খায়রুল আলম, ঢাকা: দীর্ঘদিন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে রুপিতে বিনিময় বাণিজ্য। দুই দেশের মধ্যে চলমান দুই বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যে সমপরিমান রুপির ব্যবহার হবে। এর ফলে চলমান ডলারের সংকট অনেকটাই লাঘব হবে মনে করেন সংশ্লিষ্ঠরা। এ বিষয়ে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রায় শেষ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিছু বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সিদ্ধান্তের পরই উভয় দেশে এর ব্যবহার চালু হবে। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আইবিসিসিআই) মোট বাণিজ্যের হিসাব প্রস্তাব আকারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জমা দিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রীর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয় মন্ত্রিসভায় লিখিত আকারে তুলে ধরেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানে তিনি দুদেশের বাণিজ্য বিনিময় মাধ্যম ডলারের বিপরীতে রুপির ব্যবহারের বিষয়টি অবহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীকে।
রুপির মাধ্যমে বাণিজ্য শুরু হলে এ দেশের ব্যবসায়ীদের ভারতে একটি ব্যাংকে হিসাব খুলতে হবে। সেই হিসাব খোলা হবে রুপিতে। এখান থেকে রপ্তানি পণ্যের মূল্য রুপিতে ওই ব্যাংকে পরিশোধ করা হবে। আবার আমদানি করলে ওই রুপি দিয়ে আমদানির এলসি মূল্য শোধ করা হবে।
কোভিড-১৯-এর ধাক্কার পাশাপাশি প্রায় এক বছর ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে দেশে ডলারের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সংকটও তৈরি হয়েছে ডলারের। আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে গেছে জিনিসপত্রের দাম। তাতে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। ফলে ডলার-সংকট আরও প্রকট হয়। এমন পরিস্থিতিতে কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে ভারত। ডলার বা অন্য কোনো হার্ড কারেন্সিকে এড়িয়ে দুটি দেশ যখন নিজেদের মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য চালায়, সেটিকে আর্থিক পরিভাষায় ‘কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা’ বলা হয়। জানা গেছে, রাশিয়া, মরিশাস, ইরান ও শ্রীলংকার সঙ্গে ভারত রুপিতে বাণিজ্যও শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতীয় মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য বাণিজ্য সংগঠন ও ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিতে থাকে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়। তবে বাণিজ্যের মাধ্যম হিসাবে ১৯৬০-এর দশকে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান এসব দেশ ভারতীয় রুপি গ্রহণ করত। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।
গত ২২-২৩ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে উভয় দেশের বাণিজ্য বিনিময় মাধ্যম হিসাবে রুপি চালুর প্রস্তাব দেয় ভারত। এরপর গত ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি ভারতের বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত জি-২০ অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরদের বৈঠকের ফাঁকে বিনিময় মুদ্রা হিসাবে ডলারকে সরানো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হয়। সেখানে ডলার সরিয়ে টাকা ও রুপিতে লেনদেনের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস এমন একটি ব্যবস্থার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিদায়ি ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতে প্রায় ২শ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। বিপরীতে ভারত থেকে এক হাজার ৬১৯ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়। অর্থাৎ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ১ হাজার ৪২০ কোটি ডলারের মতো।
এদিকে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে রুপি ও টাকায় লেনদেনে উদ্যোগের বিষয়টি স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। কারণ চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ডলারের দর ২০ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে উভয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়ে। এমন অবস্থায় শতভাগ না হলেও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের আংশিক রুপি-টাকায় লেনদেন করা হলে দুই দেশই সুবিধা পাবে বলে মনে করেন বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা। পাশাপাশি ডলারের দাম ওঠানামা করায় দুই দেশের বাণিজ্যে গতি আনতে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন উভয় দেশের জন্যই সুবিধাজনক হবে। ডলারের ওপর চাপ কিছুটা কমবে। এ উদ্যোগকে ঊভয় দেশের ব্যবসায়ীরা স্বাগত জানায়।
জানা যায়, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যের উদ্যোগ নিয়েছিল ভারত। ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান তখন পড়ছিল। পরে অবশ্য সেই উদ্যোগ সফল হয়নি।
আরও পড়ুন:কলকাতায় হেন*স্থার শিকার শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রধান, FIR দায়ের