিয়া পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি বঞ্চনার গ্রাম বিষ্ণুরামচক এবং সৌতনপুর। স্বাধীনতার পর থেকে এখনও যেখানে বিদ্যুৎ আসেনি। দীর্ঘ বামজমানা এবং পরবর্তীকালে অধিকারীরাজ, বারবার আবেদন ছিল নিষ্ফলা। অন্ধকারে ডুবে দুই গ্রামের মানুষ। পদক্ষেপ শুরু হয়েছে। আলোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন গ্রামবাসীদের।

গত রবিবার তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের কাছ থেকে বিদ্যুৎহীন দুই গ্রামের মানুষের দুর্দশার কথা শোনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পদক্ষেপ নেন মানবিক বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। বিষ্ণুরামচক এবং সৌতনপুর, গত বুধবার থেকে দুই বিদ্যুৎ না যাওয়া গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য গ্রামবাসীদের কাছে ফর্ম বিলি শুরু হয়েছে। হলদিয়া পুরসভার প্রশাসক স্থানীয় এসডিও ও পুলিশের সমন্বয়ে হলদিয়া টাউনশিপ ফাঁড়ি থেকে ফর্ম সংক্রান্ত কাজ হয়েছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সক্রিয় নজরদারি রাখায় দ্রুততার সঙ্গে কাজ হয়। ফর্ম সংক্রান্ত কাজে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা দলমতনির্বিশেষে মানুষকে সাহায্য করেন। আর তারপরই বন্দর কর্তৃপক্ষ চিঠি দেয় বিদ্যুৎ দফতরে। জানায় এই দুই গ্রামে বিদ্যুৎ আনা যাবে না। পাল্টা বিদ্যুৎমত্রীর দাবি, এই দুই গ্রামের মানুষের স্বার্থে বিদ্যুৎ পৌঁছনোর কাজে কোনও বাধা মানা হবে না।

প্রসঙ্গত, ঘটনা গত রবিবারের। ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে শিল্পনগর হলদিয়ার পুরসভা অঞ্চলে বন্দর থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে বিদ্যুৎহীন দুই গ্রামের দুর্দশার বিষয়টি বিদ্যুৎমন্ত্রীর গোচরে সর্বপ্রথম এনেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। কুণালের আবেদনে সাড়া দিয়ে ছুটির দিনেও কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। হলদিয়া পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যুৎহীন দুটি গ্রামে রবিবারই বিদ্যুৎ দফতরের প্রতিনিধিরা গ্রাম দেখে আসেন। পরদিন অর্থাৎ সোমবার সাতসকালে সেখানে যায় বিদ্যুৎ দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পদস্থ আধিকারিকের নেতৃত্বে টিম। বন্দরের জমি সংক্রান্ত আইনি জটিলতা আছে কিনা সেটা তাঁরা খতিয়ে দেখেন।

ঠিক কীভাবে কুণাল ঘোষের নজরে বিষয়টি আসে? গত শনিবার কাঁথিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার পর রাতেই হলদিয়ার ফ্ল্যাটে আসেন কুণাল। রবিবার সকালে প্রাতভ্রমণে বেরিয়ে হলদিয়ায় চায়ের আড্ডা থেকে স্থানীয় যুবকদের কাছে বঞ্চনার কথা শুনে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ তখনই ছুটে যান ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে। দেখেন বন্দর থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বের এই ওয়ার্ডের দুটি গ্রাম বিষ্ণুরামচক এবং সৌতনপুরে বিদ্যুতের খুঁটি ঢোকেনি। স্বাধীনতার এতবছর পরেও অন্ধকারে ডুবে গ্রামবাসীরা। দেখে অবাকই হলেন কুণাল।

