মাঝে মাত্র ৩দিনের ব্যবধান। ফের ত্রিপুরায় নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলতে চলেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, শুক্রবার ত্রিপুরার কমলপুর এবং কদমতলা কুর্তি বিধানসভা কেন্দ্রের জনসভায় বক্তব্য রাখবেন অভিষেক।মঞ্চ প্রস্তুত। উন্মাদনা তুঙ্গে।

এদিন সভাস্থলে যাওয়ার আগে আগরতলায় দাঁড়িয়ে দলনেত্রীর সুরে সুর মিলিয়েই অভিষেক বললেন, ত্রিপুরার মানুষ পরিবর্তন চায়। একাধারে আক্রমণ করলেন বাম ও বিজেপিকে। তাঁর কথায়, ”২৫ বছরের বাম অপাশাসন ঘটিয়ে ডবল ইঞ্জিনের ভাঁওতায় পা দিয়েছিল ত্রিপুরার মানুষ। কিন্তু গত ৪ বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে। হঠাৎ করে সভার জায়গা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। গাড়ি ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানো হচ্ছে যাতে সভায় যেতে গাড়ি না দেয়। সিপিএম আমলেও এক জঘন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তার থেকেও ক্ষতি গত ৫ বছরে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার করেছে। ত্রিপুরায় গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত। জঙ্গলরাজ চলছে।”
দমদম বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে ও কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেন অভিষেক। ত্রিপুরায় বিজেপির একাধিক বিষয় প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে,নযেগুলি বাংলার প্রকল্পগুলিকে কার্যত নকল করা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে প্রকল্প বাংলায় বিপুল জনপ্রিয়, সেই কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কৃষক বন্ধুর মতো প্রকল্পগুলিকে অনুকরন করা হচ্ছে একাধিক রাজ্যে। শুধু ত্রিপুরা নয়, এই তালিকায় বিজেপির পাশাপাশি রয়েছে কংগ্রেসও। একমাস আগে কর্নাটকেও কংগ্রেসের তরফে লক্ষ্মীর ভান্ডারের ধাঁচে প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা এটাই প্রমাণ করে বাংলা যা আজকে ভাবে গোটা দেশ তা পরে ভাবে। এটা বাংলার কাছে অত্যন্ত গর্বের।”

অভিষেকের আরও সংযোজন, “সংকল্পপত্র দিয়ে নির্বাচনের পর কেটে পড়ে। আর তাদেরকে দেখা যায় না। তাদের কাছে অনুরোধ এগুলো যেন তারা বাস্তবে করে দেখায়। আমরা শুধু প্রতিশ্রুতি দেই না তা বাস্তবায়িত করে দেখাই। আমরা বলেছিলাম লক্ষ্মীর ভাণ্ডার করব। নির্বাচনের পর তা বাস্তবায়িত করেছি। যারা প্রাপ্য সকলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেয়েছে। আমরা স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডের কথা বলেছিলাম, দু’মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়িত করেছি। সংকল্পপত্র যদি কাগজে কলমে হয়ে থাকে, তবে তার কোনও গুরুত্ব থাকে না। সেটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের। ফলে যারা করবে বলছে তারা আগে নিজেদের রাজ্যে সেগুলি করে দেখাক তারপর কথা বলবে।”

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের একাধিক প্রকল্পের অনুকরণে পড়শি রাজ্য ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনের ইস্তেহার প্রকাশ করে বিজেপি। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা গতকাল, বৃহস্পতিবার আগরতলা থেকে প্রকাশ করেছেন ‘সংকল্প পত্র’। তাতে বাংলার একাধিক প্রকল্পের ছায়া। ‘সবুজশ্রী’র অনুকরণে সেখানে নবজাতক কন্যাদের জন্য ৫০ হাজার টাকার বন্ডের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আবার ‘কন্যাশ্রী’র আদলে ‘মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা’য় ছাত্রীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে স্কুটি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। শুধু তাই নয়, জমিহীনদের বিনামূল্যে জমির পাট্টা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বিজেপির সংকল্প পত্রে। যা দেখে মনে করা হচ্ছে, অধিকাংশই বাংলার তৃণমূল সরকারের সামাজিক প্রকল্পগুলির অনুকরণ।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার আগরতলার রবীন্দ্রভবন থেকে ৫ কিলোমিটার পদযাত্রার পর সেখানে ফিরেই নির্বাচনী সভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেদিন বলেন, ”ডবল ইঞ্জিন সরকার মানে ইডি-সিবিআই, কেন্দ্রে রাজ্যে দুর্নীতি করবে, দুয়ারে গুন্ডা নয়, দুয়ারে সরকার পাঠাই।” ত্রিপুরা দখলে বাংলার উন্নয়নের মডেলকেই হাতিয়ার করেন মমতা, অভিষেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন দাবি করেন, ”তৃণমূল যা বলে, তাই করে। বাংলা মডেল। যদি আপনারা তৃণমূলকে সমর্থন করেন, তাহলে আশ্বাস করি, বাংলায় যা উন্নয়ন করিছি, তার ভাগ ত্রিপুরাও পাবেন।”
