‘সুরসিক বার্নার্ড শ’, উৎপল সিনহার কলম

উৎপল সিনহা

বিশাল ভুঁড়ির অধিকারী মোটাসোটা অ্যালফ্রেড হিচকক একদিন ঠাট্টা করে বার্নার্ড শ’কে বললেন ,
‘ তোমাকে দেখলে মনে হয় ইংল্যান্ডে দুর্ভিক্ষ চলছে । ‘ জবাবে শ বললেন , ‘ আর তোমাকে দেখলে বোঝা যায় দুর্ভিক্ষের কারণটা কী ! ‘

জর্জ বার্নার্ড শ কাউকে অটোগ্রাফ দিতেন না । নিজের লেখা বইও কখনো কাউকে উপহার দিতেন না ।
তবে বিশ্বখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর ১৯২৮ সালে রয়েল সোসাইটির সভায় দেওয়া ভাষণটি শুনে মুগ্ধ হয়ে যান শ । পরদিনই কয়েকটি বই নিয়ে জগদীশচন্দ্র বসুর বাড়িতে হাজির হন তিনি । তখন বাড়িতে ছিলেন না বিজ্ঞানী । উপহারের বইগুলোতে শ লেখেন,’ জীববিজ্ঞানে পণ্ডিত এক ব্যক্তিকে জীববিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ এক ব্যক্তি উপহার দিলেন । ‘

একবার এক তরুণ সম্পাদক একটি সংকলনে বার্নার্ড শ’র একটি লেখা ছাপার অনুমতি চেয়ে চিঠি লিখলেন । চিঠিতে উল্লেখ ছিল , সম্পাদকের বয়স কম , তাই তার পক্ষে সাম্মানিক পাঠানো সম্ভব নয় । জবাবে শ লিখলেন , তরুণ সম্পাদকের বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করবেন । একদিন এইচ জি ওয়েলস-এর সঙ্গে রাস্তায় হাঁটছিলেন শ । ওয়েলস তাঁর হাতের লাঠিটা ঘোরাচ্ছিলেন , আর সেটা শ’র নাক ছুঁইছুঁই করছিল । যে কোনো সময় লাঠিটা নাকে লাগতে পারে ভেবে শ ওয়েলসকে লাঠি ঘোরানো বন্ধ করতে বললে ওয়েলস বলেন , লাঠি ঘোরানো তাঁর নাগরিক অধিকার । উত্তরে শ বলেন , ‘ মানলাম , তবে আমার নাকের ডগা যেখানে শেষ , তোমার নাগরিক অধিকার সেখান থেকে শুরু । ‘

বিশ্বখ্যাত আইরিশ নাট্যকার এবং লণ্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জর্জ বার্নার্ড শ ।
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের পর অন্যতম সেরা ইংরেজ নাট্যকার হিসেবেই তাঁর প্রসিদ্ধি । জন্ম ১৮৫৬ সালে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে এবং মৃত্যু ১৯৫০ সালে ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ড শহরে, ৯৪ বছর বয়সে । তিনি নোবেল ও অস্কার বিজয়ী । শিল্প- সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর অগাধ বৈদগ্ধের জন্য তিনি বিশ্ববন্দিত । জর্জ বার্নার্ড শ’র কথা অমৃতসমান।

তাঁর দীর্ঘ বর্ণময় জীবনকথা লিখতে হাজার পৃষ্ঠা লাগবে । তাই আপাতত আবার ফেরা যাক তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও মেধাসঞ্জাত রসিকতাগুলিতে। তাঁর সত্তর বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘ কেমন আছেন আপনি ? ‘ উত্তরে তিনি বলেন , ‘ খুব ভালোভাবে বেঁচেবর্তে আছি । কিন্তু আমাকে বিচলিত করে রেখেছে ডাক্তারেরা । তাঁরা সবসময় আমার কানের পাশে এসে পইপই করে বলতে থাকে , যদি মাংস না খাই তাহলে আমি মরে যাব । ‘

তাঁর নব্বই বছর বয়সে যখন তাঁকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল তখন তিনি বলেন , ‘ আমি খুব ভালো আছি । এখন আর আমাকে কেউ বিচলিত করে না । মাংস না খেলে আমি মরে যাব বলে যে ডাক্তারেরা আমাকে ভয় দেখাতেন , তাঁরা সবাই মরে গেছেন । ‘ শ বলেন , আমি ডিনামাইট তৈরির জন্য আলফ্রেড নোবেলকে ক্ষমা করতে পারি , কিন্তু নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তনকারীকে ক্ষমা করতে পারি না , কারণ একমাত্র মানুষরূপী শয়তানই এই পুরস্কার প্রবর্তন করতে পারে । সুইডিশ রসায়ন বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইট আবিষ্কারের পর ‘ মৃত্যুর সওদাগর ‘ হিসেবে নিন্দিত হয়েছিলেন ।

লেখক আর্নল্ড বেনেট একদিন বার্নার্ড শ’কে জিজ্ঞেস করলেন , ‘ আপনি ফুল ভালোবাসেন , অথচ আপনার বাড়ির ফুলদানিতে ফুল রাখেন না কেন ? ‘ শ বললেন , ‘ প্রিয় হলেই কি সেটা বাড়িতে এনে রাখতে হবে ? শিশুরাও তো আমার প্রিয় । তাই বলে ওদের ধরে এনে বাড়িতে সাজিয়ে রাখলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে ? ‘ যেদিন বাজারে পচা ডিম খুব বিক্রি হবে সেদিন ভুলেও বক্তৃতা দিতে যেও না ; একথা কি বার্নার্ড শ বলেছিলেন ? কে জানে ! ‘ Beware of the man whose god is in the skies’ , জর্জ বার্নার্ড শ’র বিখ্যাত ‘ Man and Superman ‘ নাটকের সংলাপ ।

এক বৃটিশ সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন , ‘ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলে চাকরি পাবেন কোথায় ? ‘
উত্তরে শ বলেন , ‘ কেরানী যারা হতে চায় , তারা পড়বে , আমি চাই জীবনকে আবিষ্কার করতে । ‘
এক ইংরেজ একদিন শ’কে হেয় করার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন , ‘ মিস্টার শ , আপনার বাবা তো দর্জি ছিলেন , তাহলে আপনি কেন দর্জি হলেন না ? ‘

মোক্ষম জবাব দিলেন বার্নার্ড শ । বললেন , ‘ আপনার বাবা তো শুনেছি ভদ্রলোক ছিলেন , তাহলে আপনি তাঁর মতো হলেন না কেন ? ‘

আরও পড়ুন- আজ মোহনবাগান দিবস, সুনীলের হাত দিয়ে প্রকাশিত সুব্রতর আত্মজীবনী

Previous articleসুভাষগ্রামের প্লাস্টিক কারখানায় বি.ধ্বংসী আ.গুন, ঘটনাস্থলে দমকলের ১০টি ইঞ্জিন
Next articleএখনও সং.কটজনক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, ইনভেসিভ ভেন্টিনেশনেই চলছে চিকিৎসা