দুঃস্বপ্নের দিন পেরিয়ে এলেও আতঙ্ক আজও কাটেনি বাস্তবের ‘মিসেস চ্যাটার্জি’র সন্তানদের। নরওয়ে সরকারের(Norway government) বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়ে ফিরে এসেছিলেন ভট্টাচার্য দম্পতি। তাঁদের লড়াইয়ের সেই গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে বলিউড সিনেমা ‘মিসেস চ্যাটার্জী ভার্সেস নরওয়ে'(Mrs Chatterjee vs Norway)। আগামী ১৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি পেতে চলেছে এই সিনেমা। তার আগে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অতীতের সেই দুঃস্বপ্ন স্মরণ করলেন ভট্টাচার্য পরিবার।

সাগরিকার বইয়ের উপর ভিত্তি করে বলিউড সিনেমা মিসেস চ্যাটার্জি বনাম নরওয়ের প্রিমিয়ার আগামী ১৭ মার্চ। সিনেমাটির সৃষ্টির অভিনয় করেছেন বলিউড অভিনেত্রী রানী মুখার্জি ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। এ প্রসঙ্গে সাগরিকা দেবী বলেন, “১৭ মার্চ যেদিন সিনেমাটি প্রিমিয়াম সেদিন আমার সন্তানদের পরীক্ষা রয়েছে। সিনেমার প্রিমিয়ারের পর আমরা একসঙ্গে ছবিটি দেখার পরিকল্পনা করছি।” পাশাপাশি অতীতের সেই ঘটনায় ছোট্ট দুই সন্তানের ওপর কি ভয়াবহ মানসিক চাপ পড়েছে সে প্রসঙ্গে ওই দুই সন্তানের ঠাকুরদা জানান, “পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি, আমাদের নাতি এখনও রাতে ভয় পায়। তাকে ওষুধ খেতে হচ্ছে এবং কাউন্সেলিং চলছে। আমাদের নাতনি কিছুটা ভাল আছে কিন্তু সে এখনও ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।”
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে স্বামী ও দুই ছেলে মেয়ের সঙ্গে নরওয়েতে গিয়ে সংসার বেঁধেছিলেন সাগরিকা ভট্টাচার্য। কিন্তু নরওয়ের শিশুসুরক্ষা কমিশন যাকে বার্নেভার্নেও বলা হয়ে থাকে হঠাৎই একদিন ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাঁদের কোলের দুই শিশুকে। তখন তাঁদের ছেলে অভিজ্ঞানের বয়স মাত্র ৩। আর মেয়ে ঐশ্বর্যা তখন এক বছরের, দুধ খাওয়াও ছাড়েনি সে। কী অভিযোগ ছিল কর্তৃপক্ষের? ছবির ট্রেলারে যা দেখানো হয়েছে ঠিক তাই। বাচ্চাকে হাত দিয়ে খাইয়ে দিতেন মা সাগরিকা… ওদিকে নরওয়ে কর্তৃপক্ষের মনে হয়েছিল, সন্তানকে হাত দিয়ে খাওয়ানো মানে তাকে জোর করে খাওয়ানো, একজন সুস্থ বাবা-মা নাকি এমনটা করতেই পারেন না। এখানেই শেষ নয়, তিন বছরের পুত্র সন্তান কেন তার বাবার সঙ্গে শোবে? কেন নেই তার আলাদা বিছানা– এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। অভিযোগ ছিল, বাচ্চাদের জন্য নাকি ঘরে খেলার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এমনকি মা-বাবা খেলার জন্য তাদের যে খেলনা কিনে দিয়েছে তাও নাকি ঠিক নয়। সাগরিকার থেকে সন্তান কেড়ে নিয়ে রাখা হয়েছিল সরকারি হেফাজতে। বিদেশ মুলুকে একা লড়াই করেছিলেন তিনি। অনেক টানাপড়েনের পর ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে ভারত সরকারও। তাও মন গলেনি নরওয়ে সরকারের। বাচ্চার বাবার ভাইয়ের অর্থাৎ কাকার কাছে দায়িত্ব ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। যদিও সেখানেও দেখা দেয় সমস্যা।

একে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা, অন্যদিকে স্বামী-স্ত্রীর নিত্য ঝগড়ায় ততদিনে অনুরূপ ও সাগরিকাও আলাদা হয়ে গিয়েছেন। নিজের সন্তানদের দায়িত্ব ফিরে পেতে মা’কে আইনি পদক্ষেপ করতে হয়। এরপর আদালত, আদালতের চৌহদ্দি, চোখের জল আর দীর্ঘ লড়াই শেষে অবশেষে জিৎ হয় সাগরিকার। ২০১৩ সালে প্রায় দুই বছর লড়াইয়ের পর কলকাতা হাইকোর্ট মা’কে তাঁর দুই সন্তানের দায়িত্ব দেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সাগরিকা। রাষ্ট্রের কাছে জয়ী হয় মায়ের মমতা, জয়ী হয় ভালবাসা, ভরসা, বিশ্বাস।

আরও পড়ুন- সিকিম থেকে ফেরার পথে ভয়াবহ দু*র্ঘটনা, শিলিগুড়িতে মৃ*ত ৪
