সোমনাথ বিশ্বাস
অমিত মালব্য (Amit Malavya) অসুখে ভুগছে বঙ্গ সিপিএম (CPM)। একটি দল মানুষ থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন হলে ৩৪ বছর দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করার পরও শূন্যে চলে যায়, তা নিয়ে রিসার্চ চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। তার মধ্যেই এই অমিত মালব্য (Amit Malavya) ছোঁয়া গায়ে লাগিয়ে শূন্য থেকে মহাশূন্যে যাওয়ার পথ আরও প্রশস্ত করছেন মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী (Sujan Chakravarty), সূর্যকান্ত মিশ্ররা (Surjakanta Mishra)। সর্বহারারা আর মাঠে-ঘাটে দেখা নেই। কেউ আইনজীবীর বেশে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে বাইরে বেরিয়ে ভুল ব্যাখ্যা করছেন তো কেউ ২২ লাখি গাড়ি চড়ে টুম্পা সোনা গাইতে গাইতে সন্ধ্যা বেলায় টেলিভিশন চ্যানেলে মেক-আপ করে বসছেন। এরই পাশাপাশি আলিমুদ্দিনে এখন নতুন অসুখের নাম অমিত মালব্য।
আপনাদের মনে থাকবে, একুশের বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপি আইটি সেলের এই ফেক মালব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ভুয়ো ছবি পোস্ট করে মানুষকে ভুল বোঝানোর অপচেষ্টা করে বিফল হয়েছে। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বাংলাদেশের ছবিকে পশ্চিমবাংলার বলে চালানোর চেষ্টা করার সেই খলনায়ক অমিত মালব্যর পথে হেঁটেই এবার বাংলার বুকে নতুনমোড়কে ফেক কালচার আমদানি করছেন আলিমুদ্দিনের ম্যানেজারেরা।
রাজনৈতিক ভাবে পেরে না উঠে সিপিএমের সম্বল এখন ভুয়ো পোস্ট, ফেক নিউজ। কিছুদিন আগে বেশ কয়েকজন কমরেড কেওড়াতলা শ্মশানের ভুয়ো ছবি পোস্ট করে কলকাতা পুলিশের নোটিশ খেয়েছেন। তাতেও শিক্ষা নেই, এখন সিপিএমের চিরকুট কেলেঙ্কারি ফাঁস হতেই, ফের ভুয়ো পোস্টের আশ্রয় নিয়েছেন সুজন-সেলিমরা।
ঘটনা ঠিক কী? পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যজুড়ে ৬০ দিনের জনসংযোগ যাত্রায় নেমেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলে নবজোয়ার আনতে গ্রাম-গঞ্জ চোষে ফেলছেন অভিষেক। মানুষের প্রার্থী নির্বাচন করতে গোপন ব্যালটে চলছে ভোটগ্রহণ। যা শুধু এই বাংলার বুকে নয়, ভূ-ভারতে এমন রাজনৈতিক কর্মকান্ড আগে কেউ দেখেনি। আর দেখেই জ্বলছেন আর ফুলছেন বিরোধী নেতারা।
তৃণমূলের এই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে হেয় করতে এবার ভণ্ডামির পথ বেছে নিয়েছে সিপিএম। একটি বাস নিয়ে ছবি পোস্ট করে এবার বেকায়দায় সুজন-সেলিমরা। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বিরুদ্ধে তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, অভিষেকের বাসের ছবি নিয়ে তাঁরা যে পোস্ট করেছেন তা ভুয়ো। কারণ, সিপিএম নেতাদের পোস্ট করা বাসের ছবির সঙ্গে অভিষেকের বাসের কোনও সম্পর্ক নেই। পিছিয়ে নেই সুজনবাবুও। তিনিই ভুয়ো ছবি পোস্ট করে হিরো সাজতে গিয়ে জিরো হয়েছেন।
সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলার সফরের আগে একটি বাসের ছবি পোস্ট করা হয়েছিল সিপিএমের তরফে। অভিযোগ করা হয়েছিল, রাজ্যবাসীর লুঠের টাকায় এই বাস কেনা হয়েছে বলেও। সিপিএমের সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাল্টা দাবিতে, পোস্ট করা ওই ছবিকে ভুয়ো বলেই দাবি করা হয়েছে। এমনকী, কোচবিহারে অভিষেকের যে বাসের ছবি দেখতে পাওয়া গিয়েছে, তার সঙ্গে সিপিএমের পোস্ট করা ছবির কোনও মিল নেই বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলেরও।
প্রসঙ্গত, অমিত মালব্যর শিক্ষায় শিক্ষিত বঙ্গ বিজেপির কিছু দু’চার আনার দলবদলু নেতা মাঝে মধ্যেই ভুয়ো ছবি ছড়িয়ে রাজ্যকে অশান্ত করার চেষ্টা করেন। গত নির্বাচনের আগে একের পর এক এই ভুয়ো ছবি ঘিরে মুখ পুড়েছিল বিজেপির। এবার তৃণমূলের সমালোচনা করতে গিয়ে সেই ভুয়ো ছবিরই আশ্রয় নিতে হল সিপিএমকে। আসলে ভুয়ো মালব্য প্রভাব এখন বিজেপির পরিধি ছেড়ে সিপিএমের অন্দরেও ঢুকে গিয়েছে।
যে বাস তৃণমূলের কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হচ্ছে, আর যে বাসের ছবি পোস্ট করা হয়েছে, তা পুরো আলাদা। অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রা’য় ব্যবহার হচ্ছে, তা সূর্যকান্ত মিশ্র কিংবা মহম্মদ সেলিমদের পোস্ট করা বিলাসবহুল বাসের সঙ্গে মিল নেই। আর এখানেই স্পষ্ট, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো ছবি ছড়িয়ে বিজেপির পথে হাঁটতে চায় সিপিএম। আর এখানেই প্রশ্ন, কীভাবে কোনও কিছু না দেখে এভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো ছবি পোস্ট করল একটি সর্বভারতীয় দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এই ভুয়ো ছবি প্রচারের আদৌ কি দরকার ছিল? তৃণমূলের দাবি, আসলে জনবিচ্ছিন্ন সিপিএম এখন যে কোনও প্রকারে খবরে ভেসে থাকতে চাইছে। আর সেই মোহ থেকেই আসল-নকল বিচার করতে পারছে না। আর তাই কখনও নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করতে কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে, আবার কখনও বিজেপির সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে। তাই আলিমুদ্দিনের অন্দরেও ঢুকে পড়েছে অমিত মালব্য নামক নতুন অসুখ। আর সেটাকে সম্বল করেই ভেসে থাকতে চাইছেন সুজন-সেলিমরা!!!