Friday, November 7, 2025

সাক্ষ্য দেওয়াই কাল! প্রয়াগরাজে উমেশ খুনে গ্রেফতার প্রাক্তন সাংসদ পুত্র-সহ ১৪

Date:

Share post:

২০০৫ সালে বিএসপি(BSP) এমএলএ রাজু পাল(Raju Paul) হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন উমেশ পাল(Umesh Paul)। শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে(Prayagraj) নিজের বাড়ির সামনেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হতে হল তাঁকে। এই খুনের পিছনে উঠে আসছে বড় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। পুলিশের ধারনা বন্ধু রাজু পাল হত্যাকাণ্ডে সাক্ষ দিতে অনড় থাকার জেরেই খুন হতে হয়েছে উমেশকে।

উমেশ হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার বিকেল ৪টে ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে সাদা রঙের একটি এসইউভি বাড়ির সামনে এসে থামে। গাড়ির পিছনের আসন থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় উমেশ পালকে। দরজা খুলে বেরোতেই পিছনে কয়েকটি বাইক এসে থামে। কিছু বুঝে ওঠার আগে উমেশকে লক্ষ্য করে একের পর গুলি চালান দুষ্কৃতীরা। বিকেল ৪টে ৫৭ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে অর্থাৎমাত্র ৪৭ সেকেন্ডে গোটা অপারেশন চালিয়ে চম্পট দেয় তারা। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে প্রাক্তন সাংসদ আতিক আহমেদের বিরুদ্ধে। ইতিমধ্যেই তাঁর দুই ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কিন্তু কে এই উমেশ? কেন খুন হতে হল তাঁকে। ঘটনার সূত্রপাত ১৯ বছর আগে ২০০৪ সালে। সেবার উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির টিকিটে ফুলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন ইলাহাবাদ পশ্চিমের পাঁচ বারের বিধায়ক আতিক আহমেদ। আতিকের জয়ের পর ইলাহাবাদ পশ্চিম আসনে উপনির্বাচনে সপার টিকিটে প্রার্থী হন তাঁর ভাই খালিদ আজিম ওরফে আশরফ। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএসপির প্রার্থী রাজু। সকলকে চমকে দিয়ে ওই আসনে জয়ী হন রাজু। শত্রুতার সূত্রপাত সেখান থেকেই। একটা সময়ে এই আতিকেরই খাস লোক ছিলেন রাজু। তিনি বিধায়ক হওয়ার পর থেকে শুরু হয় হুমকি। এরপর ২৫ জানুয়ারি ২০০৫ সালে একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন বিধায়ক রাজু। তবে রাস্তায় একটি স্করপিয়ো গাড়ি তাঁর গাড়িকে ওভারটেক করে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিন দুষ্কৃতী তাঁর গাড়ি ঘিরে গুলিবর্ষণ করে। সেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান রাজু। বিধায়ক রাজুকে খুনের অভিযোগ ওঠে এসপি সাংসদ আতিক, তাঁর ভাই আশরফ, ফরহান, রঞ্জিত পাল, আবিদ এবং গুফরানের বিরুদ্ধে। ময়নাতদন্তে জানা যায় রাজুর শরীরে আঘাত হেনেছিল ১৯ টি গুলি।

এই ঘটনার পর আতিক গ্যাংয়ের হুমকির মুখে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে একে একে পিছিয়ে এসেছিল রাজুর পরিবারের সকল সদস্য। তবে রুখে দাড়িয়েছিলেন একজন। তিনি উমেশ পাল যিনি রাজুর খুব কাছের বন্ধু। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন জীবিত থাকলে এই মামলা জিতে অভিযুক্তদের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। রাজু হত্যাকাণ্ডে মূল সাক্ষী হয়ে যাওয়ায় ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উমেশকে অপহরণ করা হয়। আর সেই অপহরণের অভিযোগ ওঠে সেই আতিকের বিরুদ্ধেই। তাঁকে ধমকানো হয়, সাক্ষী দিলে প্রাণে মেরে দেওয়া হবে। অপহরণকারীরা উমেশকে ছেড়েও দেন। তবে উমেশ থামেননি। পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনার পর একাধিকবার উমেশের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়। যদিও কপাল জোরে বারবার রক্ষা পান তিনি। আতিকের গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে তাঁকে খুনের চেষ্টার মামলাও দায়ের করেন।

২০০৮ সালে উমেশ অপহরণের মামলার সম্প্রতি শুনানি শুরু হয়েছিল। সেই মামলার বিষয়েই শুক্রবার আদালতে গিয়েছিলেন উমেশ। শুক্রবারই সেই মামলা রায় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিবাদী পক্ষের উকিল সোমবার পর্যন্ত সময় চেয়ে নেন। আদালত থেকে বেরিয়ে উমেশ যখন বাড়ি ফিরেছিলেন। সেই সময় তাঁকে অনুসরণ করছিল দুষ্কৃতীরা। বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামতেই গুলি করে খুন করা হয় উমেশকে। আর এই ঘটনা ফের একবার প্রকাশ্যে এনে দিল উত্তরপ্রদেশের ভয়াবহ গুন্ডারাজ।

spot_img

Related articles

শিলিগুড়িতে উৎসবের মেজাজেই সোনার মেয়েকে বরণ, নিজের অনুভূতির কথা জানালেন আপ্লুত রিচা

বিগত কয়েক বছর ধরেই পুরুষ এবং মহিলা ক্রিকেটের মধ্যে ব্যবধান একটু একটু কমছে। আইসিসি বিশ্বকাপ জিতে ভারতীয় ক্রিকেটেই...

পথশ্রী প্রকল্প বেনিয়ম বরদাস্ত নয়: স্পষ্ট নির্দেশ মুখ্যসচিবের

পথশ্রী প্রকল্পের অধীনে গ্রামীণ রাস্তাগুলির মান বজায় রাখতে জেলা প্রশাসনকে কড়া নির্দেশ দিলেন মুখ্য সচিব মনোজ পন্থ। শুক্রবার...

ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুয়েরেন্স স্ট্যান্ডার্ড প্রতিযোগিতায় রাজ্যে সেরা বসিরহাট পুরসভা

ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুয়েরেন্স স্ট্যান্ডার্ড (National Quality Assurance Standard) প্রতিযোগিতায় ১২৯টি পুরসভার মধ্যে প্রথম স্থান ছিনিয়ে নিল বসিরহাট পুরসভা...

‘হিন্দি বলয়ের লোক’! বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়ে অস্বস্তি বাড়ালেন অভিজিৎ

বাংলা বিরোধী বিজেপির বিরুদ্ধে প্রবল বাঙালি বিদ্বেষ ঠিক কীভাবে বাংলার মানুষের ক্ষতি করেছে তা বারবার তুলে ধরেছে বাংলার...