Wednesday, May 14, 2025

বদলেছে সময়। মেসবাড়ির (Mess) সংস্কৃতি বদলে বর্তমানে হয়েছে পিজি (Paying Guest)। অনেক জায়গায় সাবেকি মেস ভেঙে তৈরি হয়েছে আবাসনও। তবে এখন যে কটা মেসবাড়ি টিকে আছে বোর্ডারদের মধ্যে সেই আন্তরিকতা একেবারে নেই বললেই চলে। ধীরে ধীরে সময়ের উপযোগী হয়ে তক্তপোষ পরিণত হয়েছে সিঙ্গল বেড-এ। তবুও এখনও কোনও এক মেসবাড়ি যেন অনেক কিছুই মনে করিয়ে দেয়। বাঙালির নস্ট্যালজিয়ায় (Nostalgia) বারেবারে উঠে আসে ব্যোমকেশ আর অজিতের বন্ধুত্বের কথা। তবে সেই নস্ট্যালজিয়ায় এবার ছেদ পড়ল। জানা গিয়েছে, নববর্ষের এক সপ্তাহ আগে থেকে জোরকদমে শুরু হয়েছে মেসবাড়ি থেকে সমস্ত ধুলো ঝাড়ার কাজ।

হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। মহাজাতি সদনের পাড়ায় ১৩৪ নম্বর মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের শিব্রাম চক্রবর্তীর (Shibram Chakraborty) মেস বাড়ির কথা বলা হচ্ছে। আর শেষমেশ গত ৮ এপ্রিলই জরাজীর্ণ সেই ‘ক্ষেত্র কুঠি’-তেই এবার তালা পড়ল। তবে দুঃখের বিষয়, বর্তমান ব্যস্ততার যুগে কেউ সেই খোঁজখবর নিতে এল না। এমন একটা বড় ঘটনা শহর কলকাতাতে ঘটে গেল তা ঘুণাক্ষরে কেউ টেরও পেল না। বোর্ডাররা যে যার মতো সবাই হাত গুটিয়ে নিলেন। এবার সেই বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হল জোরকদমে। আর ভাঙা না হলে সেই বাড়ি অবশ‌্য এমনিই ভেঙে পড়ত। কিন্তু যে বাড়ি এতদিন মাথা উঁচু করে কলকাতা তথা বাংলার বুকে দাঁড়িয়েছিল। সেই বাড়িরই আজ ভগ্ন দশা। বর্তমানে ওই বাড়িতে গেলে চোখে পড়ে সরু, লম্বা, আধো-অন্ধকার একটা গলি। গলি দিয়ে সোজা ঢুকে গেলেই ইটের পাঁজর বের করা সিঁড়ি। এর পাশেই সারি সারি ছোট্ট রুম। এক একটা বাড়িতে ১০-১২টা করে ঘর, প্রত্যেক ঘরে একাধিক চৌকি পাতা। চুনকাম করা দেয়ালে অজস্র হিজিবিজি। হ্যাঙ্গারে জামা প্যান্ট।  দু-তিনতলা বাড়িগুলোর কোথাও পলেস্তারা খসে পড়েছে, আবার কোথাও বারান্দা উধাও। বেরিয়ে রয়েছে লোহার কাঠামো।

তবে শিব্রাম চক্রবর্তী এই মেসেই খুঁজে পেয়েছিলেন আরাম। যে মেসবাড়ি সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, মুক্তারামে থেকে, তক্তারামে শুয়ে, শুক্তারাম খেয়েই তিনি শিবরাম হয়েছেন। ঠনঠনিয়া কালিবাড়ির রাস্তায় এসে, যে কোনও কাউকে শিবরাম চক্রবর্তীর মেসবাড়ি জিজ্ঞেস করলেই দোতলার একটি ঘর দেখিয়ে দেওয়া হত। ১৩৪, মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের ‘ক্ষেত্র কুঠি’। এখানেই একলা থাকতেন তিনি। ভাগ্য ভালো হলে দেওয়ালে লেখাও নজরে আসতে পারে। শোনা যায়, শিবরাম কখনও দেওয়াল রং করতে দিতেন না। সেখানে লেখা থাকত জরুরি বহু জিনিস। কারণ, খাতার মতো দেওয়ালের হারিয়ে যাওয়ার ভয় ছিল না। আর সেকারণেই দেওয়ালে লেখা থাকত অজস্র সব তথ্য। আর সেই সমস্ত ‘জীবন্ত দলিল’ এবার চিরতরে মুছে যাওয়ার পথে।

 

 

Related articles

ভারতীয় সেনার অভিযান নিয়ে অপপ্রচার, চিনের সরকারি সংবাদসংস্থার এক্স হ্যান্ডেল ব্লক নয়াদিল্লির 

পাকিস্তানের পর এবার বেজিংকে কড়া বার্তা দিল নয়াদিল্লি। ভারতীয় সেনার (Indian Army) 'অপারেশন সিন্দুর' (Operation Sindoor) নিয়ে লাগাতার...

আন্দামানে ঢুকলো মৌসুমী বায়ু, রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস 

নির্ধারিত সময়ের বেশ কয়েকদিন আগেই দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর, দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং উত্তর আন্দামান সাগরের কিছু অংশে ঢুকে পড়েছে...

দমদমে লাইনচ্যুত বনগাঁ লোকাল, অল্পের জন্য বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা

হঠাৎ বিপত্তি। দমদম জংশনে লাইনচ্যুত ডাউন বনগাঁ লোকাল (Bonga Local)। বুধবার, বেলা ১২টা ১০ নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। তবে,...

মুক্ত পূর্ণম কুমার: স্ত্রীকে ফোনে শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর, ধন্যবাদ রজনীর

পাকিস্তানের সেনার হাতে প্রায় ২০ দিন বন্দি থাকার পরে অবশেষে ভারতে ফিরেছেন বিএসএফ (BSF) জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ...
Exit mobile version