অমিত শাহকে ফোন করে দিল্লিতে মুকুল? তদন্ত এড়াতেই ফের বিজেপিতে যোগদানের ইচ্ছাপ্রকাশ?

বিজেপিতে যোগদান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করে অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নিয়েই দিল্লি উড়ে গেছেন মুকুল। গতকাল সন্ধ্যায় হুইল চেয়ারে করে কলকাতা বিমান বন্দরে, কিন্তু যখন দিল্লিতে নামলেন তখন গটমট করে পায়ে হেঁটে বেরোলন

ফের সংবাদ শিরোনামে মুকুল রায়। আচমকা তাঁর দিল্লি যাওয়া নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে লম্বা প্লেস কনফারেন্স করতে হল পুত্র শুভ্রাংশু রায়কে। আপাতত
দিল্লিতেই আছেন মুকুল। তবে সেখানে কোথায় আছেন তা নিয়ে বিস্তর ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। উসকে উঠেছে জল্পনা। তবে কি ফের বিজেপিতে যোগদান করবেন? ঘাসফুল ছেড়ে ফের পদ্মফুলে? ফের শিবির বদলের পথে মুকুল রায়? মুকুল রায়ের অন্তর্ধান রহস্যে তুঙ্গে জল্পনা।

অসমর্থিত সূত্রে খবর, বিজেপিতে যোগদান করার ইচ্ছাপ্রকাশ করে অমিত শাহের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নিয়েই দিল্লি উড়ে গেছেন মুকুল। গতকাল সন্ধ্যায় হুইল চেয়ারে করে কলকাতা বিমান বন্দরে, কিন্তু যখন দিল্লিতে নামলেন তখন গটমট করে পায়ে হেঁটে বেরোলন। দিল্লি বিমানবন্দরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেখানে মুকুল রায়কে যাঁরা রিসিভ করলেন, তাঁরা কাদের লোক, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সিবিআই তদন্ত এড়াতেই কি মুকুলের দিল্লি গমন? আবার পুত্র শুভ্রাংশুর মিসিং ডায়েরি! পুরোটাই সাজানো চিত্রনাট্য নয় তো?

একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দিল্লি বিমানবন্দরে রয়েছেন মুকুল রায়! এই ভিডিও ভাইরাল হতেই জল্পনা উসকে ওঠে রাজনৈতিক মহলে। চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণেই কি দিল্লিতে মুকুল রায়? নাকি এর পিছনে রয়েছে কোনও রাজনৈতিক কারণ? ফের বিজেপি শিবিরে নাম লেখাতে চলেছেন তিনি? সবমিলিয়ে তুঙ্গে জল্পনা। গোটা বিষয়ে এখনও পর্যন্ত ধোঁয়াশা।

এদিকে কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ একটি বিমানে দিল্লি রওনা হন তিনি। তাঁর নামে একটি বোর্ডিং পাসও ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু তারপর দিল্লি গিয়ে কোথায় মুকুল রায়, তা নিয়ে ধোঁয়াশা। পরিবারের সদস্যরাও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে খবর। ওদিকে, ইতিমধ্যে সোমবার রাতেই এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ছেলে শুভ্রাংশু। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে মুকুলকে নিয়ে যান দুই ব্যক্তি। মাঝেমধ্যেই তাঁদের সঙ্গে বেরতেন মুকুল রায়। মুকুল রায়কে নিয়ে যান ওই দুজনই। তারপর থেকে তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁদের সঙ্গেই কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন মুকুল রায়।

ওদিকে ভাইরাল ভিডিওতে মুকুল রায়ের সঙ্গে সাংবাদিকের কথোপকথনেও ধোঁয়াশা। ভাইরাল ভিডিয়োয় মুকুল রায় বলছেন যে তিনি দিল্লিতে এসেছেন! কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নে আবার ধোঁয়াশা জিইয়ে রেখে উত্তর! সোজা ভাষায় স্পষ্ট করে কোনও উত্তর তিনি দেননি। একনজরে কথোপকথন-

দিল্লি কেন এলেন?

মুকুল রায়: দরকারে দিল্লি আসতে পারব না।
শারীরিক অসুস্থতার কারণে?

মুকুল রায়: না, না এমনি কাজে এসেছি দিল্লিতে আমি।
বিশেষ কোনও কাজে?

মুকুল রায়: হ্যাঁ। আমি দিল্লিতে আসব না? এখানকার এমএলএ, এমপি আমি!

কোনও রাজনৈতিক বিশেষ কারণে?

মুকুল রায়: না, না কোনও বিশেষ কারণে আসিনি।
ডাক্তার দেখাতে?

মুকুল রায়: সে ডাক্তার তো দিল্লি আসলে আমাকে দেখাতেই হয়।

দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করে আপনি দিল্লিতে?

মুকুল রায়: দিল্লিতে আমি মাঝেমধ্যেই আসি। এবার একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু এসে গিয়েছি।

দিল্লিতে আপনি কদিন থাকবেন?

মুকুল রায়: যে কদিন দরকার হবে, সেই কদিনই থাকব।
বিশেষ কোনও কারণ?

