র*ক্ষে পেলেন রাহুল, কোন সমীকরণে সুতোয় ঝুলে ‘সাংসদ’পদের ভবিষ্যৎ !

এই পরিস্থিতিতে কী করবেন,‌ কীভাবে নিজেকে বাঁচাবেন ওয়ানাড়ের সাংসদ? আপাতত তাঁকে সংসদে না যাওয়ারই পরামর্শ দিয়েছে দলের লিগ্যাল সেল (Congress Legal Cell)।

অল্পের জন্য রক্ষে পেলেন রাহুল গান্ধী(Rahul Gandhi)। রাজনৈতিক মহলের একাংশ যখন ভাবতে শুরু করেছিল যে সোনিয়া পুত্রের এবার আর মান বাঁচানো সম্ভব নয়, তখনও হাতছাড়া হল না সাংসদ(MP) পদ। কিন্তু সেটা কী ভাবে ভাবে সম্ভব? বৃহস্পতিবারই মোদি পদবি নিয়ে মামলায় রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi) দোষী সাব্যস্ত করে ২ বছরের কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছে সুরাট আদালত (Surat Court)। যদিও তিনি জামিনে মুক্ত রয়েছেন। তবে সোনিয়া তনয়ের সাংসদ পদ থাকবে কী না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উঠছে বিস্তর প্রশ্ন। ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরের তরফে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজের দাবিও তোলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কী করবেন,‌ কীভাবে নিজেকে বাঁচাবেন ওয়ানাড়ের সাংসদ? আপাতত তাঁকে সংসদে না যাওয়ারই পরামর্শ দিয়েছে দলের লিগ্যাল সেল (Congress Legal Cell)।

তবে এদিন সকালে সুরাট আদালত রাহুলকে দোষী সাব্যস্ত ঘোষণা করলেও এখনও পর্যন্ত স্পিকারের কাছে এ বিষয়ে কোনও লিখিত আবেদন জমা পড়েনি। ফলে স্পিকারের তরফে জানানো হয়েছে, যদি কেউ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের ব্যাপারে অভিযোগপত্র স্পিকারের টেবিলে জমা দেন, তারপর আইনত বিশেষজ্ঞরা সেটি খতিয়ে দেখবেন এবং তাঁরাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এই বিষয়ে আইন কী বলছে?

কোনও সাংসদ দোষী সাব্যস্ত হলে মূলত দুটি কারণে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হতে পারে।

প্রথমত, যদি ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় (মানহানির মামলা বাদে) ।

দ্বিতীয়ত, সাংসদ যদি অন্য কোনও অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁর দু-বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন, তাহলে তাঁর সাংসদ পদ বাতিল হতে পারে।

শুধু তাই নয়, ওই ব্যক্তি পরবর্তী ৮ বছর লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করতে পারবেন না অর্থাৎ উচ্চতর কোনও আদালতে এই রায় বাতিল না হলে ২০২৪ সালের লোকসভার লড়াই থেকেও রাহুল ছিটকে যেতে পারেন। এক্ষেত্রে কংগ্ৰেস সাংসদকে মানহানির মামলাতেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাই এখনই তাঁর সাংসদ পদ বাতিলের প্রশ্ন উঠছে না। কিন্তু, দু-বছর সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে নিশ্চিন্ত আর থাকতে পারলো না কংগ্রেস। হাইকোর্ট যদি নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয়, সেক্ষেত্রে রাহুলের সাংসদ বাতিল হবে না। তবে হাইকোর্টে আবেদন করা থেকে স্থগিতাদেশ দেওয়া পর্যন্ত তিনমাস সময় রাহুলের কাছে রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ দিলে তবেই রাহুলের সাংসদ পদ রক্ষা পাবে। এর আগে ২০১৩ সালের অক্টোবরে যুগান্তকারী রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি একে পট্টনায়েক ও বিচারপতি এস জে মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ জানায়, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ৮ (৩) ধারা অসাংবিধানিক। যে আদালতই কোনও সাংসদ বা বিধায়কের বিরুদ্ধে দু’বছর বা তার বেশি জেলের সাজা দিক সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে যাবে।

তবে রাহুল প্রথম নন, সম্প্রতিই ২০১৯-এর একটি ঘৃণাভাষণের মামলায় উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আজম খানকে তিন বছরের জেলের সাজা দিয়েছে এলাহাবাদ কোর্ট। ২০১৩-র সংশোধিত আইন অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে আজম খানের বিধায়ক পদও খারিজ হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি লালু প্রসাদ যাদবকেও জেল খাটতে হয়েছে চারবার। শুধু জেলে যাওয়াই নয়, সাজা খাটার পর আরও ছয় বছর ভোটে প্রার্থী হতে পারেন না অভিযুক্ত। যেমনটা হয়েছে লালু ও আজম খানের ক্ষেত্রে। তবে যেহেতু এদিন রাহুল গান্ধীকে জামিন দিয়েছে সুরাটের আদালত সেক্ষেত্রে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যেত।

এই সব কাণ্ডের গোড়া পত্তন আজ থেকে প্রায় বছর চারেক আগে। ২০১৯ সালে কর্নাটকের ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, দেখা যাচ্ছে যাঁরাই দুর্নীতি করছেন তাঁদেরই পদবি মোদি। এরপরেই গুজরাটের বিজেপির এক প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমান সাংসদ সুরাটের আদালতে মামলা করেন। তাঁরও পদবি মোদি। তিনি আদালতে জানান, মোদি পদবিকে রাহুল গান্ধী অপমান করেছেন। সেই মামলারই এদিন চূড়ান্ত রায় দান ছিল। সশরীরে সুরাটের আদালতে হাজির ছিলেন রাহুল।

 

Previous articleএকদিনের বিশ্বকাপের কথা ভেবে অস্ত্রোপচারে নারাজ শ্রেয়স : রিপোর্ট
Next articleসুপার কাপের পর বিদায় নিশ্চিত লাল-হলুদ কোচ স্টিফেনের