বিন্দুমাত্র দেরি না করে গ্রামে দাঁড়িয়েই কুণাল বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের কাছে ফোনে বিষয়টি তুলে ধরেন। ব্যাস, ম্যাজিকের মতো কাজ। রবিবার ছুটির দিনেও কুণালের অনুরোধে অরূপ বিশ্বাস তৎপরতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেন। কয়েক ঘন্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে গ্রামবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। গ্রামে এসেও কথা বলে যান সংশ্লিষ্ট দফতরের দুই আধিকারিক। শুধু তাই নয়, ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রামে ইন্সপেকশনও করা হয়। তাঁদের রিপোর্ট পাওয়ার পরই বিদ্যুৎমন্ত্রীর নির্দেশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ শুরু।

কুণালের কাছে স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, হলদিয়া শিল্পতালুক হলেও পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ এখনও বিদ্যুতের আলো দেখেননি। স্বাধীনতার এতো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বন্দর থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে কোথাও মাটির কাঁচা রাস্তা, কোথাও আবার আবার অবহেলায় পড়ে রয়েছে অর্ধনির্মিত কংক্রিটের রাস্তা। ভোট আসলেই রাজনৈতিক নেতাদের শুধু প্রতিশ্রুতির বন্যা। এমন অনুন্নয়ন বঞ্চনা এবং অবহেলার জন্য স্থানীয় মানুষজন সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীকে দায়ী করেছেন। একইসঙ্গে পুরসভার এই ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের অনুন্নয়নের জন্য পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ শ্যামল আদকের দিকেও আঙুল তোলেন তাঁরা। কুণালকে হাতের কাছে পেয়ে গ্রামবাসীরা বলতে থাকেন, “দাদা এবার কিছু একটু করুন, আমরা খুব কষ্টে আছি। শুধু ভোটের সময় নেতারা আসে, প্রতিশ্রুতি দেয়। আর ভোট চলে গেলে কেউ ফিরেও তাকায় না।”

কুণাল গ্রামের ভিতর হাঁটতে হাঁটতে সেই দুর্দশার ছবি দেখেন। এবং গ্রামবাসীদের মধ্যে দাঁড়িয়েই বিদ্যুতের জন্য ফোন করেন বিদ্যুৎমন্ত্রীকে। দুই বিদ্যুৎ না যাওয়া গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য গ্রামবাসীদের কাছে ফর্ম বিলি শুরু হয়।

 

 

spot_img

Related articles

পহেলগামে সিঁদুর মোছার বদলা ‘অপারেশন সিন্দুর’! কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ সদ্য স্বামীহারা হিমাংশীর

পহেলগামে নৃশংস জঙ্গি হামলায় সদ্য বিবাহিত স্বামী লেফটেন্যান্ট বিনয় নারওয়ালকে হারিয়েছেন হিমাংশী। 'অপারেশন সিন্দুর'কে (Operation Sindur) তাই পহেলগাম...

ধরমশালা থেকে সরতে পারে পঞ্জাব কিংস বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ

ভারত – পাকিস্তান(INDvPAK) অশান্তির জেরে এবার বদল হতে পারে আইপিএলের(IPL) ভেন্যুও। আগামী ১১ মে পঞ্জাব কিংস বনাম মুম্বই...

রাষ্ট্রসঙ্ঘের দফতরের বাইরে পাক মিসাইল! প্রত্যাঘাতে ১১ ভারতীয় হত্য়া

অপারেশন সিন্দুর সফল করার পরই পাকিস্তানের প্রত্যাঘাতের আশঙ্কায় একাধিক বৈঠক চলছে ভারতে। অন্যদিকে পাকিস্তানও সীমান্তে আঘাতের পরিমাণ বাড়িয়ে...

২৮ সদস্যের সম্ভাব্য দল ঘোষণা ভারতের, প্রস্তুতি হবে কলকাতায়

ভারতীয় দলে(Indian Football Team) এবার মোহনবাগানের(MBSG) আরও এক ফুটবলর। এএফসি এশিয়ান কাপের(AFC Asian Cuo) যোগ্যতা অর্জন পর্বের জন্য...