কলেজিয়ামের মাধ্যমে হাইকোর্টের (High Court) প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রের ছড়ি ঘোরানোর বিরোধিতায় সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মঙ্গলবার, মেঘালয় সফরের আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাজ্যের কোনও ভূমিকা থাকে না। কিন্তু কলেজিয়ামে হস্তক্ষেপ করে কেন্দ্র (Centre)। এতে যেমন যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত লাগে, তেমনই বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতায় বজায় থাকে না। বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ তিনি একেবারেই মানতে পারেন না বলে জানান মমতা। মমতার মতে, তিনি চান সবার জন্য সুবিচার। আর সেক্ষেত্রে কলেজিয়ামে (Collegium) কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।

বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা কেন বিচারপতিদের কলেজিয়ামের হাতে থাকবে- তা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই কেন্দ্র ও বিচারবিভাগের টানাপড়েন চলছে। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়-সহ অনেকেই কলেজিয়ামের দ্বারা বিচারপতি নিয়োগের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বিচারপতি নিয়োগের ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে থাকা উচিত। তবে, এই ধরনের মন্তব্যকে মোটেই ভালো চোখে দেখছেন না বলে আটর্নি জেনারেলকে সাফ জানিয়ে দেন বিচারপতিরা। নতুন আইন না আসা পর্যন্ত বিচারপতি নিয়োগ ও বদলিতে কলেজিয়াম পদ্ধতিই মানতে হবে বলে মতা তাঁদের। এদিন, বিচারবিভাগের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আমরা বিচার ব্যবস্থার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা চাই। এতে ওদের কোনও মতলব আছে। যদি কেন্দ্রীয় সরকার তাদের প্রতিনিধিকে কলেজিয়ামে রাখে, তাতে রাজ্য হাইকোর্ট থেকে কলেজিয়াম সুপারিশ পাঠাবে সুপ্রিম কোর্টে। আর সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম সুপারিশ পাঠাবে কেন্দ্রের কাছে। কিন্তু সেখনে রাজ্যের সুপারিশের কোনও মূল্য থাকবে না। আসলে কেন্দ্র সরাসরি বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করবে। আমরা সেটা চাই না। আমরা চাই সবার জন্য বিচার, গণতান্ত্রিক অধিকারের বিচার”।

বিচার ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পীঠস্থান। মানুষকে বিচার দেওয়ার সুপ্রিম অথরিটি। কিন্তু কেন্দ্র মমতার আশঙ্কা কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করলে, যারা তাদের সমর্থক তাদের কাজ হবে এক মাসের মধ্যে। আর বিরোধীদের তালিকা ঝুলে থাকবে তিনবছর ধরে। এক্ষেত্রে বিচারপিত মহীতোষ মজুমদারের ছেলে জয়তোষ মজুমদারের নামও উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা বলেন, “আমরা জাস্টিস ফর ফ্রিডম চাই। কেন্দ্র হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। গণতন্ত্র বিপন্ন। সব জায়গায় হস্তক্ষেপ করছে তারা।”

মেঘালয়ে এখন প্রধান বিরোধীদল তৃণমূল। এবার বিধানসভায় নির্বাচনে তাদের ক্ষমতা দখলের সম্ভাবনা কতটা? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে মমতা জানান, তিনি আশাবাদী। তবে, সেখানে সভা করার পরে তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন। একই সঙ্গে অসম-মেঘালয়ের যে গোলমাল তার দ্রুত নিষ্পত্তি চান মমতা।
