Wednesday, December 3, 2025

রবিবারই কেন? সাপ্তাহিক ছুটির ১৩৩ বর্ষপূর্তিতে বিশেষ প্রতিবেদন

Date:

Share post:

সালটা ১৮৯০। ক্যালেন্ডারে হিসেবে আজকের দিনটি ছিল রবিবার। সময়টা ছিল ব্রিটিশ রাজ। আর এই দিনে ভারতে সাফল্যের মুখ দেখেছিল এক শ্রমিক আন্দোলন। মঞ্জুর হয়েছিল ৬ দিন কাজের পর একদিন সাপ্তাহিক ছুটি। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবে রবিবার দিনটিকেই ভারতে গণ্য করা হয়। জেনে নেওয়া যাক এই বিশেষ দিনের ইতিহাস।

ভারতে ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন কারখানা গুলিতে সপ্তাহের সাত দিনই কাজ করতে হতো ভারতীয় শ্রমিকদের। আলাদা করে থাকতো না কোনও ছুটির দিন। শুধুমাত্র ব্রিটিশ আধিকারিকায় রবিবার ছুটি নিতেন কারণ ওইদিন তারা গির্জায় প্রার্থনা করতে যেতেন। তবে শ্রমিকদের জন্য এই ধরনের কোনও নিয়ম ছিল না। লাগাতার কোনও ছুটি ছাড়া এভাবে কাজ করার জেরে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় শ্রমিকরা।

সে সময় শ্রমিকদের নেতা ছিলেন শ্রীনারায়ণ মেঘাজি লোখান্ডে। মহারাষ্ট্রের ঠাণের বাসিন্দা। ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের পথিকৃত বলা হয় তাঁকে। এই লোখান্ডে ব্রিটিশ আধিকারিকদের কাছে আবেদন জানান সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করার পর একদিন ছুটি মঞ্জুর করা হোক। রবিবার হিন্দু দেবতা ‘খান্ডোবা’র দিন। তাই শ্রমিকদের ওই দিন সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়া হোক। তবে সপ্তাহে একদিন মানে মাসে চার দিন ছুটি। সবেতন এই চার দিন ছুটিতে তীব্র আপত্তি ছিল ব্রিটিশ আধিকারিকদের। পাশাপাশি শ্রমিকদের ছুটি মানে কাজের ক্ষতি। তবে ব্রিটিশ আধিকারিকা না মানলেও নাছোড় ছিলেন ভারতীয় শ্রমিকরা। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলার পর অর্ধেক টাকার বিনিময়ে এই ছুটি মেনে নেয় ব্রিটিশরা। অবশেষে ১৮৯০ সালের ১০ জুন রবিবারকে শ্রমিকদের জন্য সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে ব্রিটিশ সরকার। সেই দিন থেকে রবিবারই ছুটির দিন ঘোষণা হয়ে যায় ভারতে।

লোখান্ডের কারণেই শ্রমিকরা রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি পান। কাজের মাঝে আধ ঘণ্টা খাওয়ার সময় এবং প্রতি মাসের ১৫ তারিখে বেতন। মজার বিষয় যেটা তা হল, ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে। ভারতে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু ব্রিটিশদের থেকে আদায় করে নেওয়া সাপ্তাহিক ছুটিটি অপরিবর্তিতই থেকে গিয়েছে। ভারত সরকারও সেই নিয়ম আর বদলায়নি। ফলে সেই থেকেই রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি হিসেবেই চলে আসছে।

তবে সব দেশে কিন্তু রবিবার দিনটিকেই ছুটি হিসেবে গণ্য করা হয় না। মূলত ইউরোপীয় দেশগুলিতে রবিবার ছুটির দিন। আর এর পেছনে রয়েছে খ্রিস্টধর্মের প্রভাব। বাইবেল মতে ৬ দিন ধরে পৃথিবী সৃষ্টি করে ঈশ্বর ষষ্ঠ দিনে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। তাই রবিবারকে বিশ্রামের দিন বলে খ্রিস্টধর্মে গণ্য করা হয়। যার ফলে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ইওরোপের দেশগুলিতে প্রথম চালু হয় রবিবারের ছুটি। মুসলিম দেশ গুলিতে মুসলিমদের পবিত্র দিন শুক্রবার ছুটি থাকে। আবার ইহুদিদের বিশেষ দিন শনিবার তাই ইজরায়েলে শনিবার ছুটি থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বুধবার ছুটি রাখার নিয়ম করেছিলেন, যেটি বর্তমানে মেনে চলা হয়।

spot_img

Related articles

জেলা সফরে বহরমপুরে মুখ্যমন্ত্রী: বুধের সভার জন্য প্রস্তুত মালদহের গাজোল

মঙ্গলবার নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক শেষেই জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী। পৌঁছে যান মুর্শিদাবাদে বহরমপুরে। বুধবার সকালে  তিনি হেলিকপ্টারে করে উড়ে...

নিভৃতে… খাদ্যহীন! যার জন্য দেশে সূ্ত্রপাত ‘নারী আন্দোলনে’র, সেই ‘মথুরা’ই দুরবস্থায় মহারাষ্ট্রে

সেই সালটা ১৯৭২। এখন ২০২৫। মাঝে পেরিয়েছে ৫৩ বছর। এর মধ্যে তাঁকে ভুলেই গিয়েছে গোটা দেশ। হঠাৎ মনে...

বুধেই ভাগ্য নির্ধারণ! বাংলাদেশে বসে ফেরার অপেক্ষায় অন্তঃসত্ত্বা সোনালি

বাংলাদেশে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। ফলে জেলমুক্তি ঘটেছে। কিন্তু নিজের দেশে, নিজের ঘরে ফেরা কবে? আজও জানেন না বীরভূমের...

প্রশাসনিক গতি ফেরাতে যাদবপুরে দুই মাসের অস্থায়ী রেজিস্ট্রার সেলিম বক্স মন্ডল

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজকর্ম দীর্ঘদিন ধরে রেজিস্ট্রার শূন্য থাকার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছিল। কর্মসমিতির বৈঠক হলেও রেজিস্ট্রার অনুপস্থিত থাকায়...