বাংলা ভাষায় ভিন্ন ভাষার শব্দের অনুপ্রবেশ তিনি আপত্তি তুলেছিলেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য(Shuvaprasanna Bhattacharya)। উদাহরণ স্বরুপ তিনি বলেন, “বাংলা ভাষায় কেন ‘পানি’, ‘দাওয়াত’ শব্দ ঢুকবে।” এই সব শব্দে ঘোর আপত্তি চানান চিত্রশিল্পী। তবে ভাষা দিবসের মঞ্চে নিজে বক্তব্য রাখার সময়ে শুভাপ্রসন্নের আপত্তি পুরোপুরি খণ্ডন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনি জানালেন, “ল্যাঙ্গুয়েজ মিনস কমিউনিকেশন।” অর্থাৎ ভাষা মানে আসলে যোগাযোগের মাধ্যম। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “জল বা ওয়াটারকে কেউ কেউ পানি বলে। এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। মাকে কেউ আম্মা বলে। এটাকে মেনে নিতে হবে।”

মঙ্গলবার দেশপ্রিয় পার্কে ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের মঞ্চে বক্তব্য রাখতে উঠে শুভাপ্রসন্ন বলেন, “বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বাংলা ভাষার তাৎপর্য, বাংলার ভাষার বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা সরে আসছি। আমরা দেখছি বহু কারণে, নানান সাম্প্রদায়িক ছাপ বাংলা ভাষায় চলে এসেছে।” এর পরেই শুভাপ্রসন্ন বলেন, “যে শব্দগুলোকে আমরা কখনও বাংলা বলি না, ভাবি না, সেই শব্দ আজকে বাংলা ভাষায় ঢুকছে। আমরা কোনও দিন বাংলা ভাষায় পানি ব্যবহার করি না। আমরা কোনও দিন কখনও দাওয়াত দিই না। সুতরাং, ভাবতে হবে কোন ভাষা আমাদের ভাষা।” শুভাপ্রসন্ন যখন নিজের বক্তব্য পেশ করছেন ঠিক সেই সময় মমতার চোখে মুখে ফুটে ওঠে স্পষ্ট বিরক্তি। শুভাপ্রসন্নর পর নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি তাঁর বক্তৃতায় বাংলার শব্দ ভান্ডার বাড়ানোর কথা বলেন।

নিজে বক্তব্য রাখার সময় সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, “আমি নৃসিংহদার সঙ্গে একমত। যত বেশি বাংলা কথায় শব্দ বৃদ্ধি পাবে, তত বেশি বাংলা ভাষার বৃদ্ধি হবে। আমরা যদি হৃদয়টাকে ছোট করে রাখি, তা হলে হৃদয় কোনও দিনই বৃদ্ধি পাবে না। যত বেশি দেওয়া নেওয়া হবে, মূল ঐতিহ্যটাকে ঠিক রেখেই আমি ভাষাটাকে বাড়াব।” একইসঙ্গে যোগ করেন, “শুভাদা অনেক শ্রদ্ধেয়। কিন্তু শুভাদাকে একটা কথা বলব। দেখুন, কতগুলি শব্দ রয়েছে, যেগুলি সারা বিশ্বের। যেমন মা বললে সবাই জানে দু’টি শব্দ রয়েছে। একটা মা আর একটা মাদার। আর একটা শব্দ রয়েছে জল বা ওয়াটার। কিন্তু ওয়াটারকে কেউ কেউ পানি বলে। এটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। মাকে কেউ আম্মা বলে। এটাকে মেনে নিতে হবে। কেউ বারণ করেনি। আমি মা-ও বলব, আমি আম্মাও বলব। ওরা অতিথি সেবাকে দাওয়াত বলে। এটা বাংলাদেশের ভাষা। যাঁরা ও পার থেকে এ দেশে এসেছেন, তাঁরা এই ভাষাটাকে গ্রহণ করেছেন। আমি মাতৃভাষাকে চেঞ্জ করতে পারি না। যেটা শিখে এসেছে, সেটা চেঞ্জ করবে কী ভাবে।” পাশাপাশি কারাগার শব্দ তুলে ধরে মমতা বলেন, “আমরা যদি এখন কারারক্ষী বলি বেশিরভাগ মানুষ বুঝবে না কিন্তু ‘জেলার’, ‘জেল’ শব্দটা বুঝবে। মানুষ এগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত। এগুলো মেনে নিতে হবে।”
উল্লেখ্য, দেশপ্রিয় পার্কে এদিন ভাষা দিবসের মঞ্চে বাংলার শিল্পী, সাহিত্যিকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত থেকে মনোময়দের গানে ছিল ভাষা দিবসের সুর। গান গেয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ও। কবিতা পাঠ করেন জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকার, শ্রীজাতরা। মাঝে মাঝে ছিল সাহিত্যিক, প্রবান্ধিক, শিল্পীদের বক্তৃতা। গোটা অনুষ্ঠানটাই মন দিয়ে উপভোগ করছিলেন মমতা। পাড়ে ‘অ’ লেখা শাড়ি ছিল তাঁর পরনে। গোটা অনুষ্ঠান ঠিকঠাক হলেও সুর কাটে শুভাপ্রসন্নের বক্তব্যে।
