পঞ্চায়েত ভোট হবে অবাধ-গণতান্ত্রিক, মানুষের পছন্দেই তৃণমূলের প্রার্থী: নির্দেশ অভিষেকের

সর্বস্তরে সাংগঠনিক ঐক্যের নির্দেশ অভিষেকের

পাখির চোখ পঞ্চায়েত নির্বাচন সেই লড়াইয়ের রূপরেখা ঠিক করতে সোমবার সারা রাজ্যের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করলেন তৃণমূলের (TMC) সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Bandyopadhyay)। সোমবার, ভার্চুয়াল এই বৈঠকে একগুচ্ছ নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। অবাধ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পঞ্চায়েত ভোট সংগঠিত করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। একইসঙ্গে প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনও নেতা-মন্ত্রীর পছন্দ নয়, দল জোর দেবে মানুষের পছন্দের প্রার্থীকে- স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

সোমবার অভিষেকের ডাকা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের বিভিন্ন জেলার সভাপতি, বিধায়ক, সাংসদ, ব্লক সভাপতি ও শাখা সংগঠনের নেতা। ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিও। বৈঠকে ‘দিদির দূত’ কর্মসূচি সঠিকভাবে পালনে জোর দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, দিদির দূত কর্মসূচিতে নেতারা মন দিন। লক্ষ্য ছিল ২ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছনোর। এখনও পর্যন্ত ৪০ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছনো গিয়েছে। বাকিদের কাছেও পৌঁছতে হবে- বার্তা অভিষেকের। দলীয় নেতাদের নিবিড় জনসংযোগের উপর জোর দিতে বলেন জলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের অন্তরে যাতে কোনরকম ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘নিজের পছন্দের লোককে প্রাধান্য দিয়ে অন্য নেতাকে বঞ্চিত করা যাবে না। আপনারা আপনাদের সুপারিশ দলকে পাঠান। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করে নাম পাঠান। আমাদের কাছে এমন বেশ কিছু নাম এসে পৌঁছেছে, যাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছে৷ তাঁদের দল প্রার্থী করবে না।’’

পঞ্চায়েত নির্বাচনে কারা হবেন তৃণমূল প্রার্থী? অভিষেক জানান নেতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তালিকা যাবে তৃণমূল সুপ্রিম ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনি চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঠিক করবেন।

পঞ্চায়েত ভোট হবে অবাধ ও গণতান্ত্রিক। কোনো অবস্থাতেই গা জোয়ারি করা চলবে না। বৈঠকে দলের জেলা সভাপতি, সাংসদ – বিধায়ক – মন্ত্রী- বুথ সভাপতি – অঞ্চল সভাপতি-সহ সর্বস্তরের সাংগঠনিক পদাধিকারীদের এই বার্তা দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।

অভিষেক বলেন, আগের নির্বাচনে যা ঘটেছিল তার খেসারত দিতে হয়েছিল ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে। তৃণমূল ১৮ টি আসন হারিয়েছিল। ২০১৮ র পুনরাবৃত্তি এবার হতে দেওয়া যাবে না। বিরোধীদের প্রার্থী দেওয়া নিয়ে বারে বারেই বিরূপ সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। এবার তাই কড়া নির্দেশ, বিরোধীদের জোর করে প্রার্থী হতে না দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দলের কাছে যদি কোনো জায়গা থেকে এই ধরনের গাজোয়ারির রিপোর্ট আসে, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে রাজ্য নেতৃত্ব সেই এলাকায় গিয়ে নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে বিরোধীদের মনোনয়ন করাবে।

অভিষেকের স্পষ্ট কথা, সাংসদ – বিধায়করা যেভাবে অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে দিয়ে জিতে আসেন সেভাবেই দলের পঞ্চায়েতের প্রার্থীকেও জিতে আসতে হবে। মানুষের পছন্দের প্রার্থীই হবেন তৃণমূলের প্রার্থী। বুথ স্তরে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। মানুষের মতামত জানুন। নিজের লোক বলে কোনো অযোগ্যের নাম সুপারিশ করবেন না।

আরও পড়ুন- বাড়ানো হল দুয়ারে সরকার শিবিরের সময়সীমা, কবে পর্যন্ত মিলবে পরিষেবা?

এদিকে দলীয় বৈঠকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তিরস্কৃত হলেন কোচবিহারের দুই প্রথমসারির নেতা উদয়ন গুহ এবং রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। দু’জনকেই সতর্ক করে অভিষেক জানিয়ে দেন, সবাই মিলে এক সঙ্গে সংগঠনের কাজ করতে হবে। এমন কোনও মন্তব্য করা যাবে না, যা থেকে বিতর্ক তৈরি হতে পারে বা দল সমস্যায় পড়তে পারে। প্রত্যেককেই অশান্তি থেকে দূরে থাকার কথা এবং মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করার কথা বার বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের শুরুতেই দলীয় সদস্যদের এই যোগাযোগ রক্ষা করার কথা বলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের নেতাদের পঞ্চায়েত ভোটের আগে বেশ কিছু নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ।
১২ এপ্রিলের মধ্যে জেলা কমিটি তৈরির কাজ শেষ করতে হবে।
১৭ এপ্রিলের মধ্যে ব্লক কমিটি গড়তে হবে।
২৪ এপ্রিলের মধ্যে গড়তে হবে পঞ্চায়েত কমিটি।

 

 

Previous articleবাড়ানো হল দুয়ারে সরকার শিবিরের সময়সীমা, কবে পর্যন্ত মিলবে পরিষেবা?
Next articleনিবিড় জনসংযোগের জোর, সাংগঠনিক ক্যালেন্ডার ঘোষণা অভিষেকের