মুকুল রায়: না, বিশেষ কোনও কারণ নেই।

এদিকে, মুকুল রায় অন্তর্ধান রহস্যে এবার মুখ খুলে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করলেন পুত্র শুভ্রাংশু রায়৷ নাম না করেই বিজেপি’র দিকে ইঙ্গিত করে শুভ্রাংশু দাবি করেছেন, তাঁর বাবার মানসিক অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷ মানসিক ভাবে অসুস্থ কাউকে ভুল বুঝিয়ে কোনও দলে যোগদান করানোর নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শুভ্রাংশু৷

বাবাকে তিনি দিল্লি থেকে ফিরিয়ে আনতে চান বলেও জানিয়েছেন শুভ্রাংশু৷ তাঁর অভিযোগ, মুকুল যে দিল্লিতে যাচ্ছিলেন, তা জানতেন না তিনি৷ মুকুল রায়ের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন শুভ্রাংশু৷

প্রসঙ্গত, গতকাল সন্ধ্যে থেকেই মুকুল রায়ের আচমকা দিল্লি যাত্রা নিয়ে জোর জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে৷ গতকাল বিকেলে সল্টলেকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ কলকাতা থেকে বিমান ধরে দিল্লি রওনা দেন মুকুল৷ মুকুল রায় বিমানে উঠে যাওয়ার পর কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছন পুত্র শুভ্রাংশু৷ মুকুলকে বিমান থেকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন তিনি৷ যদিও ততক্ষণে মুকুলের বিমান উড়ে যাওয়ায় তাঁকে নামানো সম্ভব হয়নি৷ রাত পৌনে দশটা নাগাদ দিল্লি পৌঁছন মুকুল৷ সেখানে পৌঁছেও অবশ্য বিমাবন্দরে অসংলগ্ন কথা বলতে শোনা যায় প্রবীণ এই নেতাকে৷ মুকুল দাবি করেন, তিনি দিল্লির বিধায়ক এবং সাংসদ৷ তাই রাজধানীতে গিয়েছেন তিনি৷

রাতেই বিমানবন্দর এবং বীজপুর থানায় মুকুলের নামে নিখোঁজ ডায়েরি করেন শুভ্রাংশু রায়৷ মুকুলের সঙ্গে থাকা তাঁর গাড়ির চালক এবং সর্বক্ষণের দেখাশোনা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন শুভ্রাংশ৷

এর পর এ দিন সকালেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন শুভ্রাংশু৷ তিনি বলেন, ‘মুকুল রায়ের মতো মানুষ দিল্লিতে গিয়ে বলছে আমি তো দিল্লির বিধায়ক- এমপি৷ মুকুল রায় এই মুহূর্তে জিজ্ঞেস করলে তারিখ কত, নাতি নাতনির ভাল নাম কী বলতে পারবেন না৷ রাজনৈতিক পরিস্থিতি জিজ্ঞেস করলে বলবেন আমেরিকা ভারতের গন্ডগোল চলছে৷ ওনার স্পাইনাল ব্রেন সার্জারি হয়েছে৷ পার্কিংসন, ডিমনেশিয়া, সিরোসিস অফ লিভার, হাই সুগার- প্রেসার রয়েছে৷ এই অপারেশন হওয়ার আগে তাঁকে হাগিস পরিয়ে রাখতে হত৷ একজন সুস্থ মানুষ স্বইচ্ছায় যেখানে খুশি যেতে পারেন৷ কিন্তু একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করলে সেটা নিন্দনীয়৷’

শুভ্রাংশু বার বারই দাবি করেছেন, মুকুল যে দিল্লি যাচ্ছেন, তা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি জানতেন না৷ গতকাল সন্ধে ৬.১০ মিনিেটও বাবার সঙ্গে কথা হয় তাঁর৷ এর পরেই দিল্লি যান মুকুল৷ শুভ্রাংশুর দাবি, মুকুল রায়ের কাছে এক টাকাও ছিল না৷ সেখানে তিনি কী করে দিল্লি যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট কাটলেন৷ শুভ্রাংশুর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, ‘একজন অবাঙালি ছেলেকে এজেন্সি থেকে ফোন করে মুকুল রায়ের হাতে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আসতে বলা হয়েছিল৷ তাঁর হাতে টাকা ছিল না, দিল্লি যাওয়ার টিকিট কাটলেন কীভাবে?’

অন্যদিকে, বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ এপ্রসঙ্গে বলেন, ‘নিখোঁজ তো তিনি অনেকদিন আগেই হয়েছেন। আপনারা ৬ মাসের মধ্যে দেখুন ওর কোনও খবর আছে? একজন এমএলএ উনি। বাংলার রাজনীতিতে খুব বড় ব্যক্তিত্ব, নেতা উনি। তাহলে কেন তাঁর কোনও খবর নেই? সেইজন্য আমার মনে হয় এটা লস্ট কেস! মুকুল রায়কে নিয়ে কেউ চিন্তা করে না আর।’

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের তৎকালীন সর্বভারতীয় সম্পাদক মুকুল রায়। এরপর স্রেফ দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হওয়াই নয়, একুশের বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে জেতেন পদ্ম-প্রতীকেই। কিন্তু বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর বিজেপি ছেড়ে আবার তৃণমূলে ‘ঘর ওয়াপসি’ করেন মুকুল। সঙ্গে ছেলে শুভ্রাংশুও। যদিও রাজনীতির ময়দানে অবশ্য এখন দেখা-ই যায় না মুকুল রায়কে। বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি চেয়ারম্যান পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন। পরিবারের লোকেরা জানিয়েছিলেন, শারীরিকভাবে সুস্থ নন মুকুল।

 

 

Previous articleসিবিআই নজরে জীবনকৃষ্ণের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি
Next articleভাঙড়ের মাঠে পুড়ছে সরকারি নথি! তথ্য অনুসন্ধানে হাজির সিবিআই