রাজভবনে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’! রাজ্যপালকে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর, অনুষ্ঠান বাতিলের আশ্বাস বোসের

বঙ্গভঙ্গের দগদগে ঘা উস্কে দিতে তৎপর হয়েছে বিজেপি। সেই সুরে সুর মিলিয়ে রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস(CV Anand Bose)। আগামী ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের কথা ঘোষণা করেছে রাজভবন(Rajbhavan)। রাজ্যপালের এহেন সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় তাঁকে ফোন করে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। প্রশ্ন করলেন, রাজ্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়া কিভাবে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্যপাল? এই ধরনের পদক্ষেপ কি তাঁর উচিত হয়েছে? ফোনের পাশাপাশি এ বিষয়ে রাজ্যপালকে চিঠিও লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। চিঠিতে সেই ফোনালাপের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলা হয়েছে, রাজ্যপাল ফোনে কথোপকথনে তাঁকে যে আশ্বাস দিয়েছেন তা সরকারিভাবে নথিভুক্ত করে রাখার জন্যই এই চিঠি।

রাজ্যপালকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আপনার সঙ্গে আজ আমার ফোনে কথা হয়েছে। আপনি স্বীকার করেছেন যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়া একতরফা কোনও একটি বিশেষ দিনকে রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস বলে ঘোষণা করা ঠিক হয়নি। “আপনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে আপনি ওই অনুষ্ঠান পালন করবেন না।” চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, ১৯৪৭ সালে একটি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ঘটনার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তৈরি হয়েছিল। যার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভিটে মাটি ছাড়া হয়। বাংলার অর্থনীতিতেও যা প্রবল ভাবে আঘাত হানে। বাংলাকে ভাগ করার পিছনে ঐতিহাসিক কারণ একটি ছিল কিন্তু তা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে বিবেচিত হয়।

পাশাপাশি রাজ্যপালকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ২০ জুন তো পরের কথা পশ্চিমবঙ্গ কোনও নির্দিষ্ট দিনে তৈরি হয়নি। বরং কুখ্যাত রাডক্লিফ অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে এই রাজ্য তৈরি হয়েছিল। স্বাধীনতার পর থেকে তাই বাংলার মানুষ কখনও পশ্চিমবঙ্গ স্থাপন দিবস পালন করেনি। বরং দেশভাগের পর যেভাবে সাম্প্রদায়িক শক্তি তাণ্ডব শুরু হয়েছিল, সে কথাই আমাদের মনে পড়ে। যা তখন রোখা যায়নি। তাই পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন কোনও রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডা হতে পারে, কিন্তু মানুষের সরকারের কখনও কর্মসূচি ছিল না।

উল্লেখ্য, রক্তাক্ত সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে কখনোই বাংলায় পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন দেখা যায়নি। বরং ধর্মীয় উস্কানিকে উস্কে দিতেই এই ইস্যু বিজেপির এজেন্ডা হিসেবে পরিচিত। এর আগে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় রাজভবনে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করতেন। সেই ধারা অব্যাহত রেখে বিজেপির দেখানো পথে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সিভি আনন্দ বোস। এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সরব হলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ফোন পেয়ে অনুষ্ঠান না করার আশ্বাস দেন রাজ্যপালও।

আরও পড়ুন- পুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়-নিষ্ক্রিয় দুধরনের অভিযোগ নিয়ে হাই কোর্টে শান্তনু ঠাকুর!

Previous articleপুলিশের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়-নিষ্ক্রিয় দুধরনের অভিযোগ নিয়ে হাই কোর্টে শান্তনু ঠাকুর!
Next articleনিয়োগ দু*র্নীতিতে ১১ অগস্ট পর্যন্ত ফের জেল হেফাজতের নির্দেশ শান্তনু-অয়ন-মানিকের