“শিশিরবাবু কোন দলে?”, প্রশ্ন শুনেই মন্ত্রীকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি শুভেন্দুর

বিরোধী দলনেতার হুমকি নিয়ে স্পিকারের হস্তক্ষেপ ও নিরাপত্তার দাবি করেন পার্থ ভৌমিক। স্পিকার বলেন, "এটা আমিও শুনেছি। অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কে কাকে জেলে ঢোকাবে? এভাবে হয় না কি? এটা রেকর্ডে রাখছি"।

বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন ফের বিতর্কে বিরোধী দলনেতা তথা দলবদলু বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুললেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। মন্ত্রীর অভিযোগ, “এক মাসের মধ্যে সিধে করে দেব”, “এক মাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেব’, অধিবেশন চলাকালীন এই ধরণের মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজ, শুক্রবার বিধানসভায় ব্যাপক হট্টগোল শুরু হয় শাসক ও বিরোধী দলের বিধায়কের মধ্যে।

এরপরই স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি প্রথমেই সব পক্ষকে শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। অধ্যক্ষও বলেন, “শুভেন্দুবাবু আপনি এই ধরনের কথা বলতে পারেন না।” শুভেন্দুর এই বক্তব্য রেকর্ডে রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ঘটনার সূত্রপাত শুভেন্দু অধিকারীর একটি বক্তব্যকে সামনে রেখে। এদিন পঞ্চায়েত দফতরের বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছিল। শুভেন্দু অধিকারীও ছিলেন বক্তার তালিকায়। তাঁর বক্তব্যের একেবারে শেষে গিয়ে বিজেপির টিকিটে জিতে তৃণমূলে যাওয়া দুই বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যাণী ও বিশ্বজিৎ দাসদের দিকে তাকিয়ে শুভেন্দু বলেন, “এনারা কোন দলে আছেন? এনারা স্পিকারের সামনে বলবেন বিজেপিতে আছেন। তাহলে ওনাদের এদিকে থাকতে বলুন।” তখনই মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক পাল্টা শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেন, “শিশিরবাবু কোন দলে আছেন?”

এরপরই শুভেন্দু অধিকারী রাজ্যের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উদ্দেশে বলেন, এক মাসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেবেন। শুভেন্দুর কথায়, “পার্থ ভৌমিকের নামে ভোট পরবর্তী হিংসার মামলা রয়েছে। ১ মাসের মধ্যে দেখে নেব।” এরপরই পার্থ ভৌমিক উঠে দাঁড়িয়ে স্পিকারকে বলেন, “স্যর উনি বলছেন এক মাসের মধ্যে জেলে ঢোকাবেন।” এরপরই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

বিরোধী দলনেতার হুমকি নিয়ে স্পিকারের হস্তক্ষেপ ও নিরাপত্তার দাবি করেন পার্থ ভৌমিক। স্পিকার বলেন, “এটা আমিও শুনেছি। অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কে কাকে জেলে ঢোকাবে? এভাবে হয় না কি? এটা রেকর্ডে রাখছি। আপনার নিরাপত্তার বিষয়টি আমি দেখব। আপনি প্রিভিলেজ আনতে চাইলে আনতে পারেন।”

পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পার্থ ভৌমিক বলেন, “সম্মানীয় বিরোধী দলনেতা নিজের বক্তব্যের মধ্যে বিশ্বজিৎ দাস, কৃষ্ণ কল্যাণীর উদ্দেশে বলেন এরা বিজেপির বিধায়ক। এদের স্পিকারের সামনে অন্য কিছু বলার ক্ষমতা নেই। আমি তখন বলি, আপনি বলতে পারবেন শিশিরবাবু কোন দলের? উনি তখন বললেন এক মাসের মধ্যে জেলে ঢুকিয়ে দেব।” পার্থবাবুর আরও সংযোজন, “মুখ্যমন্ত্রী যে চিঠি দিয়েছিলেন, সিবিআই-ইডিকে পরিচালনা করছে বিজেপি, সেটাই প্রমাণিত বিরোধী দলনেতার কথায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আমাদের সব বিধায়ককেও যদি জেলে ঢুকিয়ে দেন, তাতেও ওই শাড়ি পরা মহিলা একাই যথেষ্ট। উনিই সামলে নিতে পারবেন। তবে আমি নিজের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। দেশে আইন আছে। আমায় জেলে ঢোকাতে গেলে কোনও দোষ থাকতে হবে। আমায় যারা চেনেন, তারা জানেন আমি অসংসদীয় কথা বলি না। আমি শিশিরবাবুর নাম করেই বলেছি। সম্মান দিয়েছি। স্পিকারের কাছে আমি বলেছি, বাইরে হলে কোর্টে যেতাম। স্পিকারের কাছে আবেদন জানলাম। বাইরে হলে কোর্টে বলব।”

এদিকে এ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিধায়ক তাপস রায় বলেন, “এজেন্সিকে যেভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, বোঝাই যাচ্ছে। বঙ্গ বিজেপি বিশেষ করে শুভেন্দু যেভাবে কথা বলছেন তাতেই বোঝাই যাচ্ছে তাঁরা এজেন্সি চালাচ্ছে। তা না হলে রাজ্য সরকারের এক মন্ত্রীকে এভাবে হাউসের ভিতর বলতে পারে না। এটা বেআইনি। দলের তরফেও আলোচনা হবে।”

আরও পড়ুন- ধর্মঘটের প্রভাব নেই! মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে রেকর্ড হাজিরা, অন্য দফতরে কত?

 

 

Previous articleঅজিদের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে রেকর্ড গড়লেন অশ্বিন, টপকে গেলেন কুম্বলেকে
Next articleজায়গার নামে প্রকল্পে কেন্দ্রের গায়ে জ্বালা কেন! মোদি সরকারকে তুলোধনা অভিষেকের